শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

নারী ও পর্দা: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, দায়িত্ব ও পরিণতি*

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ / ৭ Time View
Update : রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ

*নারী ও পর্দা: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, দায়িত্ব ও পরিণতি*

_ভূমিকা:_ ইসলাম নারীর মর্যাদা, সম্মান ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য পর্দার বিধান দিয়েছেন, যা কেবল একটি পোশাকবিধি নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাচার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আধুনিক প্রভাব ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসরণে অনেক নারী এই বিধানকে অবহেলা করছে। তারা অশালীন পোশাক, আঁটসাঁট পোষাক বা টিশার্ট-প্যান্ট পরে সমাজে চলাফেরা করছে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত। এর ভয়াবহ পরিণতি শুধু তাদের জন্য নয়, অভিভাবক ও পুরো সমাজের জন্যও বয়ে আনে।

*পর্দার কুরআনিক নির্দেশনা:*

আল্লাহ তাআলা সূরা আন-নূরে বলেন: “হে নবী! মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্য যেন প্রকাশ না করে, যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তা ছাড়া। তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশের উপর টেনে দেয়।” (২৪:৩১)

আর সূরা আল-আহযাবে বলেছেন: “হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুমিন নারীদের বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদের চিনে নেওয়া সহজ হবে এবং তারা উত্যক্ত হবে না”। (৩৩:৫৯)

এই আয়াতগুলো স্পষ্ট করে যে, পর্দা শুধু ধর্মীয় বিধান নয়; এটি নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি।

আরও পড়ুনঃ জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্য আছে: সালাহউদ্দিন

*অভিভাবকের দায়িত্ব:*

নারী কখনো অভিভাবকহীন নয়। বিয়ের আগে অভিভাবক হলো পিতা-মাতা। বিয়ের পরে অভিভাবক হলো স্বামী।

_রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:_ “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, নারীও তার স্বামীর গৃহে দায়িত্বশীল…” (বুখারী ও মুসলিম)

অতএব, পরিবারের নারীদের ইসলামের পথে উদ্বুদ্ধ করা, পর্দার প্রতি সচেতন করা এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখা অভিভাবকের অপরিহার্য দায়িত্ব।

*দাইয়ূস: নিন্দিত চরিত্র*

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সতর্ক করে বলেছেন: “তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না: মদ্যপ, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং দাইয়ূস।” (মুসনাদে আহমাদ)

দাইয়ূস হলো সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের নারীদের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা দেখে চুপ থাকে বা প্রশ্রয় দেয়। এদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির ঘোষণা। কারণ, তাদের অবহেলার কারণে নারীরা গুনাহে লিপ্ত হয় এবং সমাজে অশ্লীলতার স্রোত ছড়িয়ে পড়ে।

*বর্তমান বাস্তবতা:*

আজকের সমাজে অনেক নারীর পোশাক-আশাকে ইসলামি শালীনতা অনুপস্থিত। মিডিয়া, ফ্যাশন ও পাশ্চাত্য প্রভাবে অনেকেই পর্দাকে “বাধা” মনে করছে। অথচ এর আসল উদ্দেশ্য নারীকে মর্যাদাশীল ও সুরক্ষিত রাখা। দুঃখজনক হলো, অনেক অভিভাবক এ ব্যাপারে নীরব, কেউ কেউ আবার সন্তানদের অশ্লীল পোশাকে উৎসাহিত করছে। এভাবেই সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বাড়ছে।

আরও পড়ুনঃ গাইবান্ধায় দলিল লেখকদের ৭ দফা দাবি পূরণে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি

*সমাধান ও করণীয়:*

_(ক). অভিভাবকের সচেতনতা:_ বাবা-মা ও স্বামীদের মনে রাখতে হবে, পরিবারের নারীদের ইসলামের পথে পরিচালিত করা ঈমানের দাবি।

_(খ). প্রাথমিক শিক্ষা:_ ছোটবেলা থেকেই কন্যাসন্তানকে পর্দার গুরুত্ব শেখানো প্রয়োজন।

_(গ). সামাজিক উদ্যোগ:_ মিডিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক পরিসরে শালীনতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

_(ঘ). ধর্মীয় অনুশীলন:_ পরিবারে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক পরিবেশ গড়ে তুললে নারীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামী জীবনাচারে আগ্রহী হবে।

*পর্দা: আইন, নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের আলোকে*

পর্দা কেবল ধর্মীয় বিধান নয়, বরং এটি আইন, নীতি ও নৈতিকতার এক সমন্বিত ব্যবস্থা। শরীয়তের দৃষ্টিতে অর্থাৎ ইসলামী আইনে পর্দা করা ফরজ, তাই এর আইনগত অবস্থান স্পষ্ট।

নীতিগতভাবে এটি সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে, কারণ শালীনতা সমাজকে অশ্লীলতা, অপরাধ ও অনৈতিক সম্পর্ক থেকে সুরক্ষা দেয়।

নৈতিকতার ক্ষেত্রে পর্দা মানুষের অন্তরকে পবিত্র রাখে, অন্যকে কুদৃষ্টিতে দেখা থেকে বিরত রাখে এবং আত্মসম্মানকে উঁচু করে।

মূল্যবোধের দিক থেকে পর্দা পরিবার ও সমাজে ভদ্রতা, পরিমিতি ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখে।

আর দর্শনের দিক থেকে এটি মানবজীবনে স্বাধীনতার সঠিক ভারসাম্য শেখায়—যেখানে নারীর স্বাধীনতা থাকে তার মর্যাদা রক্ষার মধ্য দিয়ে, অবাধ অশ্লীলতার মাধ্যমে নয়।

আরও পড়ুনঃ জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্য আছে: সালাহউদ্দিন

অতএব, পর্দা একটি সামগ্রিক জীবনদর্শন, যা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক, নীতিগতভাবে প্রয়োজনীয়, নৈতিকভাবে পবিত্রতাদায়ক, মূল্যবোধের দিক থেকে কল্যাণকর এবং দর্শনের আলোকে মানবজীবনে সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলার প্রতীক।

*উপসংহার:* পর্দা কোনো শৃঙ্খল নয়, বরং এটি নারীর মর্যাদা ও সমাজের শুদ্ধতা রক্ষার এক মহান বিধান। অভিভাবকরা যদি দায়িত্ব পালন না করে নারীদের অশ্লীলতায় প্রশ্রয় দেয়, তবে তারা দুনিয়াতে অপমানিত হবে এবং আখেরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। তাই আমাদের কর্তব্য—ভালোবাসা ও প্রজ্ঞার সাথে নারীদের ইসলামী পর্দার পথে আহ্বান করা, যাতে তারা দুনিয়ায় সম্মানিত জীবন পায় এবং আখেরাতে মুক্তির সৌভাগ্য অর্জন করে।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ১৭-০৮-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category