এম. শফিক মাহমুদ সোহান,
নলছিটি উপজেলা প্রতিনিধি।।
ঝালকাঠির নলছিটিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে উপজেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে ১৩ দফা পরামর্শমূলক প্রস্তাবনায় স্মারকলিপি প্রদান করেন স্থানীয় সমাজকর্মী বালী তাইফুর রহমান তূর্য। ৩০ জুন রবিবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব সালাহউদ্দিন খান সেলিম স্মারকলিপিটি গ্রহন করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো। নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাগন দীর্ঘদিন যাবৎ কিছু সমস্যায় ভুগছেন।যার সমাধান হলে এই উপজেলার লক্ষাধিক জনসাধারন অত্যন্ত উপকৃত হবে এবং আপনার সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তারা মনে করেন।
*উপজেলার সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল।
ক) উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটার চালুর জন্য লিখিত আবেদন করেও চিকিৎসক সংকট দেখিয়ে চালু হয়নি,নতুন বরাদ্দকৃত আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন কয়েকদিন চললেও আর চলছে না।উপজেলায় সাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধিতে এটি চালু করা এবং সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা অতীব জরুরী।
খ) উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অর্থাৎ নতুন বহুতল ভবন প্রয়োজন এর মধ্যে পৌরসভার ০৯ নং ওয়ার্ডের শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অন্যতম।
গ) বয়স্ক নাগরিকদের হাটা ,বসা ও শিশুদের মানুষিক বিকাশের জন্য নলছিটি শহরে একটি পার্কের দাবি দীর্ঘদিনের,তাই নলছিটি সুগন্ধা নদীর তীরে একটি পার্ক নির্মান করা যেতে পারে।
ঘ) নদী ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরী,এজন্য অন্যতম সমস্যা অবৈধ ড্রেজিং বা বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন।অনুরাগ,সারদল,তিমিরকাঠী সহ কয়েকটি স্পটে তীব্র ভাঙনে গ্রাম পর্যন্ত বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ঙ) উপজেলাটিতে নিজস্ব কোনো পরিকল্পিত বাস স্ট্যান্ড না থাকায় শহরের মধ্যেই বিশৃঙ্খল অবস্থায় বাস পার্কিং করা হয় বলে বাস স্ট্যান্ড যায়গাটি জ্যাম বা জটে আটকে যায়,যা চলাচলে ব্যপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
চ) উপজেলা শহরে কিশোর ও যুবকদের খেলার মাঠের খুবই অভাব,যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রয়েছে তাও বিকেলে বন্ধ করে রাখা হয় যার ফলে শিশু কিশোরেরা মোবাইল ও মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।তাই মাঠ এবং মিনি স্টেডিয়ামের ব্যবস্থা করা অতি জরুরী।
১।পৌরসভাঃ যদিও পৌরসভা একটি সতন্ত্র প্রতিষ্ঠান তারপরেও আন্তরিকতা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে এটিরও উন্নয়ন করা সম্ভব।
ক) পৌরসভার প্রায় সকল ওয়ার্ডগুলিতে প্রধান প্রধান জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ,এর মধ্যে ৮ টি জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপ পরিচালক,ঝালকাঠী মহোদয়কে লিখিতভাবেও অবগত করা হয়েছে। ০৯ টি ওয়ার্ডেই অন্তত ৫০টি রাস্তা রয়েছে যার সংস্কার প্রয়োজন।
খ) পৌরসভায় গার্বেজ স্টেশন বা পরিকল্পিত ময়লা ফেলার যায়গা না থাকায় পরিবেশের ব্যাপক দূষন হচ্ছে,বিশেষ করে নলছিটি ফেরীঘাটের রাস্তার পাশে ময়লা ফেলায় রাস্তা দিয়ে নাগরিকদের চলাচল করাই কস্টদায়ক ।তাই পরিকল্পিত একটি গার্বেজ স্টেশন নির্মান করা হলে শহরটি পরিচ্ছন্ন ও দুষনমুক্ত হবে।
গ) সাপ্লাই পানির বিশুদ্ধতার অনিশ্চয়তার কোনো সমাধান হচ্ছে না,প্রায়ই কাদাযুক্ত ও নদীর ময়লা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।যার ফলে নাগরিকদের মারাত্মক সাস্থ্য ঝুকি থেকে যাচ্ছে।এজন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের জন্য বৃহৎ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
২। ইউনিয়নঃ
ক)সিদ্ধকাঠী সহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ন রাস্তাও কাচা রয়ে গেছে,কিছু রাস্তায় ইট দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে,পর্যায়ক্রমে সেই রাস্তাগুলোকে অন্তত ইটের হেরিংবন বা সোলিং করা হলে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশেই লাঘব হবে।
খ) দপদপিয়া ইউনিয়নের গোহালকাঠী থেকে পৌরসভার কান্ডপাশা স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার মানববন্ধন করে লিখিত আবেদনের পরেও শুরু হয়নি।যার ফলে উচু জোয়ারেই রাস্তা তলিয়ে যায়,রোগীদের কোলে করে দুই কিলোমিটার ভাঙাচোড়া পথ পারি দিয়ে চিকিৎসা নিতে যেতে হয়।কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য রাস্তাটির সংস্কার অতি জরুরী।
গ) রানাপাশা ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া ফেরীঘাটে রাজাপুরের সাথে ফেরী চালুর দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে স্মারকলিপি প্রদান করলেও তার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।এখানে ফেরী চালু হলে মারাত্মক জনভোগান্তি লাঘব হবে।
ঘ) দপদপিয়া ইউনিয়নের কুমারখালী অংশ থেকে অনুরাগ পর্যন্ত সুগন্ধা নদীর মৃত যে অংশ রয়েছে সেখানে শীত মৌসুমে প্রচুর অতিথী পাখি আসে তাদের ককাকলীতে এলাকাটি নয়নাভিরাম দৃশ্য ধারন করে,এই স্পটটিতে সামান্য কিছু বেঞ্চ ও বাতি স্থাপন করা হলে একটি পর্যটন স্পট হতে পারে যা এই এলাকার অর্থনৈতি উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে,তাই এই খাতে উন্নয়নের জন্য তার সমদৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব সালাহউদ্দিন খান সেলিম বলেন,আমি সব সময় নলছিটি উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারনের সুখে দু:খে পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব ইনশাআল্লাহ।স্মারকলিপির পরামর্শগুলোকে ইতিবাচকভাবে গ্রহন করেছি এবং বিবেচনা করব ইনশাআল্লাহ।