হাকিকুল ইসলাম খোকন,বাপসনিউজঃ
গত ২২শে জুন ,রোববার বিকেল সাতটা নিউইয়র্ক জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ এর প্রতিষ্ঠাতা ,স্বাধীন বাংলার অন্যকম রুপকার , সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধের প্সংগঠক সিরাজুল আলম খানের ২য় প্রয়ান দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল আলম খান সৃতি পরিষদ নিউইয়র্কের আহ্বায়ক ডা:মুজিবুল হক। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব শাহাব উদ্দীন।
সভার শুরুতে মরহুমের সৃতির প্রতি দাড়িয়ে এক মিনিটকাল নিরবতা পালন করা হয় খবর বাপসনিউজ ।সভায় বক্তব্য রাখেন সএডভোকেট মুজিবুর রহমান ,, মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস ,লিগেল কনসালটেন্ট মুজিবুর রহমান,বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা: ওয়াজেদ এ খান ,প্রাক্তন গনকন্টের সাংবাদিক আনোয়ার খন্দকার ,মোজাহিদ আনসারি ,হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন ,জাকির হোসনে বাচ্ছু, জামান তপন ,নূরে আলম জিকু , নজরুল ইসলাম ,আবুল হোসেন ,, আব্দুর রহিম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ।
বক্তারা সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে বলেন ,তিনি একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংক শাস্ত্রে অনার্স পাশ করলেও সেই সময় ” কনভেকশোনেল মুভমেন্টে “যোগদানের কারণে কারাবরণ ওবিশ্ববিদ্যালয় এবং হল থেকে বহিষ্কার করায় মাষ্টার্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজনীতি ও সমাজ বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ছিল অসীম লেখাপড়া। সে কারনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতেন। তিনি ছিলেন আজীবন দেশের মানুষ ও জনগণের জন্য একজন নিবেদিত প্রান পুরুষ।১৯৬৩ সালের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের পর তিনি আর কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসেননি। কিন্তু মূল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি সারাজীবন ছিলেন একজন অগ্রসর রাষ্ট্র চিন্তা শীল ব্যক্তি। যে কারনে ই ‘৬৩ সালেই আব্দুর রাজ্জাক , কাজী আরেফ আহমদকে নিয়ে স্বাধীন বাংলার নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এবং তাদের নেতৃত্বেই ‘৬৬সালের ছয় দফা ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান ,,এবং ৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলেন। তাদের চিন্তার কারনেই পাকিস্তানের আপোষকামী ধারা থেকে বেরিয়ে বাংগালীর মুক্তির জন্য আলাদা রাষ্ট্র করেন। এবং সাম্য ,সামাজিক ন্যায় বিচার,ও মূল্যবোধ ইত্যাদি সংযোজন করে মুজিব নগর সরকারের পক্ষথেকে “ডিকলারেশন অব ইনডিপেনডেন্স “ঘোষনা করা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর মানুষের আশা আকাংখা বাস্তবায়নের জন্য বৃটিশ ভাবধারার দুর্নীতিবাজ আমলা তন্ত্রের পরিবর্তে দেশ গড়ার অংগিকার নিয়ে একটি বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করে ছিলেন। কিন্তু বংগবন্ধু ,, আওয়ামী লীগ সে দিন ,সিরাজুল আলম খান সহ তরুন মেধাবী ও সাহসী যুক্তিযোদ্ধাদের কথা না শুনে বৃটিশ ,,পাকিস্থানের সেই প্রশাসন দিয়ে ই দেশ শাসন শুরু করলেন। বরং যারা এই প্রস্তাবনা করেন ,তারাই বংগবন্ধুর বিরাগভাজন হন।
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও ছিনতাইকৃত মোবাইল সহ কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য আটক
কারনেই ৭২সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের জন্ম হয়। পথহারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ,,এবং জাসদের অস্থির রাজনীতির কারনে ই স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর পরে ও দেশকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। সিংগাপুর ,মালয়েশিয়া সহ পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের পরে স্বাধীন হওয়ার পর ও অনেক উন্নত। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে ,,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ,ইতিহাস ,ন্যুনতম প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং দুর্নীতি ,লুটপাট ,বিদেশে টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
রাষ্ট্র চিন্তাবিধ সিরাজুল আলম খান জাতীর স্বার্থে বিভিন্ন সময় লেখনীর মাধ্যমে জাতির দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাশীনদের বুঝতে অসুবিধে ,, অথবা হীনমন্যতার কারনে তার চিন্তা ধারাকে আমলে নেওয়া হয়নি। তা’ নাহলে নব্বইয়ের দশকে প্রথম দিকে তিনি ,রাষ্ট্র কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থা সম্বলিত ১৪ দফা কর্মসূচি প্রনয়ন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জাতীয় সংসদে দু কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ,(৩০০+২০০ মোট ৫০০ আসনের )।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ,সংবিধানের ৭০ ধারা সহ কালা কানুন বাতিল করে সংবিধান সংস্কার ,,বাংলাদেশকে ৭/৯ টি প্রদেশে বিভক্ত করে আমলাতন্ত্র মুক্ত ,নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা দেশ পরিচালনা করতে হবে। নির্বাচন কালীন সরকার ,স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন ,স্থায়ী জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন ,মাইক্রো ক্রেডিট ,,এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবনা পয়তাল্লিশ বছর আগে ছিল।
যা কিছু , দফা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঐক্য মত কমিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। মানুষ ভূলের উর্ধ্বে নয়। তার ও জীবনে ভূল থাকতে পারে। কিন্তু আমরা জাতির স্বার্থে ভালো দিক গুলো আলোচনা ও বাস্তবায়নের উদ্দোগে নিতে পারি। তিনি জীবনে কখনো ভোগের রাজনীতি করেন নাই। জাতীর সামনে ত্যাগের রাজনীতির এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। ঢাকার সাধারণ একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মৃত্যু ,কোন বাড়ি গাড়ি ,ব্যাংক একাউন্ট ,পরিবার উত্তরাধিকার ,কিছু ই রেখে যাননি।
তার অছিয়ত অনুযায়ী ,”কোন শোক সভা নয় ,পূষ্পমাল্য বা শহীদ মিনারে লাশের ডিসপ্লে নয় , মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অব অনারও চাননি। শুধু মায়ের একটা সাদা শাড়ি দিয়ে মুড়ে গ্রামের বাড়িতে ম/ বাবার কবরের পাশে যেন পুতে দেওয়া হয় “।
তাই হয়েছে। এইসব ক্ষনজন্মা মানুষের ইতিহাস আমাদের স্কুল ,কলেজ, পাট্য পুস্তকে সংযোজন করা একান্ত জরুরী। তবে ই আগামী প্রজন্ম খাটি দেশ প্রেমিক হয়ে গড়ে উঠবে ।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি করা হয়।