কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ইমাম ও সুধীজন অংশ নেন।
আলোচনায় বক্তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও শান্তির বার্তা তুলে ধরলেও, ইসলামী চিন্তাবিদদের একাংশ মনে করিয়ে দেন—ধর্মকে শুধুমাত্র অনুষ্ঠান বা রাজনীতির জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, যার প্রতিটি আদেশ-নিষেধ কোরআন ও হাদিস দ্বারা নির্ধারিত।
আরও পড়ুনঃ ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের সাথে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ধর্ম ও রাজনীতির সীমানা
আলোচকরা বলেন, ইসলামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা ছাড়া আর কোনো ঈদ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কখনো জন্মদিন পালন বা ঈদে মিলাদুন্নবীর মতো কোনো অনুষ্ঠান করেননি। অতএব এটি সরাসরি শরীয়ত সমর্থিত নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ • لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
“বলুন: হে কাফিরগণ, আমি পূজা করি না যাদের তোমরা পূজা কর।” (সূরা আল-কাফিরুন, আয়াত ১–২)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, দ্বীনের বিষয়ে মুসলমানের জন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুসরণ করা বা তাদের সাথে ধর্মীয় আচার ভাগাভাগি করা বৈধ নয়। ইসলাম সব ধর্মের মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়, কিন্তু ইবাদত বা শরীয়তবিরোধী কোনো কাজে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয় না।
উদারতা বনাম উদ্ভাবন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ”
“যে আমাদের এই দ্বীনে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
অতএব, ইসলামের নামে যে অনুষ্ঠান কোরআন ও হাদিসে নেই, তা দ্বীনের অংশ নয়। এগুলো জাগতিক আয়োজন, যার সাথে আখিরাতের কল্যাণের সম্পর্ক নেই। বরং এগুলো অনেক সময় বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ দেশের চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত আলু রপ্তানি করা হবে:জয়পুরহাটে উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতা, সম্মান ও শান্তি প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ইহুদি-খ্রিস্টানদের সাথে ন্যায়ভিত্তিক আচরণ করেছেন। তবে দ্বীনের নামে কোনো অনুষ্ঠান করে সেখানে একজন বিধর্মীকে প্রধান আসনে বসানো কোরআনের মূল শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।
উপসংহার
ধর্ম হলো মহান আল্লাহর বিধান—এটি কোনো খেলা বা আনুষ্ঠানিকতার উপকরণ নয়। তাই দুনিয়ার কাজ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ধর্মকে ব্যবহার করার আগে চিন্তা করা জরুরি:
এটি কি কোরআন ও হাদিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
এটি কি আখিরাতের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, নাকি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে?
আমাদের উচিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রকৃত শিক্ষা—সহনশীলতা, ন্যায়বিচার, সত্যবাদিতা ও মানবতার সেবা—ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়ন করা। সেটিই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা ও অনুসরণের প্রমাণ।