এম বাদল খন্দকার ( বিশেষ প্রতিনিধি)ঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাটির চুলার ধোঁয়া বসতঘরে আসার জেরে আপন ভাই-ভাবী-ভাজিজার হামলায় আহত হয়ে মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মনির হোসেন সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের উড়শিউড়া গ্রামের নন্দ দিঘীরপাড়ের বাসিন্দা মৃত খুরশিদ মিয়া ছেলে। মনির পেশার দিনমজুর ছিলেন। তার সাত বছর বয়সী ও দেড় বছর বয়সী দুটি ছেলে সন্তান আছে।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে বড় ভাই বাবুল মিয়ার (৫৫), স্ত্রী জুবায়দা বেগম (৪৫) মনিরের বসতঘরের দরজার সামনে একটি মাটির চুলা নিয়ে রান্না বসান। মাটির চুলার ধোঁয়া বসতঘরে প্রবেশ করলে মনির বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান। এতে বাবুলের স্ত্রী উচ্চ স্বরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেন।
মনির প্রতিবাদ করলে বাবুল মিয়ার ছেলে শাওন মিয়া (১৫) এগিয়ে এসে চাচা মনিরের সাথে খারাপ আচরন করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শাওন দা নিয়ে মনিরকে মারতে এগিয়ে আসলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। সে সময় বড় ভাই বাবুল, সাচ্চু, সাচ্চুর স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৩) ও ছেলে ইমন (২৬) ও শাওন লাঠি ও কাঠ দিয়ে মনিরকে বেধড়ক মারধর করেন।
এক পর্যায়ে তারা ইট দিয়ে মনিরের মাথায় আঘাত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন মনিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে হামলাকারীরা ফুসলিয়ে মনিরকে সরকারি হাসপাতাল থেকে শহরের বেসরকারি সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাতটার দিকে মনিরের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনুর রশিদ বলেন, সাতটার দিকে ইসিজি পরীক্ষায় কোনো স্পন্দন না পাওয়ায় ওই রোগীকে মৃত ঘোষণা করি। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম. রকীব উর রাজা ওই বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছেন।
নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, বসতঘরের সামনে মাটির চুলা এনে রান্না শুরু করেন বাবুল ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বকবক করছিল। আমার স্বামী পাল্টা কথা বলেন। এতে ভাতিজা শাওন দা নিয়ে আমার স্বামীকে মারতে এগিয়ে আসে। স্বামীর বড় ভাই বাবুল ছেলেরে বলেছে ওরে ধর বেশি করে বাইরা। তখন বাকিরা লাঠি, কাট ও ইট দিয়ে মারধর করে। শাওন আগেও স্বামীকে মারতে এসেছিল।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ১ হাজার ২৫ কোটি টাকার ৩৪৩টি বাড়ি জব্দ: দুদক চেয়ারম্যান
নিহতের শ্বশুর দুলাল মিয়া বলেন, মনিরের লাশ তারা জোর করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি লাশ ধরে রাখায় তারা নিতে পারেনি। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। তিনি মনিরের মৃত্যুর জন্য বেসরকারি হাসপাতালের যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়াকেও দায়ী করেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার সেকেন্ড অফিসার জিয়া উদ্দিন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।