সুহেনা আক্তার হেনাঃ
বর্তমান যুগে ‘ভাইরাল’ শব্দটি যেন একটি মোহে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির এই গতিময় সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে ঢুকে পড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজকাল যে কোনো মূল্যে ভাইরাল হতে চায়। যেন ভাইরাল হওয়াটাই জীবনের একমাত্র অর্জন, সার্থকতা কিংবা গর্বের বিষয়।
আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই—কারো অদ্ভুত আচরণ, হাস্যকর কথাবার্তা কিংবা অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট রাতারাতি লাখো মানুষের হাতে হাতে ঘুরছে। মানুষ এই প্রচারের নেশায় এমন সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে, যা দেখে একদিকে হাসি পেলেও, অন্যদিকে তৈরি হয় এক ধরনের অস্বস্তি। শুধু হাস্যরস নয়, অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অশালীনতা, বিতর্কিত বক্তব্য কিংবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা করছেন। যেন মান-অভিমান, সৌজন্যবোধ কিংবা বিবেক সবই জলাঞ্জলি দিয়ে বসেছেন এক মিথ্যা খ্যাতির আশায়।
আরও পড়ুনঃ জুলাই আগষ্ট আন্দোলনে নিহত শহীদ জিল্লুরের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে গাবতলী পৌর বিএনপি উদ্যোগে কবর জিয়ারত
এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। তারা ভাবছে, জীবন মানে এখন লাইকের সংখ্যা, ফলোয়ারের মাপকাঠি কিংবা রিলের ভিউ। অথচ বাস্তব জীবনে এসব কিছুই জীবনের মানে নির্ধারণ করে না। একজন সৎ শিক্ষক, একজন নির্ভরযোগ্য চিকিৎসক কিংবা একজন নিবেদিত সমাজকর্মীর অবদান ভাইরাল না হলেও, সমাজে তারা চিরকাল সম্মানিত।
তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনো অনেকেই আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন ইতিবাচক কাজে—মানবিক উদ্যোগ, শিক্ষামূলক ভিডিও, সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক প্রচারণায়। তাদের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমাদের উচিত এই গঠনমূলক কনটেন্টের পাশে দাঁড়ানো, এবং তরুণদেরও উৎসাহ দেওয়া যেন তারা সস্তা খ্যাতির পেছনে না ছুটে, সত্যিকার মূল্যবান কিছু তৈরি করে।
ভাইরাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—কেন ভাইরাল হচ্ছি? আমরা যদি এমন কিছু করি যা মানুষের মনে দাগ ফেলে, যা সমাজকে আলোকিত করে, তাহলে তা ভাইরাল না হলেও মূল্যবান হয়ে থাকবে।সময় এসেছে আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করার—আমি কি শুধু পরিচিতি চাই, নাকি রেখে যেতে চাই কিছু সময়হীন অবদান?