উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ না পেয়ে এক সরকারি শিক্ষক কর্তৃক সরকারি তালিকা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ১১টায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান সেলিম এর আগেও একাধিক অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগে সমালোচিত ছিলেন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান সেলিম উপজেলার শান্তিপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপের জন্য তার ছোট ভাই এর মালিকানাধীন তরঙ্গ ট্রেডার্স এর নামে আবেদন করেন।
প্রাথমিক বাছাইয়ে ওই নাম বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনার দিন তিনি সমাজসেবা কার্যালয়ে আসেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি সরকার অনুমোদিত তালিকাটি ছিঁড়ে ফেলেন।
আরও পড়ুনঃ প্রবীন সাংবাদিক হানিফ ভূঁইয়ার স্ত্রীর ইন্তেকাল
এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন সমাজ সেবা কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক ভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহাকে জানালে, তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান সেলিম লিখিত মুচলেকা দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সেলিম দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। এমনকি সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের বিজ্ঞাপন সংগ্রহের বেলায় একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর হতে বিজ্ঞাপন গ্রহণ করেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি সহ সরকারী কর্মচারী হলেও ওই পত্রিকার উলিপুর প্রতিনিধি হিসেবে থেতরাই আব্দুল জব্বার কলেজে গভর্নিং বডির সদস্য হয়ে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।
একজন শিক্ষক হিসেবে এসব কর্মকাণ্ড তাঁর পেশাগত ও নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্বে থাকা একজনের এমন আচরণ সমাজের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ সাধারণত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত।
আরও পড়ুনঃ ময়মনসিংহে পিআইডি জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সেখানে একজন সরকারি চাকরিজীবী, বিশেষ করে শিক্ষক, নিজেই ডিলারশিপের জন্য লালায়িত হয়ে পড়েছেন—এটি কতটা নৈতিক বা আইনসম্মত, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিলারশিপ বাছাই হয়।
কেউ আইনের বাইরে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকেও ওই শিক্ষকের এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সচেতন মহল দাবি করছে, হাফিজুর রহমান সেলিমের বিরুদ্ধে পুরোনো ও বর্তমান অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে যথাযথ তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ পেশাগত দায়িত্ব ভুলে অপকর্মে জড়াতে না পারে।