শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনমঃ
নেত্রকোনা জেলা জজ কোর্টে আইন ছাত্র ফোরাম পরিচিতি সবা অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে বিটিভির নতুন কুঁড়ি-২০২৫ প্রচার কৌশল সভা অনুষ্ঠিত গাবতলীতে সাংবাদিকদের সাথে জামায়াত এমপি প্রার্থী গোলাম রব্বানীর মতবিনিময় নোয়াখালী বিএনপির আহবায়ক আলো ও সদস্য সচিব আজাদ এর বিরুদ্ধে মিছিল সেনবাগে বিএনপির বিজয় মিছিলে হামলা, যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ৩১ দফা বিতরণ করতে রৌমারীতে রাজিবপুর উপজেলার বি এন পির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ মোখলেসুর রহমান বদলগাছীতে সরকারি রাস্তার প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী মনের আশা পূরণ করি- এম এ রউফ ২১ হাজার টাকার ফেনসিডিল ও মোটর সাইকেলসহ আটক ১ বদলগাছী বিনিময় সম্পত্তি জবরদখলের হুমকি অভিযোগ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ! চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোলাম জাকারিয়ার গণসংযোগ কার্যক্রমে লিফলেট বিতরণ নাসিরনগরে ব্রীজ নয়,যেন মরণ ফাঁদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম ফিলাপ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঝিনাইদহ কলেজ শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উদোগে ঈদে মিলাদুন নবী উদযাপন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সকল প্রার্থীদের তালিকা  এনওয়াইপিডির ডেপুটি ইন্সপেক্টর পদোন্নতিতে কারাম চৌধুরীকে সংবর্ধনা জানিয়েছে “জীবন” গোমস্তাপুরে ফেক আইডি ও তার অনুসারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় সাংবাদিকের নামে মিথ্যা এজাহার মনিরুলের শাস্তির দাবি সাংবাদিক সমাজের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো কর্তব্যনিষ্ঠা, জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা, আল্লাহভীরুতা ও সততা বজায় রাখা, পরিশ্রমী ও কর্মঠ হওয়া, রাজবাড়ীতে পুলিশের ওপর হামলা: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৫ সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কুয়াকাটা ভ্রমণে মান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা!

আসছে মঙ্গলেও জীবন, ১৫ বছরের মধ্যে ‘মহাকাশ মরুদ্যান’

রিপোর্টার নাম
পাবলিশ: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
আসছে মঙ্গলেও জীবন, ১৫ বছরের মধ্যে 'মহাকাশ মরুদ্যান'

ডেস্ক রিপোর্টঃ

মঙ্গল গ্রহের রক্তিম রাঙা পৃষ্ঠে একদিন মানুষের পা পড়বে। শুধু পা নয়, থাকবে ঘরবাড়ি, গাছপালা, আর এক টুকরো পৃথিবীর পরিবেশ। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইসা তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘টেকনোলজি ২০৪০’–এ একঝলক এমনই এক ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিয়েছে।

আসছে মঙ্গলেও জীবন, ১৫ বছরের মধ্যে 'মহাকাশ মরুদ্যান'

জুলে ভার্নের বিজ্ঞান-কল্পকাহিনিকে হার মানানোর মতো শোনালেও, কিংবা ভবিষ্যতের রূপকথার তরঙ্গ তুললেও ইসার দাবি, এ দৃশ্য বাস্তব হতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ বছর! সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ২০৪০ সালের মধ্যে মহাকাশ অভিযানের একদ সাহসী রোডম্যাপ তুলে ধরেছে মহাকাশ এই সংস্থাটি।

এটি কল্পবিজ্ঞান নয়। বরং উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রযুক্তিভিত্তিক এক রূপরেখা। এ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আর মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহে গড়ে উঠবে “স্পেস ওয়েসিস” বা ‘মহাকাশ মরুদ্যান’। কাঁচে মোড়া সবুজ ঘর। তাপপ্রতিরোধী গম্বুজে মানুষের সুখ নিদ্রা। রোবট দিয়ে খোঁজখবর চালানো। আর আকাশে জুড়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃত্রিম উপগ্রহ। সব মিলিয়ে পৃথিবীর বাইরে একটি নতুন মানবসভ্যতা।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বের জ্ঞানী মানুষের তালিকায়, সেরা দুই দেশের মানুষ, এক জাপান,২ বাংলাদেশ
ইসার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে মঙ্গল, চাঁদ, এমনকি পৃথিবীর কক্ষপথেও গড়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাসযোগ্য গম্বুজ। এই স্পেস ওয়েসিস বা ‘মহাকাশ মরুদ্যান’-গুলো তৈরি হবে এমন সব উপাদানে যা মহাজাগতিক রেডিয়েশন বা বিকিরণ থেকে মানুষকে রক্ষা করবে।

এখানে উৎপাদিত হবে নিজস্ব বিদ্যুৎ। জন্মাবে শাকসবজি ও ফলমূল। পানি, চাষ, অক্সিজেন উৎপাদন সবই চলবে গম্বুজের ভেতরেই। “দি মার্শিয়ান” সিনেমার মতো। এখানে গাছপালা বড় হবে কাঁচের ছাদের নিচে। আলু, চাল, টমেটো, মাশরুম, সবই মিলবে হাতের কাছেই।

এই গম্বুজগুলোতে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় শাসিত এবং চালিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছুটে আসা মহাজাগতিক উল্কা বা গ্রহাণু বা আসন্ন মহাজাগিতক ধুলোঝড়ের সংকেত আগেভাগেই মিলবে স্পশর্ক বা সেন্সরের মাধ্যমে। ইসা বলছে, এ গম্বুজগুলো হবে একেবারে “স্বয়ংসম্পূর্ণ।” পৃথিবী থেকে বারবার কিছু আনার প্রয়োজনই পড়বে না।পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানের ব্যবস্থা থাকবে। পৃথিবী থেকে কোনও কিছুর সরবরাহের প্রয়োজন হবে না আর কখনো। বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে তৈরি হবে অক্সিজেন ও পানি।

বিশাল মহাকাশ কাঠামোতে চলবে পৃথিবী ছাড়িয়ে নির্মাণযজ্ঞ। পৃথিবীর কক্ষপথের সীমাবদ্ধ রকেট আকারে আর আটকে থাকবে না ভবিষ্যতের মহাকাশযান ও উপগ্রহ নির্মাণ। এখনকার মতো কোনও দুরবিনকে রকেটের ভিতর ভাঁজ করে তোলা নয়, বরং মঙ্গল বা চাঁদের পিঠে সরাসরি তৈরি হবে বিশাল বিশাল যন্ত্রাংশ, মহাকাশ স্টেশন, কিংবা স্পেসশিপ। রোবটিক অ্যাসেম্বলি, মানে রোবট দিয়েই এসব তৈরি হবে; ইন-সিচু ম্যানুফ্যাকচারিং, অর্থাৎ মহাকাশেই মেলে এমন সব স্থানীয় উপাদান দিয়ে বানানো হবে ভবন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এমনকি শক্তি সঞ্চয় করার যন্ত্রপাতিও।

পাশাপাশি, মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা, পুরনো উপগ্রহ, রকেটের অংশ, ধ্বংসাবশেষ এসবকেই পুনরায় ব্যবহার করে তৈরি হবে নতুন কাঠামো। ইসার ভাষায়, এটি হবে সার্কুলার স্পেস ইকোনমি। একটি চক্রাকার, পরিবেশবান্ধব মহাকাশ অর্থনীতি।

ইসার পরিকল্পনায় স্পষ্ট, ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযান নির্ভর করবে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর।

মহাকাশযান নিজেরাই পথ খুঁজে নেবে, নিজেদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, আর ভূ-পৃষ্ঠে থাকা নিয়ন্ত্রণকক্ষের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। এমনকি মহাকাশে তৈরি হবে সৌরজগতব্যাপী ইন্টারনেট। পৃথিবী থেকে মঙ্গল, শনি কিংবা চাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে দ্রুতগতির অপটিক্যাল সিগন্যাল ও অটোনোমাস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

চরম ঠান্ডার এলাকায় সৌরশক্তি কাজে না লাগলেও নিউক্লিয়ার পাওয়ার বা পারমাণবিক শক্তি এবং সলিড অক্সাইড ফুয়েল সেল-এর মতো শক্তিশালী ব্যাটারি ব্যবহার করে চালু থাকবে যন্ত্রপাতি।

আজ থেকে কয়েকশ কোটি বছর আগে মঙ্গলে ছিল বিশাল জলাশয়—সাগর ও নদী। এখনো সেই পানির চিহ্ন পাওয়া যায়। তবে জমাটবাঁধা বরফের রূপে রয়েছে সে পানি। ইসার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলের এক কেন্দ্রীয় অঞ্চল, মেডুসি ফসাই ফরমেশন-এর মাটির তলায় দুই মাইল গভীরে রয়েছে বরফে মোড়া পানিস্তর। মঙ্গলের বিষুবরেখার নিচে প্রায় ২ মাইল গভীরে জমাটবাঁধা এই পানির এক বিশাল ভাণ্ডারকে গলিয়ে ফেলতে পারলে তা দিয়ে মঙ্গলের পুরো পৃষ্টদেশ ৮.৮ ফুট গভীর পানিতে ঢেকে দেওয়া যাবে! ভবিষ্যতে এই পানি ব্যবহার করা যেতে পারে মহাকাশযাত্রীদের সুপেয় পানি এবং কৃষিকাজের উৎস হিসাবে। যদিও এর জন্য প্রয়োজন বিশাল মাপের খনন ও তাপ উৎপাদনের ব্যবস্থা।

যতই প্রযুক্তি এগিয়ে যাক, মানুষের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ। ইসা বলছে, দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশবাসের জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা, কগনিটিভ সাপোর্ট, অর্থাৎ মানসিক সহায়তা, এবং বাসযোগ্য জীববৈজ্ঞানিক নকশা।মহাকাশে একঘেয়েমি, বিচ্ছিন্নতা আর স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে ব্যবহৃত হবে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, রিয়েলটাইম হেলথ মনিটরিং আর মানসিক পুনর্বাসনের পদ্ধতি।

আজ পর্যন্ত মানুষ সবচেয়ে দূরে গিয়েছিল অ্যাপোলো ১৩-এর মহাকাশযাত্রায়—মাত্র ২ লাখ ৪৮ হাজার মাইল। কিন্তু মঙ্গল তার গড়ে ১৪ কোটি মাইল দূরে। সেখানেই এখন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি নতুন সভ্যতা গড়ার স্বপ্ন দেখছে। স্পেসএক্স-এর স্টারশিপ এখনও প্রস্তুত নয়, ১৮ জুন, বুধবার রাতেই একটি বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেল এক পরীক্ষা মিশন। তারপরও বিজ্ঞান থেমে নেই। ইসা শুধু মঙ্গলেই নয়, গোটা সৌরজগতে এক নতুন মানবিক উপস্থিতি গড়ার নীলনকশা তৈরির মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, মহাকাশ এখন সীমান্ত নয়, এক নতুন ভূখণ্ড। আর সেখানে মানুষের নতুন পরিচয় হবে একাধিক গ্রহের নাগরিক হিসেবে।

এই ফিচারটি যখন আপনি পড়ছেন, তখনই কোনো এক মহাকাশযান হয়তো মঙ্গলের মাটি ঘেঁষে ঘুরছে। দূরত্ব এখন আর প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং এক সম্ভাবনার নাম। ইউরোপের মহাকাশযাত্রার এই রূপরেখা কেবল বিজ্ঞানের গল্প নয়, বরং মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠারও গল্প। মহাশূন্যকে জয় করার কাহিনি। ইসার এই ভবিষ্যৎ দৃষ্টি শুধু মঙ্গলেই নয়, গোটা সৌরজগৎজুড়ে মানব সভ্যতার সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়। এটি শুধু বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রশ্ন নয়, বরং মানবজাতির টিকে থাকার কৌশলগত প্রয়োজন। যদি সবকিছু পরিকল্পনা মতো হয়, তবে ২০৪০ সাল নাগাদ আমরা হয়তো দেখতে পাব,লাল গ্রহের গম্বুজনগরীতে আলো জ্বলছে, সবুজ ফসল ফলছে, এবং রোবটিক অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে চলেছে মহাবিশ্বের নতুন রহস্য।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত


এই বিভাগের আরও খবর