বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লায় সাবেক এমপি বাহার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন রেজাউল করিম রতন ও তার ছেলে এ্যালভিনের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ অভিযোগ-দুর্নীতি, অস্ত্র কারবার, ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানো, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভ, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় প্রশ্ন উঠেছে আইনের কার্যকারিতা নিয়ে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সাবেক মেয়র মরহুম আরফানুল হক রিফাতের জামাতা এ্যালভিন এবং তার পিতা রতন এখনো প্রকাশ্যে ক্ষমতার দম্ভে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। রতনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হলেও, তিনি প্রশাসনের বিশেষ কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন দফতরে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পলাতক এমপি বাহারের নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামিদের পক্ষে থানায় ঘুরে বেড়ান।
এমপি বাহারের শাসনামলে রতন ও তার সহযোগী আতিকুল্লাহ খোকন অসহায়দের কাছ থেকে নামমাত্র দামে প্লট, ফ্ল্যাটসহ মূল্যবান সম্পত্তি হাতিয়ে নেন। এসব অবৈধ সম্পদ বর্তমানে রতন ও এ্যালভিনের হেফাজতে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন, যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা যায়।
আরও পড়ুনঃ রাজাপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা, পোনা অবমুক্ত ও সাতার প্রতিযোগীতা
রতনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ-তিনি নিজ হাতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গুলি চালিয়েছেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগকে অস্ত্র দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। অথচ রহস্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, যা জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
সূত্রমতে, রতন ও এ্যালভিন ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেন। এ্যালভিন নগরীর কিশোর গ্যাং “আতকা গ্রুপ”-এর প্রধান হিসেবে স্কুল-কলেজের উঠতি বয়সি কিশোরদের হাতে অবৈধ অস্ত্র তুলে দিয়ে নগরীতে হানাহানির পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
শনিবার বিকেলে কুমিল্লা স্টেডিয়াম মার্কেটে বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামি এ্যালভিনকে ২০-২৫ জন কিশোর অপরাধীর সঙ্গে প্রকাশ্যে আড্ডা দিতে দেখা যায়। স্থানীয় দোকানিরা জানান, পুলিশকে তথ্য দেওয়ার পরও রহস্যজনকভাবে দীর্ঘ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে না আসায় এ্যালভিন নির্বিঘ্নে আড্ডা দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
এ্যালভিনের বাবা রতন দম্ভভরে বলেন, “আমাদের বস এমপি বাহার শিগগিরই ফিরবে। এখন যারা আমাদের দিকে বাঁকা চোখে চাচ্ছেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
আরও পড়ুনঃ ঝালকাঠিতে ডিবির অভিযানে ইয়াবাসহ যুবক আটক
ঘটনার বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মহিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, যা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এই চিত্র কুমিল্লার রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার এক ভয়াল প্রতিচ্ছবি-যেখানে ক্ষমতা, অর্থ ও অস্ত্রের দাপটে ন্যায়বিচার আজ বন্দি। জনতার প্রশ্ন, কবে থামবে রতন-এ্যালভিনের দানবীয় দাপট?।