ডঃ এম, জি, মস্তফা মুসাঃ
এই আয়াতের মর্মার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীর ভাবনার দাবিদার। আসুন, প্রথমে আমরা কুরআনের আয়াতের সারাংশ বুঝে নিই, তারপর তা এই দুই নেতার (ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) কর্মকাণ্ডের সাথে তুলনা করি।
কুরআনের আয়াত (সূরা আল-বাকারা, ২:১১-১২): “আর যখন তাদের বলা হয়, ‘তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না’, তখন তারা বলে, ‘আমরা তো শুধু সংশোধনকারী।’ শুনে রাখো! তারাই তো প্রকৃত অর্থে বিপর্যয়কারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।”
এই আয়াতে আল্লাহ এমন এক শ্রেণির মানুষকে চিত্রিত করেছেন যারা নিজেদেরকে সংশোধনকারী বা শান্তির দূত বলে দাবি করে, কিন্তু বাস্তবে তারা ফিতনা, বিশৃঙ্খলা এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
এই আয়াতের সাথে দুই নেতার (ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু) কর্মকাণ্ডের মিল:
১. শান্তির কথা বলা, বাস্তবে যুদ্ধ-সংঘাত উস্কানো:
ট্রাম্প প্রশাসন “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি” আনার নামে তথাকথিত “Deal of the Century” প্রচার করে, যা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসরায়েলকে একতরফাভাবে সুবিধা দেয়।
নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব, অবরোধ এবং সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে এসেছেন, কিন্তু সবসময় তার ভাষ্য থাকে “ইসরায়েলের আত্মরক্ষা”।
২. বিপর্যয়কে উন্নয়ন বা নিরাপত্তার নামে উপস্থাপন: পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপন, গাজায় বোমাবর্ষণকে নেতানিয়াহু “সন্ত্রাস দমন” বলে চালান।
ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও, তা “ঐতিহাসিক শান্তির পদক্ষেপ” বলে উপস্থাপন করেন।
৩. বিশ্বমঞ্চে ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠা: তারা নিজেদেরকে “ডেমোক্রেসির রক্ষক” বলে প্রচার করেন, অথচ একপাক্ষিক ও দমনমূলক নীতির মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন।
আরও পড়ুনঃ *সুখ-দুঃখের ছায়াপথে: প্রত্যাশা,* *প্রাপ্তি ও মানসিক শান্তির দর্শন*
৪. উপসংহার ও মিল: (ক). আয়াতে যেমন বলা হয়েছে, “তারা বলে, আমরা তো সংশোধনকারী”—এই নেতারাও ঠিক একইভাবে নিজেদের কর্মকে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করতে চান।
(খ). কিন্তু বাস্তবে তাদের নীতির ফলশ্রুতিতে ফিলিস্তিনে হাজারো শিশু নিহত, ঘরবাড়ি ধ্বংস, জাতিসংঘের মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্বে অস্থিরতা বেড়েছে।
(গ). সুতরাং, এই কুরআনিক আয়াত তাদের কর্মকাণ্ডের সাথে বিস্ময়করভাবে মিলে যায়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এরা সত্যিকার অর্থে ফাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টিকারী, যদিও নিজেরা নিজেদেরকে সংশোধনকারী মনে করে।
৫. কুরআনের দৃষ্টিতে আমাদের করণীয়: আমরা যেন “সংশোধনকারী” নামে ফাসাদকারীদের চিনতে পারি, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝে ন্যায় ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নিতে পারি।
আল্লাহ বলেন: “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে গুলিয়ে ফেলো না এবং জেনে-বুঝে সত্য গোপন করো না”। (সূরা আল-বাকারা, ২:৪২)!
(মূসা: ২৪-০৬-২৫)