বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:২২ অপরাহ্ন
শিরোনমঃ
অতিবৃষ্টির ফলে ৫০টি পরিবার পানিবন্ধি হওয়ায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে হাজির হলেন লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিমাদ্রী খীসা দিরাইয়ে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহনে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সম্পন্ন বীরগঞ্জে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযানে দুই প্রতিষ্টানকে অর্থদন্ড কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নব গঠিত কমিটির উদ্যোগে ফল উৎসব পানছড়িতে লোগাং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত আদালতের ২০০৮ সালের রায়কে পুঁজি করে ১৭ বছর ধরে পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন, রূপপুর প্রকল্প, হার্ডিং ও লালন শাহ সেতু চরম ঝুঁকিতে বিমূঢ় দুটি মুখ “ —- হিলারী হিটলার আভী মায়ের হাসি- সাঈদুর রহমান লিটন যুদ্ধ তোমাকে কি দিবে- জাহাঙ্গীর চৌধুরী সন্ধ্যারেখা – নবাব শাহজাদা বর্ষার অলিখিত প্রেম- আসাদুজ্জামান খান মুকুল গজারিয়ায় অবৈধ চুনা কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের লক্ষ্মীপুরে ফার্মেসীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান মধুপুরে বৃক্ষমেলা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২দিনে  ৮০হাজার অবৈধ গাছ ধংস  ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েকে বাঁচাতে পঙ্গু বাবার আর্তনাদ. খাগড়াছড়ি পাজেপ এর সদস্য থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে শেফালিকা ত্রিপুরা কুমিল্লায় বুড়িচং মোকাম বড় বাড়ীর রাস্তা বন্ধ করে জনচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে মহালছড়িতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব কর্তৃক দুর্গাপুর উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি ঘোষণা ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন জলাবদ্ধতা নিরাসনে সরজমিনে পরিদর্শন করেন

রক্ত যার, উৎসব তার নয়- লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

রক্ত যার, উৎসব তার নয়-

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

যখন দেশের আকাশে যুদ্ধের গন্ধ ভাসে, রাজপথে নামে মিছিল, রাস্তায় জ্বলে আগুন—তখন রাজনীতিকেরা ব্যস্ত থাকে কৌশল তৈরিতে, ব্যারিকেডের পেছনে দাঁড়িয়ে দেয় নির্দেশ, বুলেট ঠেকায় না। ধনিকরা তখন তোষণের ছায়ায় থাকে, নিরব নিরাপত্তা ঘেরা দালানে বসে পাঠায় কিছু খাদ্যদ্রব্য, কিছু টাকার চেক। আর যারা অস্ত্র হাতে নেয়, বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় বন্দুকের মুখোমুখি—তারা সাধারণ, তারা গরিব, তারা চাষার ছেলে, ঠেলাগাড়ি চালানোর ছেলেটা, কিংবা সেই বৃদ্ধা যার কাঁধে একমাত্র সন্তানের স্মৃতি ঝুলে আছে।

দেশের সব বিপ্লব, সব যুদ্ধ, সব সংকটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এই মানুষগুলো। তারা জানে না রাষ্ট্রবিজ্ঞান, জানে না কূটনীতি, শুধু জানে—বাঁচার একটাই পথ, রুখে দাঁড়ানো। তাদের শরীরেই ঝরে রক্ত, তাদের হাতেই গড়ে ওঠে স্বাধীনতা, তাদের কাঁধেই চলে শহীদের কফিন। তবু ইতিহাসে তারা থাকে না।

যুদ্ধ শেষ হলে মঞ্চে ওঠেন নেতারা। মুখে রাজনীতির সাহসী গল্প, হাতে ক্ষমতার পতাকা, পেছনে দেশপ্রেমের হ্যাশট্যাগ। তারা বলে, “আমরা স্বাধীনতা এনেছি।”

আরও পড়ুনঃ কলসী ভরা গুপ্তধন ( একটি রূপকথার গল্প )

ব্যবসায়ী আসে নতুন বাণিজ্যের ছকে, যেখানে প্রতিটি রক্তের দাগকে রূপান্তর করে মুনাফায়। স্বাধীনতা হয়ে ওঠে তাদের জন্য উৎসব, বিজয়ের ফানুস উড়ে রাজধানীর আকাশে।

এদিকে গরিবেরা? তারা তখন হাসপাতাল খোঁজে, খোঁজে একটা ছবি—যেখানে হয়তো ছেলের মুখ আছে, অথবা মেয়ের পরিচয়পত্র। তাদের ঘরে ঢোকে না জাতীয় পতাকা, ঢোকে ক্ষুধা আর নিখোঁজের ভয়।
তারা যুদ্ধ দিয়েছিল, আজও যুদ্ধে আছে—জীবন যুদ্ধ, বেঁচে থাকার যুদ্ধে। স্বাধীনতার পরে তাদের হিস্যা শুধু স্মৃতির ভার আর রাষ্ট্রের ভ্রান্ত প্রতিশ্রুতি।

ইতিহাস বারবার একই দৃশ্য মঞ্চস্থ করে। পলাশীর প্রান্তর থেকে ৭১, কিংবা ২০২৪—সবখানেই পর্দার আড়ালে থাকে এক মহাবঞ্চনা। যুদ্ধ আর রক্ত গরিব দেয়,স্বাধীনতা আর সরকার ধনীরা নেয়।

২০২৪ সালে আবারো প্রমাণ হলো—রাজনীতি বদলায়, মুখ বদলায়, প্রতিশ্রুতি বদলায়, কিন্তু ভাগ্য বদলায় না সেই ছেলেটার, যার নাম কোনো শহীদ মিনারে লেখা থাকে না, কেবল মায়ের কাঁধে থাকে ছবি হয়ে। পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন আসে, মানুষ ভোট দেয়, কিন্তু কিছুই বদলায় না। বাড়ে কেবল পণ্যের দাম, বিদ্যুতের বিল, আর নেতা-নেত্রীর গাড়ির বহর। দেশের মাটি সোনা ফলায় না, ফোটায় ঘাম, রক্ত, আর দীর্ঘশ্বাস।

আরও পড়ুনঃ কুড়িগ্রামে শিশু ও যুবদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নে; আমার জীবন আমার স্বপ্ন বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

তবু তারা ভালোবাসে দেশ। সেই ভালোবাসা কখনো পতাকার রঙে, কখনো সন্তানের নামে রাখা স্কুলে, কখনো কবরের পাশে ফেলে আসা গোলাপফুলে।
তারা যুদ্ধ চায় না, তবু যুদ্ধ বাধলে সবার আগে ছুটে আসে, কারণ তারা জানে—দেশ না থাকলে ঘর থাকে না। কিন্তু ঘর থাকলেও, তাদের জন্য দেশ থাকে না।

স্বাধীনতা তাদের অধিকার নয়, বরং তাদের সান্ত্বনা। বিজয় দিবস মানে তাদের কাছে একটি ফুল, যেটা তারা রেখে আসে কবরের গায়ে, আর একটি দীর্ঘশ্বাস, যেটা চলে যায় আকাশে।
রাজনীতি তাদের দেখে না, রাষ্ট্র তাদের ডাকে না, মিডিয়া তাদের চেনে না। তারা আছে শুধু গণনার বাইরে, সংবেদনশীলতার সীমানার ঠিক ওপারে।

তবু ইতিহাস যদি একদিন চোখ খোলে, যদি সত্যিই একদিন নতুন পৃষ্ঠা লেখা হয়— তাহলে সেই পৃষ্ঠায় থাকবে না কোনো প্রেসিডেন্টের নাম, কোনো সাইনবোর্ডধারী নেতার মুখ, কোনো মুনাফা করা শিল্পপতির পদবি। সেই পৃষ্ঠায় লেখা থাকবে—
“রক্ত দিয়ে যারা স্বাধীনতা কিনেছিল, উৎসব তাদের ছিল না।”

লেখক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর


এই বিভাগের আরও খবর