আশরাফুজ্জামান সরকার, গাইবান্ধাঃ-
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ বহুবার প্রকাশ পেলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এতে দিনদিন জনমনে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে, আর বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলাল প্রকৌশলী, না ঠিকাদার? এত প্রতিবাদ- প্রতিবেদন সত্ত্বেও প্রশাসনের নীরবতা কেন ? তাহলে হেলালের খুঁটির জোর কোথায় ?
পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি মৌজায় অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলাল কার্যত নিজেই ‘ঠিকাদার’ হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুনঃ যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিহত করতে হবে – সালাউদ্দিন বাবু
স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে ইতিপূর্বে শিরোনাম হয়েছে— “উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল এখন নিজেই ঠিকাদার”। তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহারের আড়ালে প্রকৌশলী হেলাল নিজেই নির্মাণকাজ পরিচালনা করছেন। এতে যেমন সরকারি অর্থের চরম অপচয় ঘটছে, তেমনি কাজের মান নিয়েও উঠছে গুরুতর প্রশ্ন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান দোলন কাজের মান নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁর আপত্তিতে একাধিকবার কাজ বন্ধ থাকলেও, উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল বারবার জোর করে নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। নির্মাণে প্রতিনিয়ত মানহীন ইট, কম মাপের রড ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিম্নমানের কাজ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায়, এলাকাবাসীকে চাপে ফেলতে মিথ্যা ‘চাঁদাবাজি’র নাটক সাজিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপচেষ্টা চালানো হয়। অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে আদালতকে বিভ্রান্ত ও হয়রানি করেন প্রকৌশলী হেলাল। এসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিকে আড়াল করে প্রতিবাদ দমন করা।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সাথে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক চুক্তি করতে চায় ব্রাজিল
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন, সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং এলাকাবাসীর সরব প্রতিবাদ থাকা স্বত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম জানান, “আগামী রোববার ২৭ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।”
উপজেলা প্রকৌশলী তহিদুল করিম সরকার জানান, “আগামী সপ্তাহে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের রংপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
আরও পড়ুনঃ সুনামগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা অনুষ্ঠিত
স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন উঠেছে—প্রকৌশলী হেলালের পেছনে কোন প্রভাবশালী মহলের ছায়া রয়েছে যে, তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে না ?
এ ঘটনায় প্রতিবাদী এলাকাবাসীর দাবি—
১. উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. নির্মাণকাজ স্থগিত রেখে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত।
৩. বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মতামতের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনা
৪. ‘চাঁদাবাজির’ মিথ্যা নাটক সাজানোর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা এবং প্রতিবাদকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
সচেতন মহলের মতে, একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ঠিকাদারি করেন—তা জনস্বার্থে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সরকারি অর্থ ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে এভাবে ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না।
তাদের একটাই দাবি— দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। অন্যথায় এই নীরবতা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার নামান্তর হয়ে থাকবে।