হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ
এক সময় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিতর্কিত কর্মকর্তা, পরে ২৩ বছর যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপনে, আর এখন দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল দায়িত্বে—জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি ড. খলিলুর রহমান, যিনি পেছনে ফেলে আসা এক গা শিউরে ওঠা ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার সঙ্গে নামজড়ানো ব্যক্তি।
এবার তাঁর নিয়ন্ত্রণে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আর প্রশ্ন উঠছে—এটি কি কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, না কি আরও বড় কোনো অপারেশনের অংশ? খবর আইবিএননিউজক্ পাঠানো তথ্য ।২০০১ সালের আগস্ট। রাজধানীর নীলক্ষেতে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রটোকল অফিসার আয়েশা আফসারী নিহত হন স্বামী জহিরুল ইসলামের গুলিতে। পরে জহিরুল আত্মহত্যা করেন। প্রথমে ঘটনাটি পারিবারিক কলহ হিসেবে তুলে ধরা হলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এক সত্য—আয়েশা ছিলেন ধর্ষণের শিকার। ধর্ষক, আর কেউ নন—প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের ভায়রাভাই এবং তাঁর দপ্তরের পিএস-১ খলিলুর রহমান।
প্রলোভনের মাধ্যমে নিউইয়র্কে পোস্টিং, সেখানে যৌন নির্যাতন, স্বামীর মানসিক বিপর্যয় এবং শেষ পর্যন্ত এক জোড়া প্রাণের মর্মান্তিক পরিণতি—এই ভয়ঙ্কর গল্পটি চাপা পড়ে যায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, খলিলুর রহমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর, আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিচয় পাল্টে হন ‘রজার রহমান’। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড—বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মনামে অবস্থান করেন। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন যুক্তরাষ্ট্রে, নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে প্রাণনাশের শঙ্কার কথা বলেন। অথচ আসল সত্য ছিল—নিজের অপরাধ আড়াল করে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা।
ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই খলিলুর রহমান ছিলেন শেয়ারহোল্ডার। এ ক্ষেত্রে তার স্ত্রী নুরুন্নাহার রহমানকে নমিনি করা হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হওয়ার পর খলিল এই হত্যার আসামী স্ত্রীকে ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য করার মাধ্যমে তাঁর প্রভাব বিস্তার আরো গভীর করেছেন। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির নিয়ন্ত্রণ যেন তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়—এটাই লক্ষ্য।
ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারও তাঁর কৌশলের অংশ। বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের অর্থ শুধু জ্ঞান নয়, তরুণ সমাজ, অর্থ ও বিদেশি প্রভাবকেও নিয়ন্ত্রণ করা।
উল্লেখযোগ্য, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে অগ্রভাগে ছিল ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিপথগামী কিছু শিক্ষার্থী, যাদের অর্থ যোগান দিয়েছিলেন খলিলুর রহমান।
আশ্চর্যের বিষয়, ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান এই খলিল। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা বিষয়ক পরামর্শকের দায়িত্বও তাঁর হাতে।
প্রশ্ন উঠছে—যে ব্যক্তি ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত, আত্মগোপনে ছিল দুই দশক, ছদ্মনামে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়, সে কীভাবে আবার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে আসীন হয়?
আরও বড় প্রশ্ন—এই নিয়োগে কি রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির ছায়া? তাঁর অতীতও প্রশ্নবিদ্ধ—গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ সুদের দায়ে বহু আত্মহত্যা, বিদেশি কোম্পানির হাতে নীতিনির্ধারণ ক্ষমতা তুলে দেওয়া।
আরও পড়ুনঃ গ্রাহকদের কোটি টাকা আত্মসাৎ মিটার রিডার মুক্তার গ্রেপ্তার
একজন ধর্ষকের ছদ্মবেশে ফিরে এসে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অভিবাসন নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় নীতিতে আধিপত্য বিস্তার কেবল নৈতিক অবক্ষয়ের উদাহরণ নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ধ্বংসের সূক্ষ্ম নকশা।
একজন নাগরিক যদি বৈধভাবেই দ্বিতীয় দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন, তবে তা প্রকাশে অসুবিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু ২৬ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, ফেসবুকে পরিচয় লুকিয়ে রাখা এবং এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে নীরবতা—সব মিলিয়ে বিষয়টি ঘনীভূত রহস্যের রূপ নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, যদি সত্যিই রজার ও খলিল একই ব্যক্তি হন, তবে তার মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির এই গোপনীয়তা কি রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?
সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ইতিমধ্যেই ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব গোপন করেন, তবে তা শুধু আইনি নয়, নৈতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ।