শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলের আনুগত্য, এবং উলিল আমরের আনুগত্য (৪:৫৯):

Reporter Name / ৯ Time View
Update : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ

*আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলের আনুগত্য, এবং উলিল আমরের আনুগত্য (৪:৫৯):*

_উলিল আমরের আনুগত্য, দ্বন্দ্ব না সমন্বয়:_

_ভূমিকা:_ ইসলামের মৌলিক আহ্বান হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য। সেইসাথে কুরআন নির্দেশ দিয়েছে, “উলিল আমর” অর্থাৎ নেতৃত্ব বা দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও মান্য করতে।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, উলিল আমর বলতে কি মাজহাবের ইমামদের বোঝানো হয়? আর কুরআন-সুন্নাহর সাথে মাজহাব কি সাংঘর্ষিক, না সহমর্মী? এই প্রবন্ধে আমরা সেই দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের বিশ্লেষণ করব।

*১. উলিল আমর কি মাজহাব অন্তর্ভুক্ত করে;*

সংক্ষেপে উত্তর: হ্যাঁ, নির্দিষ্ট অর্থে অন্তর্ভুক্ত করে, তবে শর্তসহ; বিশ্লেষণ:

_১.১ উলিল আমর বলতে কাদের বোঝানো হয়?:_ কুরআন ও তাফসীরকারীরা “উলিল আমর” বলতে বোঝান: (ক). রাষ্ট্রীয় নেতা বা শাসক; (খ). বিচারক; (গ). সেনাপতি; (ঘ). ইলমের অধিকারী আলেম ও ফকীহগণ (বিশেষজ্ঞ)।

ইমাম নববী (রাহি.) বলেছেন: “উলিল আমর অর্থ শুধু শাসক নয়, বরং আলেম, ফকীহ, মুফতী, মুজতাহিদ সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত”। (শরহ মুসলিম)!

অর্থাৎ, ফকীহদের (যেমন, মাজহাবের ইমামদের) ব্যাখ্যাও “উলিল আমর”-এর অংশ, কারণ তারা শরীয়ত বোঝার দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা করলে তাদের ফতোয়া মানা বৈধ নয়।

_১.২ মাজহাব উলিল আমরের মধ্যে কেন পড়ে?:_ কারণ: মাজহাবের ইমামরা ফকীহ ও মুজতাহিদ। তারা উলিল আমরের মধ্যে পড়েন ইলমের ক্ষেত্রে।

সাধারণ মুসলিমের পক্ষে সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আইন নির্ধারণ সম্ভব নয়। তাই তারা আলেমদের অনুসরণ করে। মাজহাব মানা মানে উলিল আমরের ইলমী ব্যাখ্যা গ্রহণ করা।

_১.৩ কিন্তু শর্ত আছে:_ উলিল আমরের আনুগত্য কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী হলে বৈধ নয়। কোনো মাজহাবের ফতোয়া স্পষ্ট দলীলের বিপরীতে প্রমাণিত হলে সেটি গ্রহণ করা যাবে না।

অর্থাৎ, মাজহাবের ইমামগণ উলিল আমর হিসেবে সম্মানিত, কিন্তু তাদের ফতোয়া অন্ধভাবে মানা যায় না।

_১.৪ সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়:_ হ্যাঁ, মাজহাবের ইমামগণ উলিল আমরের অন্তর্ভুক্ত, কারণ তাঁরা দ্বীনের ইলম, ফিকহ ও ফতোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত।

কিন্তু উলিল আমরের আনুগত্য শর্তসাপেক্ষ। যেমন আয়াতেই বলা হয়েছে: “যদি কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ হয়, তাহলে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে তা ফিরিয়ে দাও…” (৪:৫৯)! অর্থাৎ, মাজহাবের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা যাবে কুরআন ও সুন্নাহর চূড়ান্ত মানদণ্ডে।

_১.৫ সংক্ষিপ্ত উপসংহার:_ মাজহাবের ইমামরা উলিল আমরের অন্তর্ভুক্ত, তবে শর্ত হলো কুরআন-সুন্নাহর বিরোধিতা না করা। মাজহাব মানা দ্বীনের সহায়ক, বিরোধ নয়। সঠিক সমন্বয়ই ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ পথ।

*২. আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলের আনুগত্য, এবং উলিল আমরের আনুগত্য (৪:৫৯):*

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী (উলিল আমর) তাদেরও (৪:৫৯)!”

_২.১ এখানে তিন স্তরের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে:_ _(ক). আল্লাহর আনুগত্য:_ সরাসরি কুরআন মেনে চলা।

_(খ). রাসূলের আনুগত্য:_ রাসূলের নির্দেশ, বাণী, কর্মপদ্ধতি (সুন্নাহ) অনুসরণ।

_(গ). উলিল আমর-এর আনুগত্য:_ মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব, বিশেষজ্ঞ বা ফকীহদের সিদ্ধান্ত, যেটি কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী না হয় ।

_২.২ রাসূলের হাদীস (বিদায় হজ্জ):_ “আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি; তোমরা যদি সেগুলোর উপর দৃঢ়ভাবে উপস্থিত থাকো, তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না – আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার সুন্নাহ (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক।”

_২.৩ এই হাদীসের স্পষ্ট বার্তা – দ্বীনের মুল উৎস দুইটি:_ (ক). কুরআন এবং (খ). সুন্নাহ।

*৩. মাজহাব (হানাফি, মালেকি, শাফিঈ, হাম্বলি):*

মাজহাব মূলত ফিকহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্রের বিভিন্ন স্কুল। এর মধ্যে: হানাফি, মালেকি, শাফিঈ এবং হাম্বলি

এঁরা কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই আহকাম (আইন, বিধান) বের করেছেন। কিন্তু তাদের ব্যাখ্যা, ইজতিহাদ ও পদ্ধতিতে কিছু ভিন্নতা আছে। ফলে মাজহাবগুলোতে কিছু পার্থক্য দেখা যায়, যদিও মূল উৎস একই।

*৪. কুরআন-সুন্নাহ এবং উলিল আমর হিসেবে মাজহাব কি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত না কি সাংঘর্ষিক:*

_৪.১ মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক নয়, কারণ:_ (ক). কুরআন ও সুন্নাহই ইসলামের মূল উৎস। (খ). মাজহাব সেই উৎস থেকেই আইন, বিধান, ফতোয়া নির্ধারণ করেছে। (গ). মাজহাব হলো কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের পদ্ধতিগত কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা।

_৪.২ কেন এই বিতর্ক:_ কেউ কেউ মনে করেন, সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ মেনে চলতে হবে, মাজহাবের ব্যাখ্যা ছাড়াই।

আবার অনেকেই মনে করেন, সাধারণ মানুষের পক্ষে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে আইন বের করা সম্ভব নয়, তাই গবেষক আলেমদের, ফকীহদের, বা মাজহাবের ইমামদের ব্যাখ্যা অনুসরণ জরুরি।

*৫. মাজহাব তো কুরআন ও সুন্নাহর কথাই বলে; তবে বিতর্ক কেন?* বিতর্কের মূল কারণ কয়েকটি:

_৫.১ ভিন্ন ইজতিহাদ ও কিয়াসের পদ্ধতি:_ এক ইমাম বলেন, “অমুক আয়াতের মানে এভাবে।” অন্য ইমাম বলেন, “না, ওভাবে নয়, এভাবে। যেমন: হাত বেঁধে নামাজ পড়া কি বুকের উপর, না পেটের উপরে, নাকি নাভির নিচে? – কুরআনে সরাসরি নেই, সুন্নাহ থেকে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই মাজহাবের মধ্যে মতপার্থক্য।

_৫.২ সাধারণ মানুষের যোগ্যতা:_ সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে বিধান বের করতে কুরআনের ইলম, আরবি ভাষাজ্ঞান, উসূলুল হাদীস, উসূলুল ফিকহের জ্ঞান দরকার। তাই ফকীহদের ব্যাখ্যা অনেকেই নিরাপদ মনে করেন।

_৫.৩ মাজহাবীয় গোঁড়ামি:_ (তাসাব্বু‘ আল মাজাহিব), অনেক স্থানে মাজহাব মানা হয়ে থাকে অন্ধ আনুগত্যে, যা সমস্যা তৈরি করে।

প্রকৃতপক্ষে মাজহাব মানে “ইমামদের ব্যাখ্যা গ্রহণ,” কিন্তু কোনো ইমামই বলেননি: “আমার মত ভুলহীন, কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতে হলেও আমাকে মানতে হবে।” বরং বলেছেন: “যদি হাদীস সহীহ প্রমাণিত হয়, সেটিই আমার মাজহাব (আবু হানিফা)।”

আরও পড়ুনঃ গজারিয়ায় দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক নিহত

*৬. কিভাবে সমন্বয় করা হবে:*

কুরআন-সুন্নাহ প্রাইমারি ও মূল এবং মাজহাব সেকেন্ডারি, ব্যাখ্যা। সমন্বয় এভাবে:

_৬.১ মূল নীতি ধরতে হবে:_ আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহই মূল।

_৬.২ মাজহাবকে গুরুত্ব দিতে হবে, অন্ধভাবে নয়:_ সাধারণ মানুষের জন্য মাজহাবের ব্যাখ্যা নিরাপদ। তবে যদি কোনো মাজহাবের মত কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট নির্দেশের বিপরীতে প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি বাদ দিতে হবে।

_৬.৩ মাজহাবের পার্থক্যকে সহনীয়ভাবে দেখা:_ পার্থক্য মানেই শত্রুতা নয়। এটি ইলমের সৌন্দর্য। “আমার উম্মতের মধ্যে মতভিন্নতা রহমত।” (যদিও এই হাদীসের সনদ দুর্বল, কিন্তু অর্থ গ্রহণযোগ্য)! মতভিন্নতা সবসময় ছিল!

_৬.৪ গোঁড়ামি এড়িয়ে চলা:_ নিজের মাজহাবকে “একমাত্র সত্য” দাবি করা উচিত নয়।

_৬.৫ যার পক্ষে সামর্থ্য আছে, সে তুলনা করবে:_ যদি কেউ কুরআন, সুন্নাহ ও হাদীসের ইলম অর্জন করে, উসূলুল ফিকহ শিখে, তাহলে মাজহাবের বাইরে গিয়ে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে দলীল নিতে পারে। তবে শর্ত – নিজের খেয়াল বা পছন্দ নয়, সঠিক ইলমের ভিত্তিতে।

*৭. উপসংহার:*

_৭.১ কুরআন-সুন্নাহ এবং মাজহাব:_ এই তিনটি কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নয়। (ক). কুরআন-সুন্নাহই মূল উৎস। (খ). মাজহাব সেই উৎসের ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগের পদ্ধতি।

_৭.২ বিভ্রান্তি কোথায়:_ তবে বিভ্রান্তি তখন হয়, যখন (ক). কেউ বলে মাজহাব মানতেই হবে, ফলে মাজহাবকে কুরআন ও সুন্নাহর উপরে স্থান দেয় অথবা (খ). কেউ বলে “মাজহাব মানতে হবে না” এবং সে নিজে ইজতিহাদ করতে গিয়ে ভুল পথে যায়।

_৭.৩ সঠিক সমন্বয় হলো:_ “মানতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ”, আর “মাজহাব হবে সেই কুরআন-সুন্নাহ বোঝার এবং প্রয়োগের সহজ মাধ্যম”, তবে কোনভাবেই অন্ধ অনুসরণ নয়।

এভাবেই দ্বীনের পথে ভারসাম্য থাকবে, উম্মতের মধ্যে ঐক্যও বজায় থাকবে।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ০৪-০৭-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category