শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

*কুরআনে “খলিফা”: আধুনিক রাষ্ট্রনীতি, পরিবেশনীতি ও মানবাধিকার প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ*

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ / ২৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ

*কুরআনে “খলিফা”: আধুনিক রাষ্ট্রনীতি, পরিবেশনীতি ও মানবাধিকার প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ*

*১. ভূমিকা:* “খলিফা” (*خليفة*) শব্দটি ইসলামী আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই একে “আল্লাহর প্রতিনিধি” মনে করেন, তবে কুরআনের বিশ্লেষণ দেখায়, এর প্রকৃত অর্থ হলো “স্থলাভিষিক্ত”, “উত্তরাধিকারী” বা “প্রতিস্থাপনকারী”। অর্থাৎ, মানুষ পৃথিবীতে আগের সৃষ্টির স্থানে এসেছে এবং এ পৃথিবীর তত্ত্বাবধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

এই প্রবন্ধে আমরা দেখব— কুরআনের এই “খলিফা” ধারণা আধুনিক রাষ্ট্রনীতি, পরিবেশনীতি এবং মানবাধিকারের মতো সমসাময়িক ক্ষেত্রগুলোর সাথে কত গভীরভাবে যুক্ত।

আরও পড়ুনঃ *মারিয়াম (আ.)-এর অলৌকিক সন্তান-জন্ম: এক মহান হিকমাহ ও আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ*

*২. প্রতিনিধি এবং স্থলাভিষিক্ত শব্দের সারমর্ম:* কুরআনে “খলিফা” শব্দের অর্থ নির্ধারণে দুটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ— “প্রতিনিধি” (Representative) এবং “স্থলাভিষিক্ত”; (Successor/Steward)।

_“প্রতিনিধি”_ মানে হলো, কেউ অন্যের পক্ষ থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে বা তাঁর ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে। অর্থাৎ, মূল সত্তার সাথে সরাসরি কর্তৃত্বের সম্পর্ক থাকে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে, “আল্লাহর প্রতিনিধি” বললে বোঝায়, সেই ব্যক্তি যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয় বা আল্লাহর ক্ষমতা ধারণ করে— যা ইসলামি বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অন্যদিকে, _“স্থলাভিষিক্ত”_ মানে হলো, কেউ পূর্ববর্তী সৃষ্টির পর পৃথিবীর দায়িত্ব নেয়, কিন্তু আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করে না। স্থলাভিষিক্ত হওয়া মানে হলো তত্ত্বাবধান করা, পরীক্ষা দেওয়া, এবং স্রষ্টার নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে কাজ করা। এটি দায়িত্ব ও জবাবদিহির ধারণা প্রকাশ করে, ক্ষমতা নয়।

তাই, কুরআন যখন মানুষকে “খলিফা” বলে, তখন তা বোঝায় স্থলাভিষিক্ত বা উত্তরাধিকারী, প্রতিনিধি নয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই “খলিফা” শব্দটি আধুনিক রাষ্ট্রনীতি, পরিবেশনীতি এবং মানবাধিকারের আলোকে বিশ্লেষণ করা জরুরি।

*৩. খলিফা ও আধুনিক রাষ্ট্রনীতি:* রাষ্ট্র পরিচালনা মানে শুধু শাসন নয়, বরং মানুষের অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার, এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা। কুরআনে দাউদ (আ.)-কে বলা হয়েছে: “হে দাউদ, নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা করেছি। সুতরাং তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে বিচার কর…” (সুরা সাদ ৩৮:২৬)! এটি আধুনিক রাষ্ট্রনীতির মূল শিক্ষা:

আরও পড়ুনঃ খাগড়াছড়িতে স্বেচ্ছাসেবকদলের উদ্যেগে বিক্ষোভ মিছিল

(ক). আইনের শাসন (Rule of Law): শাসক বা নেতা নিজে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

(খ). জবাবদিহিতা (Accountability): জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকা।

(গ). ন্যায়বিচার (Justice): পক্ষপাতহীন এবং সুষ্ঠু বিচার।

(ঘ). সুশাসন (Good Governance): শোষণ নয়, বরং সেবামূলক শাসন।

খলিফার অর্থ, মানুষ শাসন করবে, কিন্তু নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং আল্লাহর ন্যায়-নীতি অনুসারে।

*৪. খলিফা ও পরিবেশনীতি:* কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে মানুষকে “খলীফা” করা হয়েছে পৃথিবীতে। এর মানে হলো, মানুষ শুধু শাসন করবে না, বরং পৃথিবী রক্ষা করবে। যেমন সূরা আন’আম ৬:১৬৫-এ বলা হয়েছে: “আর তিনিই তোমাদেরকে যমীনের খলীফা করেছেন…”! এর শিক্ষা:

(ক). পরিবেশের সংরক্ষণ (Environmental Stewardship): গাছ, পানি, মাটি, প্রাণী—সবকিছু রক্ষার দায়িত্ব মানুষের।

(খ). সম্পদের সুষম ব্যবহার (Sustainable Resource Use): অতি-ভোগ নয়, বরং সংযম।

(গ). পরিবেশ নষ্ট না করা (Avoiding Corruption on Earth): দূষণ, বন নিধন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ইসলাম অনুমোদন করে না।

আধুনিক পরিবেশনীতি ঠিক এই দায়িত্বের কথা বলে। মানুষ খলিফা হিসেবে প্রকৃতির উপর প্রভু নয়, বরং রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক।

*৫. খলিফা ও মানবাধিকার:* কুরআন মানুষকে খলিফা বলেছে, মানে একে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। সূরা আন’আম ৬:১৬৫-এ বলা হয়েছে: “…আর তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন…”! এর শিক্ষা হলো:

(ক). সমতা (Equality): সবার মর্যাদা সমান। বংশ, জাত, ভাষা, ধর্মে কোনো বৈষম্য নেই।

(খ). অধিকার (Rights): জীবন, সম্মান, মতপ্রকাশ, ধর্মাচার সব মানুষের অধিকার।

(গ). দায়িত্ব (Duties): অধিকার ভোগের সাথে দায়িত্বও পালন করতে হবে।

(ঘ). পরস্পর সহযোগিতা (Solidarity): দুর্বলদের সাহায্য করা।

আরও পড়ুনঃ মানিকছড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ জব্দ

এই শিক্ষার সাথে আধুনিক মানবাধিকার সনদগুলোর বিস্ময়করভাবে মিলে যায়। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে খলিফা মানে, মানুষ অন্য মানুষের অধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল।

*৬. খলিফা: “আল্লাহর প্রতিনিধি” নয়* বহু মানুষ মনে করে “খলিফা” মানে “আল্লাহর প্রতিনিধি” (Vicegerent of Allaah)। কিন্তু কুরআন স্পষ্ট করে দিয়েছে, মানুষ স্থলাভিষিক্ত বা উত্তরাধিকারী: “আর যদি আমি চাইতাম, তবে আমি তোমাদের পরিবর্তে ফেরেশতা সৃষ্টি করে পাঠাতাম যারা যমীনে তোমাদের উত্তরাধিকার (প্রতিস্থাপিত) হত।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৬০)!

মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি নয়। আল্লাহর ক্ষমতা, জ্ঞান, অথবা গুণাবলী মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয় না। বরং মানুষ:(ক). স্বাধীন, কিন্তু সীমিত। (খ). দায়িত্বশীল, কিন্তু সর্বশক্তিমান নয়। (গ). শাসক, কিন্তু জবাবদিহির বাইরে নয়।

*৭. উপসংহার:* “খলিফা” কুরআনের এক অসাধারণ শব্দ। এটি মানুষকে মর্যাদা ও দায়িত্ব দুই-ই দিয়েছে। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি নয়, বরং স্থলাভিষিক্ত। তাকে শাসন করতে হবে ন্যায়, মানবিকতা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে।

আধুনিক রাষ্ট্রনীতি, পরিবেশনীতি, এবং মানবাধিকারের আলোকে “খলিফা” ধারণা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এটি শেখায়— ক্ষমতা নয়, দায়িত্বই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ১৪-০৭-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category