রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনমঃ
এনসিপি ইনসাফের ভিত্তিতে দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ময়মনসিংহে অবৈধ ব্যাটারি অটো তৈরির কারখানা, চুরির সংখ্যা বেড়েই চলেছে মিটফোর্ড এ  নৃশংসভাবে ইট দিয়ে হত্যার ঘটনায় ২ জন ও চট্টগ্রামে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ১১ খন্ড করে গুম করার চেস্তার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার সহ   সাংবাদিকদের সাথে র‍্যাবের মতবিনিময় আরাফাত রহমান কোকো স্পোর্টস একাডেমির উদ্দোগ্যে জোড়া খাসি প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট গাবতলীতে অনুষ্ঠিত *মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি:* *অগ্রগতি ও অন্তরায়* *জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লব: আইন, নীতি, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের আলোকে মনস্তাত্তিক এবং ভৌগোলিক বিশ্লেষণ* দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে শীর্ষ স্থানে কাগতিয়া মাদ্রাসা মিডফোর্ডে ব্যাবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা -কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে ববি’র শিক্ষার্থীরা অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড টাগ ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদেরকে ‘প্রশংসাপত্র’ প্রদান করলো ‘আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (IMO যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ১৩৫৩ কর্মকর্তা ছাঁটাই সন্তান জন্ম দিতে এখনো আমেরিকায় আসছেন বাংলাদেশি দম্পতিরা গ্রিনকার্ডধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত আদেশ স্থগিত শিকাগো ম্যারাথন ও আয়রনম্যান নিউইয়র্কে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশি মিশু চাঁদপুরে খুতবা পছন্দ না হওয়ায় ইমামকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা ! রাজনীতি, সন্ত্রাস ও নৈতিক পতন: একটি ভয়াবহ বাস্তবতা যেই লাউ সেই কদু *”যোগ্য বিচার চাই – মানবতা যেন হার না যায়!”* এডভোকেট এম হেলাল উদ্দিনের সংক্ষিপ্ত সফর: মেহেন্দিগঞ্জের মানুষের পাশে মানবিক নেতার একদিন মিটফোর্ড খুন- খুব শীঘ্রই সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি দিতে হবে, নয়তো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রদত্যাগ করার, দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তুলবো

কবি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ ভাষণঃ

রিপোর্টার নাম
পাবলিশ: শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
কবি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ ভাষণঃ

মোঃ আজিম উদ্দিনঃ

কবি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ ভাষণঃ

১৯৪১ সালের ৬ এপ্রিল কলকাতা মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি”র রজত জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতি রূপে কাজী নজরুল ইসলাম এই অভিভাষণ দান করেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে চিরজীবনের জন্য বাক্‌রুদ্ধ হয়ে যাবার পূর্বে এই ছিল তাঁর সর্বশেষ বক্তৃতা। কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই জবাব হাজির করে রেখেছেন এই কালজয়ী ভাষণে।

বন্ধুগণ,
আপনারা যে সওগাত আজ হাতে তুলে দিলেন, আমি তা মাথায় তুলে নিলুম। আমার সকল তনু-মন-প্রান আজ বীণার মত বেজে উঠেছে। তাতে শুধু একটি মাত্র সুর ধ্বনিত হয়ে উঠেছে- “আমি ধন্য হলুম”, “আমি ধন্য হলুম”।

আমায় অভিনন্দিত আপনারা সেই দিনই করেছেন, যেদিন আমার লেখা আপনাদের ভাল লেগেছে। বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি। এরই অভিযান সেনাদলের তূর্য্যবাদকের একজন আমি- এই হোক আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলে, শুধু এই দেশেরই, এই সমাজেরই নই; আমি সকল দেশের, সকল মানুষের। কবি চায় না দান, কবি চায় অঞ্জলি। কবি চায় প্রীতি। কবিতা আর দেবতা সুন্দরের প্রকাশ।

সুন্দরকে স্বীকার করতে হয়, যা সুন্দর তাই দিয়ে। সুন্দরের ধ্যান, তাঁর স্তবগানই আমার ধর্ম। তবু বলছি, আমি শুধু সুন্দরের হাতে বীণা, পায়ে পদ্মফুলই দেখিনি, তাঁর চোখে চোখ ভরা জলও দেখেছি। শ্মশানের পথে, গোরস্তানের পথে তাঁকে ক্ষুধাদীর্ণ মুর্তিতে ব্যাথিত পায়ে চলে যেতে দেখেছি। যুদ্ধভূমিতে তাঁকে দেখেছি। কারাগারের অন্ধভূমিতে তাঁকে দেখেছি। ফাঁসির মঞ্চে তাঁকে দেখেছি।

আমাকে বিদ্রোহী বলে খামখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এ নিরীহ জাতটাকে আঁচড়ে-কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই।

আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, যা মিথ্যা-কলুষিত-পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।

কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের।আমি বলি, ও দু’টোর কোনটাই নয়। আমি কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি; গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মিলানো যদি হাতাহাতির চেয়ে অশোভনীয় হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে।

আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে তাদের কোন বেগ পেতে হবে না। কেননা, একজনের হাতে আছে লাঠি, আরেকজনের আস্তিনে আছে চুরি । হিন্দু-মুসলমানে দিনরাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ।মানুষের জীবনে এক দিকে কঠোর দারিদ্র-ঋণ-অভাব; অন্যদিকে লোভী অসুরের যক্ষের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা পাষাণ স্তুপের মত জমা হয়ে আছে।

এ অসাম্য ভেদজ্ঞান দূর করতেই আমি এসেছিলাম। আমার কাব্যে সংগীতে কর্মজীবনে অভেদ ও সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। আমি যশ চাই না, খ্যাতি চাই না, প্রতিষ্ঠা চাই না, নেতৃত্ব চাই না। জীবন আমার যত দুঃখময়ই হোক, আনন্দের গান- বেদনার গান গেয়ে যাব আমি। দিয়ে যাব নিজেকে নিঃশেষ করে সকলের মাঝে বিলিয়ে। সকলের বাঁচার মাঝে থাকবো আমি বেঁচে। এই আমার ব্রত, এই আমার সাধনা, এই আমার তপস্যা।

রবীন্দ্রনাথ আমায় প্রায়ই বলতেন,”দ্যাখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলীর মত, কীটসের মত খুব বড় একটা ট্র্যাজেডী আছে, তুই প্রস্তুত হ’।” জীবনে সেই ট্র্যাজেডী দেখবার জন্য আমি কতদিন অকারনে অন্যের জীবনকে অশ্রুর বরষায় আচ্ছন্ন করে দিয়েছি। কিন্তু, আমারই জীবন রয়ে গেল বিশুষ্ক মরুভূমির মত দগ্ধ। মেঘের উর্ধ্বে শূণ্যের মত কেবল হাসি, কেবল গান, কেবল বিদ্রোহ।
আমার বেশ মনে পড়ছে।

একদিন আমার জীবনের মহা অনুভূতির কথা। আমার ছেলে মারা গেছে। আমার মন তীব্র পুত্র শোকে যখন ভেঙে পড়ছে ঠিক সেই দিনই সেই সময় আমার বাড়িতে হাস্নাহেনা ফুটেছে। আমি প্রানভরে সেই হাস্নাহেনার গন্ধ উপভোগ করেছিলাম। আমার কাব্য, আমার গান আমার জীবনের সেই অভিজ্ঞতার মধ্য হতে জন্ম নিয়েছে।

যদি কোনদিন আপনাদের প্রেমের প্রবল টানে আমাকে আমার একাকিত্বের পরম শূণ্য থাকে অসময়ে নামতে হয়, তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন না, আমি সেই নজরুল। সেই নজরুল অনেক দিন আগে মৃত্যুর খিড়কী দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে। মনে করবেন পুর্ণত্বের তৃষ্ণা নিয়ে একটি অশান্ত তরুণ এই ধরায় এসেছিল, অপূর্ণতার বেদনায় তারই বিগত আত্মা যেন স্বপ্নে আপনাদের মাঝে কেঁদে গেল।

আরও পড়ুনঃ সরাইলে দাঙ্গা – হাঙ্গামা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত

যদি আর বাঁশী না বাজে, আমি কবি বলে বলছি নে, আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি, আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন। আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসি নি। আমি নেতা হতে আসি নি। আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী হতে নিরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।

যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন হয়ত বা বড় বড় সভা হবে। কত প্রশংসা কত কবিতা বেরুবে হয়ত আমার নামে। দেশপ্রেমী, ত্যাগী, বীর, বিদ্রোহী- বিশেষনের পর বিশেষন, টেবিল ভেঙে ফেলবে থাপ্পর মেরে,বক্তার পর বক্তা। এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে বন্ধু তুমি যেন যেও না। যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ কোর। তোমার ঘরের আঙিনায় বা আশেপাশে যদি একটি ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও, সেইটিকে বুকে চেপে বোল বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি।

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করে সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।


এই বিভাগের আরও খবর