নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সমঅধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের নিকট আবেদন জানিয়েছে ১২৩টি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট।
আবেদনপত্রটি প্রেরণ করেন বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টির সভাপতি ও জোট মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মোঃ মেহেদী হাসান এবং গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তির চেয়ারম্যান ও জোট প্রধান ভক্টর আব্দুল মালেক ফরাজী।
জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো আবেদনপত্রে বলা হয়, গত ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট আত্মপ্রকাশ করে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা বহু বছর ধরে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থেকেও এখনো নিবন্ধন পায়নি, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জোট গঠন করেছে।
আবেদনে জোটের নেতারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন বিদ্যমান Representation of the People Order (RPO) 2008 অনুসারে কঠোর ও বৈষম্যমূলক শর্ত আরোপ করে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে জটিল ও প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। তারা বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন করলেও কমিশন আমাদের দলগুলোকে অজানা কারণে উপেক্ষা করেছে। এ আচরণ গণতন্ত্রের পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক অধিকার হরণের সামিল।
জোটের উত্থাপিত দাবিসমূহ
প্রথমত, সকল আবেদনকৃত রাজনৈতিক দলকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন প্রদান এবং পরবর্তীতে শর্ত পূরণের ভিত্তিতে সাময়িক ও স্থায়ী নিবন্ধন প্রদানের দাবি জানানো হয়।
দ্বিতীয়ত, নিবন্ধনের শর্ত সহজীকরণ করে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি, গঠনতন্ত্র ও অফিসের ঠিকানা প্রদর্শনকেই যথেষ্ট বলে বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়। নিবন্ধন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে।
তৃতীয়ত, ২০০৮ সালের আইন অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটি, ১০০টি উপজেলা কমিটি, অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র এবং ২০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরসংক্রান্ত শর্তকে অযৌক্তিক ও গণতন্ত্রবিরোধী উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
চতুর্থত, আবেদিত ১২৩টি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
পঞ্চমত, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান শর্ত ও অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই জোটের জন্ম।
জোটের নেতারা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো নাগরিক বা দলকে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। আমরা গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ চাই, যেখানে প্রত্যেক দল নিজের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
জোটের নেতারা আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং সংবিধান ও জনগণের মৌলিক অধিকারের আলোকে নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করবে। তারা বলেন, গণতন্ত্রের প্রাণ হলো বহুদলীয় অংশগ্রহণ। তাই সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।
আবেদনের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।