মাসুদ রানাঃ
আমার জুলাই ২০২২ সালের শেষ দিকে হঠাৎ প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসি
কর্ম জীবন শুরু করি উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ আনন্দময় জীবন চলছিল।
১১ জুলাই ঢাকায় একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য কল করা হয় ১০ জুলাই রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে নববধূ রেখে প্রথম বাড়ি থেকে দূরে কোথাও সফর করি।
ঐদিন রাতে গণ অধিকার পরিষদের সহযোদ্ধা সোহরাব হোসেন ভাইয়ের মেসে এক সাথে রাত যাপন করি যদিও আড্ডায় রাত কাটে ঐ দিকে কত বার যে নববধূ কল করে খুঁজ নিয়েছিল হিসাব নাই।
পর দিন ১১ জুলাই দুপুর ১ টায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য টেলিভিশন চ্যানেলের স্টুডিওতে প্রবেশ করি দীর্ঘ এক ঘটনা জীবনের গল্প রেকর্ড হয় তিন পূর্বে সেই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।
আরও পড়ুনঃ স্মরণীয় জুলাই,২৪
অনুষ্ঠানের নাম ছিল প্রবাস জীবনের গল্প। গণ অধিকার পরিষদের ভিপি নুরুল হক নূর সহ কেন্দ্রীয় অনেকের সাথে সেই দিন দেখা করার ইচ্ছা ছিল।
ভিপি কল দিলাম সে একটা মিটিংয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন ফি হয়ে পরে রবিউল সাহেব কল দিয়ে বলেন মাসুদ ভাই আসেন অফিসে ভিপি আপনার সাথে কথা বলবেন।
এর ফাঁকে জামান টাউরে গণ অধিকার পরিষদের তারেক ভাইয়ের অফিসে চলে গেলাম গিয়ে দেখি সজল, আবদুল্লাহ আল হোসাইন, মোল্লা রহমত উল্লাহ,মধু ভাই,সবাই অফিসে আড্ডা দিচ্ছেন সবার সাথে প্রথম দেখা।
আড্ডা দিচ্ছিলাম আর ফেসবুকে নিউজ দেখছিলাম হঠাৎ দেখি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ গুলি করছে একটা পেইজ থেকে লাইভ হচ্ছিল।
আমি সাথে সাথে তারেক ভাইকে ঘটনাটা শেয়ার করি আমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা দেখলেন।
সজল মোল্লা রহমত উল্লাহ কল পেয়ে হঠাৎ অফিস থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
কিছু সময় পর তারেক ভাই আমাকে বলেন মাসুদ ভাই চলেন শাহবাগ যাব যাবেন কি.!
সাথে সাথে তারেক ভাইকে বলি এই আন্দোলন কিন্তু হাসিনার পতন আন্দোলন শুরু হলো চলেন বীজ বপন করি ।
কিছু লেখার জন্য খুঁজতে থাকি কলম আর সাদা কাগজ একটা প্রিন্টিং পেজ থেকে কিছু সাদা রঙের কাগজ সংগ্রহ করি আর একটা লাইব্রেরী থেকে কয়েকটি কলম নিয়ে পল্টন থেকে রিক্সায় সরাসরি শাহবাগ মোড়ে চলে আসি।
তারেক ভাই রাস্তায় বসে ভিন্ন স্লোগান লিখতে থাকেন পাশেই গোয়েন্দা সংস্থার আনাগোনা শুরু হলো আমি বিষয়টা তারেক ভাইকে ইশা দিয়ে বলি।
প্রথম আমাকে একটা স্লোগান লিখে দেন “দাদার কোটা নাতির খোঁটা মানবে না ছাত্র সমাজ “।
দেখা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদের বিপ্লবী নেতা মুনতাসির মাহমুদের সাথে দারুন লাগছিল চার দিক থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্র জনতা এক হতে থাকেন।
চলতে থাকে আন্দোলন সন্ধ্যয় শাহবাগ মোড় থেকে ময়মনসিংহ উদ্দেশে রওনা দিলাম এর আগে তারেক ভাই সহ সবাইকে বলার চেষ্টা করি এই আন্দোলন যেন চূরন্ত আন্দোলনে রূপ ধারণ করে।
শুরু হলো ময়মনসিংহ জেলা সহ সারাদেশে ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন জুলাই বিপ্লবে প্রতিদিন ময়মনসিংহ শহরে চলে যেতাম মুক্তির চুরন্ত মিছিলে।
নববধূ প্রচুর ভয় পেয়ে যান মিছিলে যাওয়া সময় দুই পায়ে জড়িয়ে বলতেন আমার গর্বে তোমার নবগত সন্তান তোমার যদি কিছু হয় আমার জন্য না তোমার সন্তানের জন্য
পায়ে পরি সেই সময়টায় মাথায় শুধু আন্দোলন কাজ করত চোখ বন্ধ করে পা থেকে মেহনতি রাংঙা নববধূর দুই হাত সরিয়ে বলতাম আমার সন্তান জন্ম গ্রহণের পর যদি জানতে পারে তরুণ ওরা জন্য জীবন দিয়েছিল আর আমি বেইমান আর বিড়ালের মত ঘরে বাসে ছিলাম তখন আমি আমার সন্তানের কাছে মুখ দেখাব কি করে.!?
বিবেকের তাড়নায় দেশের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিদিন ময়মনসিংহ শহরে মিছিলে যোগ দিতাম। সব শেষ ৩ ই আগষ্ট অসহযোগ আন্দোলনে এলাকার ছাত্র জনতাকে মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান করি।
মরে গেলে লাশটা নিয়ে গণভবনে যাবেন……….