ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ
*তাকদীরের প্রতি ঈমান: তাকদীর প্রতি ঈমান ছাড়া মুসলিম দাবি করার সুযোগ নেই:*
_প্রশ্ন: আমার এক দ্বীনী ভাই নিজের ভাগ্যের প্রতি তেমন বিশ্বাস করতে চান না। সে বলে নিজেদের কর্মদক্ষতার কারণেই সব সাফল্য আসে। এই রকম বিশ্বাস থাকলে ঈমান থাকবে কি?_
_উত্তর:_ তাকদীর বা ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের একটি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“ঈমান হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর সকল ফেরেশতা, তাঁর যাবতীয় [আসমানী] কিতাব,তাঁর সমস্ত রাসূল এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখবে। সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮)
▪এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া মুমিন দাবী করা সম্ভব নয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন,
لو كان لأحدهم مثل أحد ذهبا ثم أنفقه في سبيل الله ما قبله الله منه حتى يؤمن بالقدر
“সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে ইবনে উমারের জীবন, তাদের (তাকদীর অস্বীকারকারীদের) কারও কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে”।
আরও পড়ুনঃ গাইবান্ধায় বৃক্ষমেলা ২০২৫ উদ্বোধন
এরপর তিনি উক্ত ঈমানের ছয়টি রোকন সংক্রান্ত হাদীস দ্বারা এ কথার পক্ষে দলীল পেশ করেন। (শরহুল আকীদা আত তহাবীয়া, শাইখ আব্দুল আযীয আল রাজেহী)
▪তিনি আরও বলেন: ”যে ব্যক্তি [তাকদীরের উপর] বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং ৪৭০০)
▪ইবনু দাইলামী থেকে বর্ণিত আছে , কাতাদাহ (রাহি.) বলেন, ‘আমি ইবনে কা’ব এর কাছে গেলাম। তারপর তাকে বললাম, ‘তাকদীরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু কথা আছে। আপনি আমাকে তাকদীর সম্পর্কে কিছু উপদেশ মূলক কথা বলুন।
দূর করে দেবেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যদি উহুদ [পাহাড়] পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান কর, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। আর এ কথা জেনে রাখ, তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটতে কখনো ব্যতিক্রম হত না। আর তোমার জীবনে যা ঘটার ছিল না, তা কখনো ঘটত না। তাকদীর সম্পর্কিত এ বিশ্বাস পোষণ না করে মৃত্যুবরণ করলে, তুমি অবশ্যই জাহান্নামী হবে।
’ তখন তিনি বললেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং যায়েদ বিন সাবিত (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর নিকট গেলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ জাতীয় হাদীস এর কথাই উল্লেখ করলেন। (সুনান আবী দাঊদ, হাদীস নং ৪৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, ৫/১৮৫,১৮৯)!
আরও পড়ুনঃ সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে নেত্রকোনায় মানববন্ধন
_যারা বলে ‘নিজের যোগ্যতা বলেই সব কিছু হয়’ তাদের কথার অসারতা:_
(ক). আমাদের যোগ্যতা দ্বারাই যদি সব কাজ হত, তাহলে প্রতিটি দম্পতি বাবা-মা হতে পারত। কিন্তু অসংখ্য মানুষ সারা জীবন একটি সন্তানের মুখ দেখার জন্য হাহাকার করে কাটিয়ে দেয়। অথচ সন্তান গ্রহণের জন্য অন্যরা যা করে তারাও তাই করেছে। কিন্তু তাকদীর বা ভাগ্যের লিখনের কারণে তারা ফল লাভ করে নি।
(খ). নিজস্ব যোগ্যতা দ্বারাই যদি সব কিছু হত, তাহলে কৃষকরা সুন্দরভাবে চাষাবাদ করেও অনেক সময় ফসল ঘরে তুলতে পারে না। বরং ঝড়-বৃষ্টি ও প্রকৃতিক বিপর্যয়ে সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। এটাই তাকদীর।
(গ). যোগ্যতা দ্বারাই যদি সব সাফল্য আসত, তাহলে মানুষ নিজেকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করতে পারত। অথচ সিডর, ভূমিকম্প আর নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু তার কিছু্ই করার থাকে না। তাকদীর বা অদৃষ্ট লিখনের কাছে নিরুপায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তার কোনই গতি থাকে না। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
সুতরাং ভাগ্যের লিখনে বিশ্বাস রেখে এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও ভরসা সহকারে কাজ করতে হবে। সাফল্য দেয়া বা না দেয়া আল্লাহর হাতে। এই বিশ্বাস থেকে বের হয়ে গেলে মানুষ নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করার যোগ্যতা হারায়। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন। আল্লাহু আ’লাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA