শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনমঃ
বসুন্ধরা টিস্যু পেপার মিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডঃ  বগুড়ার গাবতলীতে বসতবাড়ি ভাঙচুর, নারী আহত – আদালতে মামলা মোরেলগঞ্জে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসডিএফ’র স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক স্টেকহোল্ডার কর্মশালা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা জেলা জজ কোর্টে আইন ছাত্র ফোরাম পরিচিতি সবা অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে বিটিভির নতুন কুঁড়ি-২০২৫ প্রচার কৌশল সভা অনুষ্ঠিত গাবতলীতে সাংবাদিকদের সাথে জামায়াত এমপি প্রার্থী গোলাম রব্বানীর মতবিনিময় নোয়াখালী বিএনপির আহবায়ক আলো ও সদস্য সচিব আজাদ এর বিরুদ্ধে মিছিল সেনবাগে বিএনপির বিজয় মিছিলে হামলা, যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ৩১ দফা বিতরণ করতে রৌমারীতে রাজিবপুর উপজেলার বি এন পির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ মোখলেসুর রহমান বদলগাছীতে সরকারি রাস্তার প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী মনের আশা পূরণ করি- এম এ রউফ ২১ হাজার টাকার ফেনসিডিল ও মোটর সাইকেলসহ আটক ১ বদলগাছী বিনিময় সম্পত্তি জবরদখলের হুমকি অভিযোগ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ! চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোলাম জাকারিয়ার গণসংযোগ কার্যক্রমে লিফলেট বিতরণ নাসিরনগরে ব্রীজ নয়,যেন মরণ ফাঁদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম ফিলাপ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঝিনাইদহ কলেজ শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উদোগে ঈদে মিলাদুন নবী উদযাপন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সকল প্রার্থীদের তালিকা  এনওয়াইপিডির ডেপুটি ইন্সপেক্টর পদোন্নতিতে কারাম চৌধুরীকে সংবর্ধনা জানিয়েছে “জীবন”

আল মাহমুদ, বাংলার কবিতায় কৃষকের হৃদয়, ইতিহাসের কণ্ঠস্বর

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ
পাবলিশ: শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ

১১ই জুলাই—আজ বাংলা কবিতার উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। সময়ের আবর্তে তিনি আজ কেবল একজন কবি নন, হয়ে উঠেছেন বাংলা মাটির ঘ্রাণ, বৃষ্টিভেজা ধানক্ষেতের ভাষ্যকার, আর স্বজাতির আত্মার দর্পণ।

১৯৩৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্মেছিলেন মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। জীবনের শুরুটা ছিল নদী, হাট, কৃষিকাজ ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়ানো। সেখান থেকেই উৎসারিত হয় তাঁর কবিতার ভাষা—যা নাগরিক আধুনিকতার বাইরে একেবারে গ্রামীণ, মাটি-গন্ধমাখা, অথচ আধুনিক বোধে অনুপম। এই দ্বৈততা তাঁকে বাংলা কবিতার প্রথাগত ধারা থেকে পৃথক করে তোলে, তৈরি করে নিজের স্বতন্ত্র কাব্যভুবন।

কবি হিসেবে তাঁর আবির্ভাব ঘটে ১৯৫০-এর দশকে। কিন্তু সত্যিকারের আলোচনায় আসেন “লোক লোকান্তর” (১৯৬৩) কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। এরপর “কালের কলস” (১৯৬৬), “সোনালি কাবিন” (১৯৭৩) তাঁকে পৌঁছে দেয় বাংলা কবিতার শীর্ষ চূড়ায়।

 

আরও পড়ুনঃ এক নির্লোভ সাধকের জীবন চরিত
‘সোনালি কাবিন’ তাঁর কাব্যজীবনের শ্রেষ্ঠতম সৃজন। এই গ্রন্থে কবি একসঙ্গে কৃষক, প্রেমিক ও দেশপ্রেমিক—যিনি একদিকে স্ত্রীর কাছে যৌতুক হিসেবে সোনালি ধান চান, আবার অন্যদিকে ইতিহাসের কাছে দাবি করেন জাতীয় আত্মপরিচয়।

আল মাহমুদের ভাষা ছিল মাটি ও মানুষের। তিনি বাংলা কবিতায় আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহারকে সাহসিকতার সঙ্গে এনেছেন, এবং তা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাংলা কাব্যভাষায়। তার কবিতায় যেমন পাওয়া যায় “আকাশে হেলান দিয়ে” দাঁড়িয়ে থাকা প্রেমিক পুরুষকে, তেমনি পাওয়া যায় ইতিহাসের অমোঘ নিয়তিকে চ্যালেঞ্জ জানানো এক প্রতিবাদী কণ্ঠ।

তবে তিনি কেবল কবিই ছিলেন না। একাধারে ছিলেন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। “কবির আত্মপক্ষসমর্থন”, “পানকৌড়ির রক্ত”, “ডায়লগ”, কিংবা “উপমহাদেশ” প্রভৃতি গদ্যগ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ ও তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণশক্তি।

১৯৬৮ সালে তাঁর সাহিত্যকীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে প্রদান করা হয় বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পরবর্তীতে তিনি হয়েছিলেন একজন জনমুখী, বিতর্কিত হলেও তুমুল আলোচিত সাহিত্যিক। তাঁর লেখায় কখনো আপোষ ছিল না—ছিলো নির্ভিক উচ্চারণ।

২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এই অনন্য প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু কবি চলে গেলেও রেখে গেছেন তাঁর অজস্র কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ—যেগুলো আজও আমাদের চিন্তা ও চেতনায় আলো জ্বালায়।

আজ, কবির জন্মদিনে আমরা তাঁকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। কারণ আল মাহমুদ কেবল একজন সাহিত্যিক নন, তিনি এক নিঃসঙ্গ দ্রষ্টা—যিনি কবিতার চোখ দিয়ে দেখে গেছেন আমাদের ভাঙা-গড়া ইতিহাস, হৃদয়ের গোপন কথাগুলো।

জীবনমুখী কবিতা, প্রেম ও প্রতিবাদের কাব্যিক ঐক্য, এবং আত্মপরিচয়ের জন্য নিরন্তর অনুসন্ধান—এই ছিল আল মাহমুদের সাহিত্যযাত্রা। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর কবিতা এখনো বাংলার বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়:
“আমার কবিতা যেন তোমাদেরই মুখে উচ্চারিত হয় / আমার হৃদয় যেন রয়ে যায় মানুষের বুকে…”

লেখক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর


এই বিভাগের আরও খবর