শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

*ইসলামের রুকন, রাষ্ট্র ও জেহাদ:* *ওহী নির্ধারিত নীতি ও ইজতিহাদ*

ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসা / ৮ Time View
Update : সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

ডা. এম. জি. মোস্তফা মূসা:

*ইসলামের রুকন, রাষ্ট্র ও জেহাদ:*ওহী নির্ধারিত নীতি ও ইজতিহাদ*

_ভূমিকা:_ ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত কিছু ইবাদাতলিপি বা আচার নয়, বরং এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের আত্মিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় সকল দিককে সমানভাবে আলোয় উদ্ভাসিত করে। এই জীবনব্যবস্থা এসেছে সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে, ওহীর মাধ্যমে, যা মানবজাতিকে আলোকিত করার জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বিধান।

তবে বাস্তব জীবনে ইসলামের এই পূর্ণতা ও সর্বব্যাপিতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে তা হলো, ইসলামী জীবনব্যবস্থার কোন অংশ পুরোপুরি ওহী নির্ভর, আর কোন অংশ মানুষের চিন্তা বা ইজতিহাদ অনুমোদিত? কারণ, ইসলাম যেমন নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট কিছু বিধান দিয়েছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে মানুষের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও পরিবর্তনশীল বাস্তবতার সাথে মানিয়ে চলার সুযোগও রেখেছে।

 

কাঠামোগতভাবে দ্বীন-ইসলামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা ইসলামী জীবনব্যবস্থার মূল ভিত্তি গড়ে তোলে:

_(ক). ইসলামের ভিত্তি (রুকন):_ যা সরাসরি ওহী দ্বারা নির্ধারিত এবং যেখানে কোনো মানুষের ইজতিহাদের কোন স্থান নেই।

_(খ). ইসলামী রাষ্ট্র:_ যেখানে রাষ্ট্রের মূলনীতি ও মৌলিক শাসনব্যবস্থা ওহীর দ্বারা নির্ধারিত হলেও প্রশাসনিক কাঠামো, আইন প্রণয়ন পদ্ধতি এবং রাজনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তা ও ইজতিহাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

_(গ). জেহাদ:_ জহাদ ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া, যা মূলত ওহী নির্ধারিত হলেও, বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইজতিহাদের প্রয়োজন দেখা দেয়।

এই তিনটি উপাদানকে ঘিরেই গড়ে ওঠে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো, যা একদিকে চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয় নীতিমালা, অন্যদিকে পরিবর্তনশীল মানবসমাজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাযথ নমনীয়তা দুইয়ের সমন্বয় ঘটায়।

এই প্রবন্ধে ইসলামের এই কাঠামোগত দিকগুলোর বিশ্লেষণ করা হবে, যেখানে দেখানো হবে, ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে ওহীর অবিচল নীতি এবং মানুষের ইজতিহাদের সীমারেখা কোথায় এবং কতদূর পর্যন্ত। এভাবেই বোঝা সম্ভব হবে, ইসলাম কেন এবং কীভাবে প্রতিটি যুগের মানুষকে আলোকিত করতে সক্ষম হয়, যুগের চাহিদা মেনে, অথচ চিরন্তন সত্যের সীমার মধ্যে থেকেই।

ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি সবসময় একটি জটিল প্রশ্ন ছিল, কারণ তাতে ওহীর নির্ধারিত উপাদান এবং মানুষের ইজতিহাদের ভূমিকা দুটোই একসাথে কাজ করে। নিম্নে দ্বীন-ইসলামী জীবন ব্যবস্থার কাঠামোগত দিক বিশ্লেষণ করা হলো।

*কাঠামোগতভাবে দ্বীন-ইসলামের*
*তিনটি উপাদান রয়েছে:*

*১. ইসলামের ভিত্তি বা রুকন:*

(ক). ইসলামের ভিত্তি সরাসরি ওহী দ্বারা নির্ধারিত (কুরআন ও সুন্নাহ)। (হাদীসে জিবরীল)! (খ). কোনো মানুষের ইজতিহাদ বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। (গ). যেমন: ঈমান, সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি। মূল কথা, ইসলামী রুকন বা ভিত্তি বা স্তম্ভ সম্পূর্ণ ওহী নির্ভর।

*২. ইসলামী রাষ্ট্র:*

এখানেই আসে মূল প্রশ্ন – ইসলামী রাষ্ট্র কি পুরোপুরি ওহীভিত্তিক, নাকি মানুষের চিন্তাও এতে কাজ করে? ইসলামী রাষ্ট্রের দুটি উপাদান থাকে:

_২.১ ওহীর দ্বারা নির্ধারিত উপাদান:_ যেমন, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক উদ্দেশ্য, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অন্যায় দূর করা এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন। যেমন কুরআনের নির্দেশ: “যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, তারা কাফির।” (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪)! এগুলো পরিবর্তনযোগ্য নয়। এগুলো পুরোপুরি ওহী নির্ধারিত।

_২.২ মানবসৃষ্ট উপাদান (ইজতিহাদ ও প্রশাসনিক কৌশল):_ বাস্তব রাষ্ট্র চালাতে গেলে বহু বিশদ কাঠামো দরকার, যেমন: (ক). প্রশাসনিক কাঠামো (মন্ত্রণালয়, বাহিনী, কর ব্যবস্থা)। (খ). বাজেট প্রণয়ন পদ্ধতি। (গ). অর্থনীতি, ব্যাংকিং পদ্ধতি। (ঘ). নাগরিক অধিকার ও আইন। (ঙ). বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিগত ব্যবহার। (চ). আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কূটনীতি।

মানবসৃষ্ট উপাদান গুলোতে ওহী নির্দিষ্ট কোনো কাঠিন্য আরোপ করেনি। বরং ওহীর শর্ত হলো: (ক). তা যেন কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী না হয়। (খ). ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়। (গ). মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “তোমরা দুনিয়াবিষয়ে নিজেরা ভালো জানো।” (সহীহ মুসলিম)!

এখনো আমরা দেখছি, ইসলামের প্রথম চার খলিফা (রাসিদুন) শাসন ব্যবস্থা একই রকম ছিল না। উদাহরণ: (ক). আবু বকর (রা.) ছিলেন সহজ-সরল প্রশাসক। (খ). উমর (রা.) তৈরি করলেন দিওয়ান (বেতন-কাঠামো), বিচার বিভাগ, পুলিশ ব্যবস্থা। (গ). উসমান (রা.) কিছু প্রশাসনিক পদ্ধতি পরিবর্তন করলেন। (ঘ). আলী (রা.) অন্যভাবে প্রশাসন চালালেন।

অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশদ অংশে ইজতিহাদ ও মানব-সৃষ্ট পদ্ধতি বৈধ, যতক্ষণ না তা ওহীর সীমা লঙ্ঘন করে।

*৩. জেহাদ: ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া*

(ক). ওহী দ্বারা নির্ধারিত। (খ). শর্ত, নিয়ম, উদ্দেশ্য – সবই কুরআন-সুন্নাহতে নির্দিষ্ট। (গ). ইজতিহাদ কেবল প্রয়োগের ক্ষেত্রে (কখন, কীভাবে, কার বিরুদ্ধে জিহাদ)। (ঘ). মূলত ওহী নির্ভর, প্রয়োগে ইজতিহাদের অবকাশ।

*৪. উপসংহার:*

_৪.১ ইসলামী রাষ্ট্রে ওহী বনাম মানবসৃষ্ট উপাদান:_ (ক). ওহী দ্বারা নির্ধারিত অংশ।(খ). শাসন আল্লাহর বিধানে চলতে হবে। (গ). ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের মৌলিক নীতি। (ঘ). ইসলামবিরোধী কোনো আইন চলবে না।

_৪.২ মানবসৃষ্ট উপাদান (ইজতিহাদ):_ (ক). প্রশাসনিক পদ্ধতি। (খ). অর্থনীতি, প্রযুক্তি, কৌশল। (গ). আইনি পদ্ধতির বিস্তারিত রূপ।

অর্থাৎ, ইসলামী রাষ্ট্র মৌলিকভাবে ওহী ভিত্তিক, তবে বাস্তব কাঠামো ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ প্রয়োজনীয়। ইসলামী রাষ্ট্র কোনো “ক্লোন” কাঠামো নয়, বরং একেক যুগে নতুন বাস্তবতায়, ওহীর সীমার মধ্যে থেকে তৈরি হয়।

“ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি ও মূলনীতি ওহী দ্বারা নির্ধারিত, তবে রাষ্ট্রের কাঠামো, প্রশাসন ও প্রয়োগের ক্ষেত্র মানব-সৃষ্ট পদ্ধতি ও ইজতিহাদ দ্বারা পূরণ হয়, যদি তা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী না হয়।”

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ০৭-০৭-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category