জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভাবে ফরজ:
আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক (ফরজ)”। (সূত্র: সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ২২৪)!
১. ভূমিকা: ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যেখানে জ্ঞানার্জনকে ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।” এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান নয়, বরং মানবকল্যাণ ও সমাজ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপযোগী জ্ঞান অর্জনের প্রতি আহ্বান।
২. আইন, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দর্শনের আলোকে জ্ঞান অর্জনের বাধ্যবাধকতা বিশ্লেষণ: (ক). আইনগত দিক থেকে: ইসলামী শরীয়তে জ্ঞান অর্জনকে ফরজ বা বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি এমন এক ফরজ যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য (ফরজে আইন)। আল-কুরআনের অনেক আয়াতে আল্লাহ শিক্ষা ও চিন্তাচেতনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন, “তোমরা চিন্তা কর না?” (সূরা আল-বাকারা ২:৭৬)। সুতরাং জ্ঞানার্জন একটি ধর্মীয় ফরজ দায়িত্ব।
(খ). নীতিগত দিক থেকে: যে সমাজ শিক্ষিত, সেই সমাজই ন্যায়, শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়। নীতির মূল ভিত্তি হলো জ্ঞান ও বিচারবোধ। মূর্খ ও জাহেল ব্যক্তি নীতির গুরুত্ব বুঝে না, ফলে সমাজে অনৈতিকতা বাড়ে। জ্ঞান মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ নাসিরনগরে ছাত্রদলনেতা খুনের মামালা,গ্রেফতার হয়নি কোন আসামী
(গ). নৈতিকতার আলোকে: জ্ঞান মানুষকে নৈতিকভাবে সুদৃঢ় করে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের কাজ, আচরণ ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে। তার মধ্যে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকে। তাই ইসলামে জ্ঞানার্জন শুধু তথ্যভিত্তিক নয়, বরং চরিত্র গঠনের মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত।
(ঘ). মূল্যবোধের দিক থেকে: ইসলামে জ্ঞান হলো একটি মূল্যবান রত্ন যা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সমাজে ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ, ও মানবিকতা তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন মানুষের মধ্যে জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়া সঠিক মূল্যবোধ থাকে।
(ঙ). দর্শনের দৃষ্টিতে: ইসলামী দর্শনে জ্ঞান হল আল্লাহর নূর বা আলো। এটি কেবল বাহ্যিক বিষয় নয়, বরং আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যম। হেকমত বা প্রজ্ঞার মূল উৎস হচ্ছে সঠিক ও গভীর জ্ঞান। আল্লাহ বলেন, “যাকে হিকমাহ দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।” (সূরা আল-বাকারা: ২৬৯)!
আরও পড়ুনঃ প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় যশোরের বাগআঁচড়ায় শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ চলছে
৩. জ্ঞানের সাথে কারিগরি জ্ঞান (Technology) এর প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ: (ক). আধুনিক প্রেক্ষাপট: আজকের যুগে শুধুমাত্র ধর্মীয় বা তাত্ত্বিক জ্ঞান যথেষ্ট নয়; কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অপরিহার্য। স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, নিরাপত্তা— প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।
(খ). প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও স্বনির্ভরতা: যে জাতি প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে, তারা কখনো উন্নত হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই যুদ্ধের কৌশল, অস্ত্র নির্মাণ, ব্যবসা ও জ্যোতির্বিদ্যার মতো কারিগরি জ্ঞানকে সমর্থন করেছিলেন। হিজরতকালে পথ চেনার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একজন দক্ষ গাইড ব্যবহার করেছিলেন – এটিও প্রযুক্তি ব্যবহারের নমুনা।
(গ). দীন ও দুনিয়ার সমন্বয়: ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান দ্বিমাত্রিক — দীনী ও দুনিয়াবী। কারিগরি জ্ঞান হলো দুনিয়াবী কল্যাণের বাহন, যা সঠিক নিয়তে ব্যবহার করলে আখিরাতেও সওয়াবের কারণ হয়। যেমন, একজন চিকিৎসক বা প্রকৌশলী যদি মানুষের উপকারের জন্য কাজ করে, তবে তার কর্ম ইবাদতের সমান।
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় আবারো জোড়া খুন সাবেক প্রেমিকা বন্যা আহত: সাবেক প্রেমিক খুনি সৈকত গ্রেফতার
(ঘ). সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন: প্রযুক্তিগত জ্ঞান সামাজিক সমস্যা সমাধানে যেমন সহায়ক, তেমনি উন্নয়ন ও সেবার মানোন্নয়নে অন্যতম হাতিয়ার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও নিরাপত্তা খাতে প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ মানুষের জীবনের মান বাড়ায়।
৪. উপসংহার: একটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে জ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান হচ্ছে আলো, যা অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে। এই আলো শুধু আত্মিক নয়, বরং প্রযুক্তির, বিজ্ঞানের, নীতির, নৈতিকতার এবং মূল্যবোধের আলোকে পরিপূর্ণ। মুসলিম জাতির উচিত হাদীসের এই চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে দীন ও দুনিয়ার জ্ঞানার্জনে নিজেকে সমর্পণ করা। তাহলেই গড়ে উঠবে এক উন্নত, আত্মনির্ভরশীল ও আলোকিত উম্মাহ।
আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন।
(মূসা: ১৮-০৭-২৫)