নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কবর থেকে তুলে লাশ পোড়ানো সহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বর্বরতা, নৃশংসতা ও অরাজকতার প্রতিবাদে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন একটি প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করে আজ ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। সমাবেশে বক্তারা সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গনণহত্যার বিচার, সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা, ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। আগামী নির্বাচন নিয়েও আশংকা প্রকাশ পায় সমাবেশে।
সভায় দলের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ নিরংকুশ করার স্বার্থে ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতেন। জনগণের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে বিভেদ, বিভক্তি তৈরি করতেন। লুটপাট, জুলুম নির্বিঘ্ন করতে তিনি ট্যাগিং এর রাজনীতি করতেন। বিচার বহির্ভূত হত্যা, জুলুম করতেন।
অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ হবার কথা ছিল আইনের শাসন ও সামাজিক সুবিচারের। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি সরকারের ১ বছর পরও আইনের শাসনের বালাই নাই। বরং সরকারের আশ্রয় – প্রশ্রয়ে এদেশে মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ নাবালিকা ধর্ষন মামলার প্রধান অভিযুক্তকে ময়মনসিংহ র্যাব -১৪ কর্তৃক গ্রেফতার
সমাবেশের প্রধান বক্তা ও দলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, সৌদীতে যেমন নবীর মাজার শরীফ আছে, তেমনি আবু জাহেলের কবরও আছে। সেখানে কবর থেকে কোন কাফেরের লাশ তুলে পোড়ানোর ঘটনা ঘটে নাই। ধর্মের নামে মাজার ভাঙ্গার যে প্রতিযোগীতা এদেশে চলছে, সরকার তা থামানোর কোন উদ্যোগ নেয় নাই। ফলাফল গতকালের কবর থেকে তুলে লাশ পোড়ানোর ঘটনা। এ চরম অধর্মের ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা ন্যাকারজনক। এসব ঘটনায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ের অভিযোগও করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, অভ্যুত্থানের পক্ষের একটি শক্তির অন্য রাজনৈতিক দলের অফিসে বারবার অগ্নি সংযোগ, ভাংচুরের ঘটনা আমরা দেখেছি। রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলবেন না। আগুন সবাইকে পোড়ায়।
তিনি আরো বলেন, বিচার বহির্ভূত সকল হামলা, লুটপাট, দখল প্রচেষ্টা, সংঘাত এদেশে অরাজকতা তৈরি করছে। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি এখন প্রধান বাধা হয়ে উঠছে। নাগরিকদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদার রাষ্ট্র গড়ার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছে।
ধর্মের নামে, অভ্যুত্থানের নামে এসব ভাংচুর, বিচার বহির্ভূত হামলা, অগ্নিসংযোগ, দখলবাজী, লুটপাটবাজী এখনি বন্ধ করতে হবে। নয়তো শীগ্রই দেশে জরুরি অবস্থা জারি সহ বিভিন্ন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। যার সুবিধাভোগী হবে অভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তি, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকার এবং সামগ্রিক ফ্যাসিবাদ। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে আবারো একটি উগ্রবাদী, ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দিতে পারে এসব দূর্যোগ। এসব হলে তার পরিণতি অভ্যুত্থানের পক্ষের সকল শক্তি সহ জনগনকেই বহন করতে হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন হাসনাত কাইয়ূম।
সভাপতির বক্তব্যে দলের জাতীয় সমন্বয়ক লিটন কবিরাজ দেশের সকল নাগরিকদের আহ্বান করেছেন যার যার অবস্থান থেকে এসব ষড়যন্ত্র ও দুষ্কর্মের প্রতিবাদ করতে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন দলের মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির, নারী নেত্রী রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি মিন্টু মিয়া, যুব আন্দোলনের সংগঠক রেজোয়ানুর রহমান,
ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লামিয়া ইসলাম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক সামছুদ্দিন রাকিব, অহিংস গণ অভ্যুত্থান আন্দোলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসেন, রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট হানিফ বাংলাদেশী প্রমুখ। সমাবেশের সঞ্চালনা করেন দলের জাতীয় সমন্বয়ক ছামিউল আলম রাসু।