নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কোনাবাড়ীর বাইমাইল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন ভোর হতেই ভিড় জমে যায় শত শত গরু-ছাগলের ব্যবসায়ীদের। চারদিক থেকে আসা গরুর চিৎকার, দালালদের হাকডাক, আর দামদরের হইচইয়ে গমগম করছে পুরো এলাকা। কিন্তু এই জমজমাট পশুর হাটটির পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ানক বাস্তবতা—এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
সরকারি অনুমোদন বা ইজারা ছাড়াই বসানো হয়েছে এই বিশাল হাট, যার ফলে সরকারের রাজস্ব খাত থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব। অভিযোগ উঠেছে, এ হাট পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা, যাদের প্রভাব এতটাই শক্তিশালী যে, প্রশাসনও চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
“মুখে তারা অনেক কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরু বিক্রেতা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “মুখে তারা অনেক কথা বলে, নিয়মের কথা বলে, কিন্তু এখানে কোনো নিয়ম নেই। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসেছি গরু বিক্রি করতে। কিন্তু এখানে নেই সঠিক দাম, নেই নিরাপত্তা, নেই স্বাস্থ্যবিধি। শুধু আছে চাঁদাবাজি আর ভয়ভীতি। পরিবেশটা এতই নোংরা আর বিশৃঙ্খল যে এখানে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।”
“এটি একটি অবৈধ হাট, আমরা কোনো অনুমতি দেইনি” — গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ ‘দৈনিক সময়ের কথা’-কে মুঠোফোনে জানান, “এই হাটটি আমরা কোনোভাবেই ইজারা দেইনি। এটি অবৈধ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
বিএনপি নেতাদের প্রভাব, প্রশাসনের নীরবতা স্থানীয়দের অভিযোগ, হাটটি মূলত পরিচালনা করছেন এক মোঃ সালাউদ্দিন নামের ব্যক্তি, যিনি বিএনপি’র ঘনিষ্ঠ। তাঁর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আরও একাধিক বিএনপি নেতা ও কর্মী। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের চাপে চুপ রয়েছে বলে জানা গেছে। ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সালাউদ্দিনকে পাওয়া যায়নি।
“এভাবে চললে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো গাজীপুর শহর” এলাকাবাসী বলছেন, প্রতি বছর সরকার কোরবানির মৌসুমে পশুর হাট থেকে যে বিপুল রাজস্ব আদায় করে, এই অবৈধ হাট তার এক বিরাট অংশ কেড়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনিয়ন্ত্রিত এই হাট ব্যবসায়ীদের জন্য হয়ে উঠেছে এক দুঃস্বপ্ন। চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভোগান্তির শেষ নেই।
জনদাবি: অবিলম্বে তদন্ত ও ব্যবস্থা নিন! এলাকাবাসী ও গরু ব্যবসায়ীরা একবাক্যে বলছেন—এভাবে চলতে পারে না। অবৈধ হাটের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা। সরকারের উচিত হাটটি বন্ধ করে আইনের আওতায় আনা, যাতে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় জনগণ ও সরকার—দু’পক্ষই উপকৃত হয়।