ডাঃ রাজিব আহমেদঃ
জ্বর কোনো অসুখ নয়, এটা বরং শক্তিশালী immune system-এর প্রমাণ। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা জ্বরকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে এবং জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণের বৃথা চেষ্টা চালিয়ে (জীবাণু ধ্বংসের সুযোগ না দিয়ে) শরীরের ভেতরে আরো বড় ধরনের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয় (কেউ সেটা জানতেও পারে না)!
শরীর গরম হওয়া বা জ্বর (pyrexia) অতি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া- যা আমাদেরকে বড় ধরনের শারীরিক ঝুঁকি থেকে বাঁচায় এবং সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।
জীবন্ত মানবদেহ যেহেতু চলমান যন্ত্র (running machine), এর তাপমাত্রা আশেপাশের পরিবেশ থেকে সর্বদা একটু বেশি থাকবে- এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে জ্বর (fever) হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনটা তখনই ঘটে- আমাদের শরীরে যখন কোনো অপরিচিত ভাইরাস/ব্যকটেরিয়া প্রবেশ করে।
আরও পড়ুনঃ এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাথে মতবিনিময়
শরীর তখন অপরিচিত element-কে ধ্বংস করার জন্য নিজে থেকেই সক্রিয় (গরম) হয়ে ওঠে- শরীরের নিজস্ব mechanism এমন তাপ তৈরি করে যেন সেই অপরিচিত element নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়? এটাই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, মানে শরীরের auto system (জীবাণু প্রতিরোধক ব্যবস্থা) হিসেবে জ্বরটা থাকে/ওঠে।
আবার দেখুন- মানবদেহের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সুবহানুতায়ালা কতটা দয়াবান যে, জ্বরের সাময়িক কষ্টের বিনিময়ে গুনাহ মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন! মানে এক জ্বরের উসিলায় দেহ একইসঙ্গে জীবাণুমুক্ত এবং গুনাহ-মুক্ত হতে পারে!
শরীরের জন্য খুব ভালো হবে জ্বরকে যদি তার কর্ম সম্পাদন (জীবাণু ধ্বংস) শেষে স্বাভাবিকভাবে কমে আগের অবস্থানে ফেরত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়। কেননা আমাদের শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থাটি এভাবেই নকশাকৃত (সবচেয়ে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে)।
কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা জ্বরকে শত্রু বিবেচনা করে দ্রুত দমনের প্রাণপন চেষ্টা চালায়। এই কাজে ব্যবহার করা হয় paracetamol গ্রুপের drug। জেনে রাখবেন- chemical-এর তৈরি যত drugs আছে দুনিয়াতে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক হলো এই প্যারাসিটামল!
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল শাক্তা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড কমিটি গঠন
আমরা যদি ড্রাগ সেবন করে জ্বরকে নিয়ন্ত্রণ করি, সেক্ষেত্রে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস না হয়ে শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পেয়ে গেল, একইসঙ্গে গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে হবে!
জ্বর আমাদের পরম বন্ধু- যা কিনা শরীরকে স্থায়ীভাবে জীবাণুমুক্ত করতে সহায়তা করছে, কিন্তু আমরা বোকার মতো বিষাক্ত ড্রাগ সেবন করে, মানে শত্রুকে শরীরে ঢুকিয়ে বন্ধুকে জোরপূর্বক থামানোর চেষ্টা করি! ড্রাগ সেবন করে রোগের লক্ষণকে সাময়িক ধামাচাপা দেওয়া গেলেও নেপথ্য কারণটিকে (সেই সংক্রমণ- এটাকে দমন করতে জ্বর হয়েছে) কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
তাহলে জ্বর হলে কী করবেন ?
প্রথমে গলা পরিস্কার রাখার জন্য গরম পানিতে লবণ দিয়ে গর্গরা করুন দিনে অন্তত ৫/৬বার। গর্গরা করার সময় লালা থেকে ঘন তরল উঠে এলে যতটুকু সম্ভব বের করে দিন। এরপর এক বালতি গরম পানিতে (যে তাপ আপনার পায়ে সহনীয়) টাখনু পর্যন্ত পা ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ৩০ মিনিট। খেয়াল রাখবেন পানিটা যেন ৩০ মিনিট সমান গরম থাকে, সেজন্য পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে আরো কিছুটা গরম পানি মিশিয়ে নেবেন। এতে প্রচুর ঘাম ঝরবে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বর কমে আসবে ইনশাল্লাহ।
আরও পড়ুনঃ আগের রেমিট্যান্স যোদ্ধা পরিবার নেই আমরা, বদলে গেছে এখ্ন, আমরা ঐক্যবদ্ধ পরিবার ৯ কোটি
এর পাশাপাশি সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক ঘণ্টা পরপর হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস আর যৎসামান্য মধু মিশিয়ে পান করতে থাকুন। সঙ্গে যে কোনো সবুজ পাতার (যেমন : তুলসী পাতা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, পেঁপেঁ পাতা ইত্যাদি) রস যুক্ত করতে পারেন।
মুখ দিয়ে সকল প্রকার ভারী খাবার খাওয়া বন্ধ রাখবেন (কেননা রোগাক্রান্ত অবস্থায় খাদ্যগ্রহণ করা মানে রোগের জীবাণুকে খাবার সরবরাহ করার মতো ব্যাপার), তবে কিছু কালোজিরা, আমলকি আর গরম মসলা চিবাতে পারেন; এতে বরং ইমিউন সিস্টেম আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে। সুযোগ থাকলে এনিমা (পায়ুপথে জল ঢুকিয়ে কোলন পরিষ্কার করা) করতে পারেন।
বিশেষভাবে স্মরণে রাখবেন- জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার/থাকার দোহাই দিয়ে কোনো ওয়াক্তের নামাজই ক্বাযা করা যাবে না। একাকী নামাজ আদায় করলে রুকু ও সেজদার সময়কে যথাসম্ভব দীর্ঘায়িত করে আল্লাহ’র কাছে নিজের জ্বর-মুক্তির প্রার্থনা করবেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেও আপনার সুস্থতা কামনায় দোয়া করতে বলবেন। দোয়া ছাড়া অন্য কোনোকিছু আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না!
আরও পড়ুনঃ “আজহার ঘৃণার মুখপাত্র”—না, তোমাদের দাসত্বের আয়নায় ভাঙা সত্যের প্রতিচ্ছবি
নামাজ আদায় ছাড়াও বিশ্রামকালে ওযু অবস্থায় (পবিত্র) থাকতে হবে; ওযুভঙ্গের কারণ ঘটলে পুনরায় ওযু করে নিতে হবে এবং হুঁশ থাকা অবস্থায় ক্রমাগত সূরা ফাতিহা ও সুরা নাস পাঠ করবেন। উপরোক্ত দাওয়া ও দোয়ার পাশাপাশি সুস্থতার বিশেষ নিয়তে দান করতে হবে (প্রতিদিন একজন অভুক্তকে খাওয়াতে পারেন)। কেননা…
দাওয়া + দোয়া + দান = সুস্থতা ফিরে পাওয়া!
শেষ কথা এই যে, এক-দুইদিনের জ্বরের জন্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে যাওয়ার দরকার নাই, এমনকি চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হলেও একগাদা pathological test ধরিয়ে দেবে; তারপর সেই report অনুযায়ী (যন্ত্রের ভাষায়) ডেঙ্গু/চিকুনগুনিয়া/করোনা ইত্যাদির রোগী আখ্যায়িত করে অনেক টাকা খসিয়ে নেবে..!