কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজার শহরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত ও সমালোচিত নাম ছাত্রলীগ নেতা লুৎফুর রহমান। এক সময় শহরের নানা কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তারকারী এই নেতা বর্তমানে অবস্থান করছেন সৌদি আরবে। যদিও তিনি বিদেশে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে, তবে তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি সেখান থেকেও চালিয়ে যাচ্ছেন তার রাজনৈতিক প্রভাব ও কর্মকাণ্ড।
জুলাইয়ের ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ
জুলাই মাসে কক্সবাজার শহরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে সংঘটিত হয় এক উত্তপ্ত সংঘর্ষ। স্থানীয় ছাত্রদের দাবি, এই সংঘর্ষে লুৎফুর রহমান সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই অস্ত্র হাতে ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর চেষ্টা করেন।
এই ঘটনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগপত্র প্রস্তুত করতে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা।
বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ
লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। শহরের একাধিক ঠিকাদারি প্রকল্প, উন্নয়ন কাজ ও পৌরসভার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা যায়। একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তার হুমকি ও প্রভাবের কারণে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও সন্ত্রাসের রাজত্ব
স্থানীয় সূত্র ও গোয়েন্দা তদন্ত অনুযায়ী, লুৎফুর রহমানের হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে তিনি দলীয় বিরোধীদের শাসন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০২৪ সালের শেষভাগে শহরের কয়েকটি এলাকায় ধারাবাহিক সহিংসতায় তার প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে।
আরও পড়ুনঃ ধনবাড়ী উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত
সৌদি আরবে আত্মগোপন ও বিদেশ থেকে প্রভাব বিস্তার
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এতসব অভিযোগ এবং প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও লুৎফুর রহমান দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, তার পাসপোর্ট ও ভিসার নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি কীভাবে দেশের বাইরে গিয়ে এখনও রাজনৈতিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন?
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তিনি নিয়মিত অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে তার অনুসারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং কক্সবাজারের ছাত্র রাজনীতিতে এখনো পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন।
আইনের ফাঁকফোকর আর প্রশাসনের নীরবতা
প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকাও। এত অভিযোগ, তদন্ত ও সংবাদ প্রকাশ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সমাজের একাংশ মনে করছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়া তাকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করছে।