হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ
জোহরান মামদানির বিপুল ভোটে বিজয় আমেরিকার কয়েক পক্ষের মানুষের হৃদয় চুরমার করে দিয়েছে বলে তাদের কথাবার্তা ও মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। এটা নিয়ে অনেকেই আনন্দিত, অনেকে আবার ক্ষুব্ধ। তবে এটা স্বাভাবিক।
কারণ আমেরিকার এই বিরূপ সময়ে একেবারে মূলধারার রাজনীতির বিপরীত ে¯্রাতের একজন ইমিগ্রান্ট এমন বিজয় ছিনিয়ে আনলে অন্যের তা মাথাব্যথার কারণ হতেই পারে, যদিও তা প্রত্যাশিত নয়।
কারণ তারা যদি এদেশের সংবিধান ভালোভাবে পড়তেন তাহলে বুঝতেন আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারগণ যেভাবে এই দলিলটি তৈরি করেছিলেন এবং পরবতীর্ পর্যায়ে আড়াইশ বছরে যে কয়েকটি সংশোধনীর মাধ্যমে তা উজ্জ্বলতর করা হয়েছে, সেখানে সকলকে সমান হিসাবে আখ্যায়িত করার উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ব্রুকলীন পাওয়ার ১০০এ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সিটি কাউন্সিল সদস্য শাহানা
কার গায়ের রং কেমন, কার কি ধর্ম, কে কোন দেশ থেকে এসেছে এসব নির্বিশেষে সকলের প্রথম পরিচয় তারা মানুষ এবং আমেরিকায় বসবাস করে। কে কেমন পোশাক পরল, কার ধমীর্য় লেবাস কী, কে কোন্ ভাষায় ঘরে কথা বলে বা কে কোন্ পদ্ধতিতে খায় এটা প্রত্যেকের নিজস্ব রুচি ও ইচ্ছা। এই অজুহাতে কাউকে সমালোচনা করা বা কটাক্ষ করার অধিকার কারো নেই।খবর আইবিএননিউজ।
জোহরান মামদানি উগান্ডার পিতা এবং ভারতীয় মায়ের পুত্র। তার বাবা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আর মা অস্কার নমিনেশন পাওয়া ছবির পরিচালক। দুজনেই পড়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। এমন এক পরিবারের সন্তান মামদানির প্রথম যোগ্যতা তিনি মানুষকে ভালোবাসেন, মানুষকে ছোট—বড় হিসাবে বিভাজন করেননি।
তিনি ডাউন টু আর্থ, নিরহংকারী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তরুণ। বয়স মাত্র ৩৩ বছর। কুইন্স থেকে নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলিম্যান পদে প্রথম চেষ্টাতেই জিতেছেন। আর নিউইয়র্ক সিটির মত বহুধাবিভক্ত সিটির মেয়র পদে মনোনয়ন যুদ্ধে সাবেক তিন মেয়াদের গভর্নর এবং ক্লিনটন প্রশাসনের সাবেক সেক্রেটারি এ্যান্ড্রু কোমোর মত হাই প্রোফাইলের প্রার্থীকে অনেক পিছনে ফেলেছেন।
জনগণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুল করে না বলেই গণতন্ত্রের মূল শক্তি জনগণ। মুড়ি—মুড়কির মত অর্থ ছড়িয়ে নয়, গ্রাসরুট লেভেলের স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। বিপরীত ে¯্রাতে উজান পাড়ি দিতে হয়েছে।
তবু র্যাংকড চয়েস ভোটে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ২০২১ সালে র্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতি চালু হলে মেয়রের মনোনয়ন পেতে সময় লাগে। নির্বাচনের দিন শেষ রাতে এরিক এডামসের সমর্থকরা নিশ্চিত হতে পারেনি তিনি মনোনয়ন যুদ্ধে জয়ী কিনা। কিন্তু জোহরান সহজেই জয় পেয়েছেন।
জোহরান মামদানি সোশালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে কম্যুনিস্ট বলেছেন। কয়েকজন কট্টরপন্থী রিপাবলিকান তাকে কটাক্ষ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও নির্বাচিত হওয়ার পর এসব কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছিল।
আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজকে আজও ক্রমাগত সহ্য করতে হয়। সহ্য করতে হয় মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর আর মিশিগান থেকে নির্বাচিত রাশিদা তস্নাইবকে। লন্ডনে সাদিক খান মেয়র নির্বাচিত হলেও একই রকম মন্তব্য গিয়েছিল আমেরিকা থেকে।
আরও পড়ুনঃ ভালুকায় র্যাব-১৪ এর অভিযানে ২৬০ গ্রাম হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
প্রাইমারির আগে জোহরান মামদানি যতটা জনপ্রিয় ছিলেন নিউইয়র্কে, প্রাইমারিতে জয়ের পরে তিনি আরো জনপ্রিয় বলে মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রক্ষণশীল সংবাদপত্র নিউইয়র্ক পোস্ট বলছে, ৪ নভেম্বরের মূল নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ইনডিপেনডেন্ট প্রার্থী এ্যান্ড্রু কোমো, এরিক এডামস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী সিলওয়া কার্টিসকে সহজেই হারাবেন জোহরান মামদানি।
‘আমেরিকান পালস’ নামক প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনউত্তর সমীক্ষণে দেখা গেছে জেনারেল নির্বাচনে মামদানি পাবেন ৩৪.৪%, কোমো ২৯.৫%, সিলওয়া কার্টিস ১৬% আর এরিক এডামস পাবেন ১৪% ভোট।
একই সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬২% ভোটার এরিক এডামসকে অপছন্দের প্রার্থী বলেছেন, আর একই কথা বলেন ৫২% ভোটার এ্যান্ড্রু কোমো সম্পর্কে। পক্ষান্তেওর ৪৭% জোহরান মামদানিকে পছন্দ করার কথা বললেও মাত্র ৪২% জানিয়েছে তাকে অপছন্দের কথা।