মোঃ মেহেদী হাসান স্টাফ রিপোর্টারঃ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (মুক্তিজোট) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জনাব শাহীন মন্ডল। তিনি তার দলের নির্ধারিত প্রতীক “ছড়ি” মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়বেন।
গত শনিবার (৮ নভেম্বর) মুক্তিজোট কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দের পর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে “বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট”-এর জন্য “ছড়ি” প্রতীক নির্ধারিত রয়েছে। সেই অনুযায়ী, দলটির সব প্রার্থী নিজ নিজ আসনে এই প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচন করবেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর জনাব শাহীন মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, “ছড়ি মার্কা আমাদের দলের আদর্শ ও প্রতিশ্রুতির প্রতীক। এই প্রতীক নিয়ে আমরা মানুষের কাছে যাবো এবং তাদের সমর্থন চাইবো। গাইবান্ধা-২ আসনের জনগণ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর।”
প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে, “ডান নয় বাম নয়, হাঁটতে হবে বাংলাদেশ বরাবর” – এই স্লোগানকে সামনে রেখে তিনি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
আমরা প্রচলিত ডানপন্থী বা বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নই। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো জনমুখী রাজনীতি এবং দেশের সাংস্কৃতিক মুক্তি। ‘ছড়ি’ মার্কা আমাদের সেই বিকল্প রাজনৈতিক দর্শনের প্রতীক।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তার দল মনে করে, বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ধারা প্রয়োজন, যা কেবল জনতার কথা বলবে। গাইবান্ধা একটি নদীবিধৌত জেলা, যা ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং তিস্তা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। প্রতি বছর বন্যা এবং নদীভাঙন এই জেলার প্রধান সমস্যা। বন্যার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায় এবং অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় গাইবান্ধা শহরকে অনেকে “পকেট শহর” বলে থাকেন। এখানে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল ছাড়া বড় কোনো শিল্পকারখানা নেই। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। এই কারণে এখানকার যুবসমাজ কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়। শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার দাবিতে জেলাবাসী ইপিজেড (EPZ) স্থাপনের দাবি নিয়ে আন্দোলনও করেছে।
অনেক জেলায় মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় হলেও গাইবান্ধায় এ ধরনের বড় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও একই চিত্র: পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আধুনিক সরঞ্জামের অভাব রয়েছে, যা মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার বাইরে যেতে বাধ্য করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে অনেকে গাইবান্ধার পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ মনে করেন।এই অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি এবং অনেক পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
আমাদের সমস্যা অনেক এই সমস্যাগুলো আমাদের উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। গাইবান্ধাকে এগিয়ে নিতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রয়োজন শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ মনোযোগ। সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে এই জেলার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব।
এই আসনে শাহীন মন্ডল ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা থাকতে পারে। নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষনা হয়নি, আগামী ফেব্রুয়ারীতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বর্তমানে শাহীন মন্ডল তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।