শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

নিউইয়র্কে সাপ্তাহিক বাজ্ঞালীর বিশেষ সম্পাদকীয়-একজন অরিজিনাল ও সাহসী নেতা

Reporter Name / ১১ Time View
Update : সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ
জোহরান মামদানি সুদর্শন। তার হাসির মূল্য অপরিসীম। হয়ত সেই চেহারা এবং হাসি দিয়েই তিনি ভুবন ভুলাতে পারতেন। কিন্তু তাঁর সম্পদ তাঁর মেধা, তাঁর সাহস এবং কথা বলার অসাধারণ বাগ্মীতা। যা বলেন সরাসরি বলেন। রাজনীতিক বা জনগণের সেবক হতে হলে এইভাবেই তাকাতে হয়, বলতে হয়। তার ফল পাওয়ার সূচনা হলো মঙ্গলবার রাতে তার জয় এবং জয়উত্তর বক্তৃতায়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর বারাক ওবামা শিকাগোতে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার সাথে এই বক্তৃতার পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি হলো জোহরান মামদানির বক্তৃতায় ফুটে উঠেছে প্রচন্ড শক্তি। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি। একটি বিশাল শক্তিকে মোকাবেলা করার শক্তি।
জোহরান মামদানি আকস্মিক মঙ্গলবার রাতে হয়ে উঠলেন কোটি কোটি আমেরিকাবাসীর আশার প্রতীক। অবলম্বন।
নিউজার্সি গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী মাইকি শেরিলের প্রচারণায় আগের সপ্তাহে ভাষণ দিতে গিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বললেন, একজন মানুষ আইনের উর্ধে চলে গেছেন। তার দলের ডাকসাইটে নেতারা পর্যন্ত তার বল্গাহারা আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলছে না। এমন কি সুপ্রিম কোর্টও নয়।
বারাক ওবামা আমেরিকায় স্টক মার্কেট ক্রাশ হওয়া, ব্যাংক সেক্টরে অরাজকতা এবং মর্গেজ নিয়ে জালিয়াতির কারণে ভেঙেপড়া অর্থনীতির পুরো বোঝা মাথায় নিয়ে শপথ গ্রহণ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট হিসাবে। খুব দ্রুততম সময়ে তিনি এদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছিলেন। দাঁড়িয়েছিলেন ইমিগ্রান্টদের পাশে। পাশ করেছিলেন যুগান্তকারী এ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এ্যাক্ট (ওবামা কেয়ার)। আজকের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন অতীষ্ট, আমেরিকার গৌরবের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে, বিভিন্ন সেক্টরে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করা হচ্ছে কোনো যুক্তি ছাড়াই, কংগ্রেসকে শুধু নতজানু নয়, অকার্যকর করে তোলা হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেয়ার নামে ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত স্টেটগুলোর জনগণকে চরম বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার উদ্দেশে মুখের কথায়, বা কলমের খোঁচায় অযৌক্তিক নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। ফলে আমদানি—রপ্তানিতে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপদাপন্ন দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
এই রকম পরিস্থিতিতে এমন একজন নেতার প্রয়োজন ছিল। যিনি সরাসরি ন্যায় ও আইনসংগতভাবে সত্য কথা বলবেন, দাঁড়াবেন অনিয়মের বিরুদ্ধে। জোহরান মামদানি সেই নেতা যার আকস্মিক অভিষেক হলো মঙ্গলবার রাতে। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে সংকটকাল যত তীব্র হবে তত শক্তিশালী নেতার আবির্ভাব হবে।

ইমিগ্রান্ট কম্যুনিটিতে এবং ধান্ধাবাজ রাজনীতিকরা তাকে দুইভাবে ক্ষুদ্র করার চেষ্টা করছে এবং নির্বাচনের আগে তাকে যাতে ভোট দেয়া না হয় তার জন্য ‘মুসলমান’ এবং সমাজতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ‘মুসলমান’ বলে মুসলমানরাই গর্বিত হতে চেয়েছে। কিন্তু জোহরান মামদানির বক্তৃতায় কখনোই এইসব প্রসঙ্গ আসেনি। বরং তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মেয়র হতে চেয়েছেন, সকলের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বলেছেন। কোনো ধর্মকে তিনি ছোট করেননি, কোনো গোষ্ঠীকেও নয়। ভোট চাওয়ার জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন পাঁচ বরোর সর্বত্র।
আর যারা সমাজতন্ত্রী বলে তাকে একটি গোষ্ঠীভুক্ত করতে চেয়েছে, তারা হয়ত জানেই না বার্নি স্যান্ডার্সের প্রগ্রেসিভ সোশালিস্ট সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন বা চীনের কম্যুনিজম নয়। ইয়োরোপীয় অনেক দেশের রাজনৈতিক দলের নাম সোশালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এই ধরনের। বার্নি স্যান্ডার্সের সোশালিস্ট ডেমোক্রেটিক ধারণা হচ্ছে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এজেন্ডাসমূহ। ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটির মধ্যে থেকেই যে তা করা সম্ভব তা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ দেখিয়েছেন। তিনি কর্পোরেট সেক্টরের সাহায্য ছাড়াই নির্বাচন করেছেন। আজ নিউইয়র্কে এবং আমেরিকার অন্যত্রও গ্রাসরুট লেভেলের কাছ থেকে ৩ ডলার করে চাঁদা সংগ্রহ করেন, অন্যরা যেখানে ৩ মিলিয়ন ডলার চান।
রাজনীতি করতে হলে সংস্কৃতিবান হতে হয়। জোহরান মামদানির মা অস্কার মনোনয়ন পাওয়া চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখাপড়া করেছেন হার্ভার্ডে। আর বাবা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রফেসর। বিয়েও করেছেন একজন শিল্পীকে। পরিবারের কাছ থেকে তিনি শিক্ষা পেয়েছেন দরিদ্র মানুষদের ভালোবাসতে। (দ্রষ্টব্য, মীরা নায়ারের বানানো ‘সালাম বোম্বে’ ছবি)। সে কারণে এসেম্বলি সদস্য হওয়ার আগেই তিনি স্বল্প আয়ের মানুষদের বাড়ি ফোরক্লোজার হওয়ার হাত থেকে রক্ষার কাজে সহায়তা করতেন।
সবচেয়ে বড় কথা জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন করলেও তার রেশ ছড়িয়ে দিয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাসহ ইয়োরোপের শহরে শহরে। সমগ্র পৃথিবী পরম আগ্রহে দেখল এক তরুণের সাহস, প্রত্যক্ষ করল এক ইমিগ্রান্ট তরুণের বিজয়, শুনল সেই তরুণের অসাধারণ বক্তৃতা।
শেষ কথাটি বলা যায়, জোহরান মামদানি আজ হয়ত একা। কিন্তু তিনি আজ অসুরের বিরুদ্ধে লড়াইএর যে অবতারণা করলেন, তার বীজ ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। পৃথিবীজুড়ে নতুন প্রজন্ম এই হালকা শ্মশ্রম্নমন্ডিত সাহসী যুবকের মত হতে চাইবে। এই চাওয়াটাই ভবিষ্যতে অনেক নেতার জন্ম দেবে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দ্বিধা করবে না। ভীরু দ্বিধায় কাঁপবে না। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ওরে ভীরু, তোর হাতে নাই ভূবনের ভার’।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category