হারুন ভুঁইয়াঃ
মাযহাব হলো ইসলামী শরিয়াহর একটি পথ বা নির্দেশনা, যা কুরআন, হাদিস, ইজমা এবং কিয়াসের আলোকে প্রতিষ্ঠিত। সুন্নি মুসলিমদের চারটি মাযহাব—হানাফি, মালিকি, শাফিঈ এবং হাম্বলি—চারজন মহান ইমাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোত্তমভাবে অনুসরণ করেছেন।
তবে, ভিন্ন ভিন্ন হাদিসের প্রতি গুরুত্ব, জ্ঞানের পার্থক্য এবং হাদিসের প্রাপ্যতার সীমাবদ্ধতার কারণে এই চারটি মাযহাব গড়ে উঠেছে। ইমাম আবু হানিফা প্রথম মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু এটি মুসলিম সমাজে বিভেদ সৃষ্টির কারণ হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই বিভেদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ সিলেটের যুগলটিলা ইসকন মন্দিরে ইসকন আয়োজিত রথযাত্রা অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা
তিনি বলেন: إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ (সূরা আনআম, ৬:১৫৯)। বাংলা অর্থ: নিশ্চয়ই যারা তাদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং দল-উপদলে বিভাজিত হয়েছে, তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর কাছেই বিচার হবে, অতঃপর তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন তারা কী করছিল।
এই আয়াত স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সম্পর্ক নেই, এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। তিনি আরও বলেন: وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا (সূরা আল-ইমরান, ৩:১০৩)। বাংলা অর্থ: তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না। এই আয়াত ঐক্যের গুরুত্ব এবং বিভেদের ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা তুলে ধরে।
ইমাম আবু হানিফার মাযহাবের পর ইমাম মালিক মালيكি মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেন, সম্ভবত হানাফি মাযহাবের কিছু ঘাটতি পূরণের উদ্দেশ্যে। ইমাম শাফিঈ মালিকি মাযহাবের পরিমার্জিত রূপ হিসেবে শাফিঈ মাযহাব গড়ে তোলেন, যা আরও পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা প্রদান করে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, যিনি ইমাম শাফিঈ এবং ইমাম আবু হানিফার শিষ্য আবু ইউসুফের ছাত্র ছিলেন, বিপুল সংখ্যক হাদিস অধ্যয়ন করে তিনটি মাযহাবের সর্বোত্তম দিকগুলো নিয়ে হাম্বলি মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি শরিয়াহ এবং মারেফাতের মধ্যে একটি অনন্য সমন্বয় সাধন করেছেন, যা অন্য মাযহাবে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পেয়েছে। আমার অভিজ্ঞতায়, আল্লাহর অশেষ কৃপায়, আমি বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুয়াত্তা এবং মুসনাদের মতো হাদিস গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছি।
এই অধ্যয়নের আলোকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, হাম্বলি মাযহাব সর্বশ্রেষ্ঠ, কারণ এটি হাদিসের প্রতি গভীর নিষ্ঠা এবং শরিয়াহ ও মারেফাতের সমন্বয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে সবচেয়ে নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করে।
তবে, আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, কোনো মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই; কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ সরাসরি অনুসরণ করাই সর্বোত্তম। আমি লক্ষ্য করেছি, মাযহাব না মানলেও আমার অনুসরণ হাম্বলি মাযহাবের কাছাকাছি হয়, যা এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।
আমি পূর্বে হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলাম, কিন্তু এর মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা ও ঘাটতি লক্ষ্য করায় তা পরিত্যাগ করেছি। কুরআন ও হাদিসের গভীর অধ্যয়নের পর আমার মনে হয়, মাযহাব সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল না, কারণ এটি মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের পরিপন্থী।
শিয়া-সুন্নি বা অন্য কোনো বিভেদের পরিবর্তে সকল মুসলিমের ঐক্যবদ্ধভাবে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করা উচিত। যারা মাযহাবের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন, তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সরাসরি অনুসরণ করবেন।
আর যারা তা পারেন না, তাদের জন্য হাম্বলি মাযহাব অনুসরণ করা সবচেয়ে নিরাপদ ও সঠিক পথ, কারণ এটি সুন্নাহর সাথে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর।