বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনমঃ
ফুলে যেমন মধু ও বিষ, রাজনীতিতেও তাই-হালিম রাজ বগুড়া শহরের দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য সহ ৫ শীর্ষ মাদক কারবারী আটক জনগণও যেনতেন নির্বাচন করতে দিবে না : জেএসএফ বাংলাদেশ টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যুতে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ইউএসএ এর শোক প্রকাশ প্রতিটি দুর্নীতির বিচার করা হবে! সকলের আমলনামা আছে। প্রতিটি অন‍্যায়ের জন‍্য আপনারা দায়ী।গণঅভ্যুত্থান আপনাদের জন‍্য হয়নি চট্টগ্রামের সিআরবি’র ঐতিহাসিক হাতির বাংলো! অনেকেরই অজানা আগামীর বাংলাদেশ হবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বাংলাদেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া তুষারের লালমাই উপজেলার ভুশ্চি বাজারে ভুয়া ডাঃ মোছা: আছিয়া খাতুন (৪৩)- কে অর্থদণ্ড প্রদান মিশরে বাংলাদেশি যুবকের মর্মান্তিক আত্মহত্যা: ব্যবসায় ধস, দুঃসহ চাপ, বিদায়ী চিঠিতে রাজনৈতিক ক্ষোভ মুহাম্মাদ (ﷺ): মানুষ, নবী এবং রাসূল হিসেবে এক সত্তা মানবতার ফেরিওয়ালা অপু ফাউন্ডেশন এর আর্থিক সহযোগীতা প্রদান কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন ইউএসএ”রসসাতাশতম বার্ষিক চড়ুইভাতি অনুষ্ঠিত কবি এডভোকেট সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী’র ৬৫তম জন্মবার্ষিকী ১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার পাঁচবিবিতে ভিজিএফের চাল বিতরণ সরাইলে ময়না হত্যা মামলায় ইমাম ও মোয়াজ্জিম কে রিমান্ডে অতিবৃষ্টির ফলে ৫০টি পরিবার পানিবন্ধি হওয়ায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে হাজির হলেন লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিমাদ্রী খীসা দিরাইয়ে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহনে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সম্পন্ন বীরগঞ্জে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযানে দুই প্রতিষ্টানকে অর্থদন্ড কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নব গঠিত কমিটির উদ্যোগে ফল উৎসব

*ইসলামের রুকন, রাষ্ট্র ও জেহাদ:* *ওহী নির্ধারিত নীতি ও ইজতিহাদ*

ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসা
পাবলিশ: সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসা:

*ইসলামের রুকন, রাষ্ট্র ও জেহাদ:*ওহী নির্ধারিত নীতি ও ইজতিহাদ*

_ভূমিকা:_ ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত কিছু ইবাদাতলিপি বা আচার নয়, বরং এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের আত্মিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় সকল দিককে সমানভাবে আলোয় উদ্ভাসিত করে। এই জীবনব্যবস্থা এসেছে সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে, ওহীর মাধ্যমে, যা মানবজাতিকে আলোকিত করার জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বিধান।

তবে বাস্তব জীবনে ইসলামের এই পূর্ণতা ও সর্বব্যাপিতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে তা হলো, ইসলামী জীবনব্যবস্থার কোন অংশ পুরোপুরি ওহী নির্ভর, আর কোন অংশ মানুষের চিন্তা বা ইজতিহাদ অনুমোদিত? কারণ, ইসলাম যেমন নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট কিছু বিধান দিয়েছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে মানুষের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও পরিবর্তনশীল বাস্তবতার সাথে মানিয়ে চলার সুযোগও রেখেছে।

 

কাঠামোগতভাবে দ্বীন-ইসলামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা ইসলামী জীবনব্যবস্থার মূল ভিত্তি গড়ে তোলে:

_(ক). ইসলামের ভিত্তি (রুকন):_ যা সরাসরি ওহী দ্বারা নির্ধারিত এবং যেখানে কোনো মানুষের ইজতিহাদের কোন স্থান নেই।

_(খ). ইসলামী রাষ্ট্র:_ যেখানে রাষ্ট্রের মূলনীতি ও মৌলিক শাসনব্যবস্থা ওহীর দ্বারা নির্ধারিত হলেও প্রশাসনিক কাঠামো, আইন প্রণয়ন পদ্ধতি এবং রাজনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তা ও ইজতিহাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

_(গ). জেহাদ:_ জহাদ ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া, যা মূলত ওহী নির্ধারিত হলেও, বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইজতিহাদের প্রয়োজন দেখা দেয়।

এই তিনটি উপাদানকে ঘিরেই গড়ে ওঠে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো, যা একদিকে চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয় নীতিমালা, অন্যদিকে পরিবর্তনশীল মানবসমাজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাযথ নমনীয়তা দুইয়ের সমন্বয় ঘটায়।

এই প্রবন্ধে ইসলামের এই কাঠামোগত দিকগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে, যেখানে দেখানো হবে, ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে ওহীর অবিচল নীতি এবং মানুষের ইজতিহাদের সীমারেখা কোথায় এবং কতদূর পর্যন্ত। এভাবেই বোঝা সম্ভব হবে, ইসলাম কেন এবং কীভাবে প্রতিটি যুগের মানুষকে আলোকিত করতে সক্ষম হয়, যুগের চাহিদা মেনে, অথচ চিরন্তন সত্যের সীমার মধ্যে থেকেই।

ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি সবসময় একটি জটিল প্রশ্ন ছিল, কারণ তাতে ওহীর নির্ধারিত উপাদান এবং মানুষের ইজতিহাদের ভূমিকা দুটোই একসাথে কাজ করে। নিম্নে দ্বীন-ইসলামী জীবন ব্যবস্থার কাঠামোগত দিক বিশ্লেষণ করা হলো।

*কাঠামোগতভাবে দ্বীন-ইসলামের*
*তিনটি উপাদান রয়েছে:*

*১. ইসলামের ভিত্তি বা রুকন:*

(ক). ইসলামের ভিত্তি সরাসরি ওহী দ্বারা নির্ধারিত (কুরআন ও সুন্নাহ)। (হাদীসে জিবরীল)! (খ). কোনো মানুষের ইজতিহাদ বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। (গ). যেমন: ঈমান, সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি। মূল কথা, ইসলামী রুকন বা ভিত্তি বা স্তম্ভ সম্পূর্ণ ওহী নির্ভর।

*২. ইসলামী রাষ্ট্র:*

এখানেই আসে মূল প্রশ্ন – ইসলামী রাষ্ট্র কি পুরোপুরি ওহীভিত্তিক, নাকি মানুষের চিন্তাও এতে কাজ করে? ইসলামী রাষ্ট্রের দুটি উপাদান থাকে:

_২.১ ওহীর দ্বারা নির্ধারিত উপাদান:_ যেমন, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক উদ্দেশ্য, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অন্যায় দূর করা এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন। যেমন কুরআনের নির্দেশ: “যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, তারা কাফির।” (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪)! এগুলো পরিবর্তনযোগ্য নয়। এগুলো পুরোপুরি ওহী নির্ধারিত।

_২.২ মানবসৃষ্ট উপাদান (ইজতিহাদ ও প্রশাসনিক কৌশল):_ বাস্তব রাষ্ট্র চালাতে গেলে বহু বিশদ কাঠামো দরকার, যেমন: (ক). প্রশাসনিক কাঠামো (মন্ত্রণালয়, বাহিনী, কর ব্যবস্থা)। (খ). বাজেট প্রণয়ন পদ্ধতি। (গ). অর্থনীতি, ব্যাংকিং পদ্ধতি। (ঘ). নাগরিক অধিকার ও আইন। (ঙ). বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিগত ব্যবহার। (চ). আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কূটনীতি।

মানবসৃষ্ট উপাদান গুলোতে ওহী নির্দিষ্ট কোনো কাঠিন্য আরোপ করেনি। বরং ওহীর শর্ত হলো: (ক). তা যেন কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী না হয়। (খ). ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়। (গ). মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “তোমরা দুনিয়াবিষয়ে নিজেরা ভালো জানো।” (সহীহ মুসলিম)!

এখনো আমরা দেখছি, ইসলামের প্রথম চার খলিফা (রাসিদুন) শাসন ব্যবস্থা একই রকম ছিল না। উদাহরণ: (ক). আবু বকর (রা.) ছিলেন সহজ-সরল প্রশাসক। (খ). উমর (রা.) তৈরি করলেন দিওয়ান (বেতন-কাঠামো), বিচার বিভাগ, পুলিশ ব্যবস্থা। (গ). উসমান (রা.) কিছু প্রশাসনিক পদ্ধতি পরিবর্তন করলেন। (ঘ). আলী (রা.) অন্যভাবে প্রশাসন চালালেন।

অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশদ অংশে ইজতিহাদ ও মানব-সৃষ্ট পদ্ধতি বৈধ, যতক্ষণ না তা ওহীর সীমা লঙ্ঘন করে।

*৩. জেহাদ: ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া*

(ক). ওহী দ্বারা নির্ধারিত। (খ). শর্ত, নিয়ম, উদ্দেশ্য – সবই কুরআন-সুন্নাহতে নির্দিষ্ট। (গ). ইজতিহাদ কেবল প্রয়োগের ক্ষেত্রে (কখন, কীভাবে, কার বিরুদ্ধে জিহাদ)। (ঘ). মূলত ওহী নির্ভর, প্রয়োগে ইজতিহাদের অবকাশ।

*৪. উপসংহার:*

_৪.১ ইসলামী রাষ্ট্রে ওহী বনাম মানবসৃষ্ট উপাদান:_ (ক). ওহী দ্বারা নির্ধারিত অংশ।(খ). শাসন আল্লাহর বিধানে চলতে হবে। (গ). ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের মৌলিক নীতি। (ঘ). ইসলামবিরোধী কোনো আইন চলবে না।

_৪.২ মানবসৃষ্ট উপাদান (ইজতিহাদ):_ (ক). প্রশাসনিক পদ্ধতি। (খ). অর্থনীতি, প্রযুক্তি, কৌশল। (গ). আইনি পদ্ধতির বিস্তারিত রূপ।

অর্থাৎ, ইসলামী রাষ্ট্র মৌলিকভাবে ওহী ভিত্তিক, তবে বাস্তব কাঠামো ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ প্রয়োজনীয়। ইসলামী রাষ্ট্র কোনো “ক্লোন” কাঠামো নয়, বরং একেক যুগে নতুন বাস্তবতায়, ওহীর সীমার মধ্যে থেকে তৈরি হয়।

“ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি ও মূলনীতি ওহী দ্বারা নির্ধারিত, তবে রাষ্ট্রের কাঠামো, প্রশাসন ও প্রয়োগের ক্ষেত্র মানব-সৃষ্ট পদ্ধতি ও ইজতিহাদ দ্বারা পূরণ হয়, যদি তা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী না হয়।”

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ০৭-০৭-২৫)


এই বিভাগের আরও খবর