ডেস্ক রিপোর্টঃ
ড. আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমদ উয়েসী রিফায়ী (রহ.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, সুফি সাধক, গবেষক, লেখক ও সমাজসেবক। তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলা ও বিশ্ব মুসলিম সমাজে সুন্নি আকিদা, তাসাউফ এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
—
🧬 জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি
ড. মানযূর আহমদ রিফায়ী (রহ.) ১৯৪২ সালের ২৮ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রহ.), একজন খ্যাতিমান সুফি সাধক। তাঁদের পূর্বপুরুষরা আরব দেশ থেকে দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে হিজরত করে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার ফরাজীকান্দী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন ।
—
🎓 শিক্ষা ও ভাষাজ্ঞান
তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে মুমতাযুল মুহাদ্দিস ও মুমতাযুল ফুকাহা উপাধি অর্জন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স ও মাস্টার্স (প্রথম শ্রেণিতে) সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন এবং “ইমাম বাহাউদ্দীন নকশবন্দি ও নকশবন্দিয়া তরিকা” শীর্ষক উচ্চতর গবেষণামূলক থিসিস রচনা করেন। তিনি বাংলা, আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি ও হিন্দি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন ।
—
🕌 ধর্মীয় ও সামাজিক অবদান
১৯৬৪ সালে পিতার ইন্তেকালের পর তিনি ফরাজীকান্দী উয়েসীয়া শরীফের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ৪৮ বছর ধরে তা পরিচালনা করেন। তিনি ঢাকায় “শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন, যা ঢাকার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। তাঁর নেতৃত্বে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইয়াতিমখানা, হেফজখানা, মসজিদ, মহিলা মাদ্রাসা, পাঠাগার, চিকিৎসা কেন্দ্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয় ।
—
📚 সাহিত্য ও গবেষণা
তিনি বাংলা ভাষায় নবীপ্রেমে নিবেদিত অসংখ্য ক্বাসিদা রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:
পরশ মনি
আশিক্বী ১ ও আশিক্বী ২ (দুই খণ্ড)
আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান (ইলমে তাসাউফ বিষয়ক)
—
🕋 খিলাফত ও তরিকাগত সংযোগ
তিনি বিভিন্ন তরিকায় খিলাফতপ্রাপ্ত হন, যার মধ্যে রয়েছে:
★ক্বাদেরিয়া
★ চিশতিয়া
★ নক্শবন্দী
★ শাজুলিয়া
★ রিফায়িয়া
★ সাম্মানিয়া
★ তিযানিয়া
তিনি বাংলাদেশের রিফায়িয়া তরিকার প্রথম খলিফা হিসেবে পরিচিত ।
—
🌍 আন্তর্জাতিক সফর
তিনি প্রায় ১৩টি দেশ ভ্রমণ করেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে আমেরিকার শিকাগোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ঈদে মিলাদুন্নবী সম্মেলনে তিনি বাংলায় স্বরচিত ক্বাসিদা পাঠ করে বাংলা ভাষার মর্যাদা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেন ।
—
🏅 সম্মাননা ও পুরস্কার
১৯৭৮ সালে কুমিল্লা ফাউন্ডেশন কর্তৃক “স্বর্ণপদক” লাভ
১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে স্বীকৃতি
২০১৫ সালে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইসলামী ছাত্র সেনা কর্তৃক মরণোত্তর সম্মাননা ।
—
🕯️ ইন্তেকাল
২০১২ সালের ১ অক্টোবর (১৫ জিলক্বদ) মদিনা শরীফে তিনি ইন্তেকাল করেন। মসজিদে নববীতে জানাজা শেষে তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয় ।
copy post