হালিম রাজ:
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে সাময়িক স্বস্তি মিললেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ ২০২৬ সাল থেকেই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে “উন্নয়নশীল দেশের” মর্যাদা অর্জন করতে যাচ্ছে—এবং এই মর্যাদার সঙ্গে শুরু হবে এক নতুন বাস্তবতা। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই বাস্তবতার জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত?
গত এক দশকে কাগজে-কলমে অগ্রগতির নানা চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্লাবে প্রবেশ নিঃসন্দেহে একটি গর্বের অর্জন। কিন্তু এর বিপরীতে যে চ্যালেঞ্জগুলো অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি কতটা?
এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারাতে বসেছি বহু সুবিধা: রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়, সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি এবং দাতা সংস্থাগুলোর অনুদান—all set to diminish or come with tougher conditions. সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে রপ্তানি বাণিজ্যে, যেখানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে কেবল তৈরি পোশাক খাত থেকে।
একটি খাতে অতিনির্ভরতা যে কোনো অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক। বৈশ্বিক মন্দা বা বাজারের ছোট্ট ধাক্কাতেই এই খাত ধসে পড়তে পারে, আর সেই সঙ্গে ভেঙে পড়তে পারে জাতীয় অর্থনীতিও।
ডাইভারসিফিকেশন শব্দটি বহুবার উচ্চারিত হলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। আইটি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, ওষুধ শিল্প—এসব সম্ভাবনাময় খাত এখনো পিছিয়ে আছে বিনিয়োগ ও নীতিগত উৎসাহের অভাবে। এর পেছনে রয়েছে দুর্বল পরিকল্পনা, স্বল্পমেয়াদি চিন্তা, এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
২০২৬ সাল একটি সাধারণ তারিখ নয়—এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অর্থনৈতিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের কাছে চারটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়া উচিত:
আরও পড়ুনঃ তারুণ্যের উৎসব জুলাই উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরায় মাটির সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিও সুষমা সার ব্যবহার
১. নতুন নতুন রপ্তানি খাত গড়ে তোলা,
২. দেশীয় শিল্পে উদ্ভাবন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ,
৩. মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ,
৪. নীতিনির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবায়ন।
উন্নয়ন মানে শুধু আন্তর্জাতিক সূচকে এগিয়ে যাওয়া নয়; এর অর্থ হলো টেকসই ভিত্তিতে দেশকে স্থায়ী অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়া। চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের গল্পের বাইরে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এখন সময়ের দাবি।
২০২৬ আসার আগেই যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তবে সে বছর হতে পারে আমাদের জন্য গৌরবের নয়, বরং সংকটের বছর।