ডঃ এম, জি, মস্তফা মুসাঃ
_আমার এক দ্বীনি ভাই প্রশ্ন করেছেন: “শুভ মহালয়া” বলে হিন্দু বন্ধু-বন্ধব ও সহপাটিদের শুভেচ্ছা জানানো যাবে কি? “শুভ মহালয়া” বলা, এটি “তাওহীদ বা আল্লাহর একত্বে এবং আল্লাহর সাথে শিরক” – এই ধারণার সাথে সম্পর্কিত হয় কি না, তা বিষয়টি ইসলামী ঈমান ও আকীদাহর আলোকে সার্বিকভাবে আলোচনা করা যাক:_
*১. ‘মহালয়া’র প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু:*
“মহালয়া” হিন্দুধর্মের একটি ধর্মীয় তিথি, যেখানে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করা হয়, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পণ (শ্রাদ্ধ) করা হয়, এবং মূলত দেব-দেবীর আহ্বান ও পূজা-পার্বণের সূচনা হয়।
অতএব, “মহালয়া” সরাসরি হিন্দু ধর্মের আচার ও দেব-দেবীর সাথে সম্পর্কিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
*২. ইসলামে শিরক এবং শিরকের সীমারেখা:*
কুরআন স্পষ্টভাবে বলে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরককে ক্ষমা করবেন না; আর তিনি ইচ্ছা করলে এর বাইরে অন্য সবকিছু ক্ষমা করবেন”। (সূরা নিসা ৪:৪৮)!
“যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকে (ইবাদতে), যার জন্য তার কোনো দলিল নেই, তার হিসাব তার রব্বের কাছে; নিশ্চয়ই কাফিররা সফল হবে না।” (সূরা মুমিনুন ২৩:১১৭)! অর্থাৎ, দেব-দেবীকে উপাসনা করা, আহ্বান করা, তার নিকট থেকে শান্তি কামনা করা, সবই শিরক।
*৩. “শুভ মহালয়া” বলার প্রশ্নে ইসলামী দৃষ্টিকোণ*
“শুভ মহালয়া” বলার অর্থ দাঁড়ায়: হিন্দুধর্মের একটি নির্দিষ্ট তিথিকে মঙ্গলময় বলা। অথচ সেই তিথির মূল বিষয় হলো দুর্গা দেবীকে আহ্বান করা ও পূর্বপুরুষদের আত্মার জন্য শ্রাদ্ধ, যা ইসলামের তাওহীদের ধারণার সম্পূর্ন পরিপন্থী।
সুতরাং, একজন মুসলিম যদি সচেতনভাবে “শুভ মহালয়া” বলে শুভেচ্ছা প্রদান করেন, তবে তিনি সেই তিথির ধর্মীয় তাৎপর্যকে পরোক্ষভাবে অনুমোদন দিচ্ছেন, স্বীকার করছেন যে দূর্গাদেবী আগমন করেন যা ইসলামে শিরকের সমর্থন হিসেবে গণ্য।
তবে, এখানে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে: যদি কেউ কেবল সামাজিক সৌজন্যের কারণে বলে থাকেন এবং মনে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ইলাহ বা শরিক মনে না করেন, তবে সেটি সরাসরি ইবাদতের শিরক না হলেও এটি শিরক-সংলগ্ন কাজ (শিরকের প্রতি সম্মতি বা সমর্থন) হিসেবে গন্য হবে, যা একজন মুমিনের ঈমানকে মারাত্মক ভাবে দুর্বল করে এবং তা স্পষ্টভাবে পরিহারযোগ্য।
আরও পড়ুনঃ প্রাইভেট এডুকেশন সোসাইটি সেরা সংগঠন সম্মাননায় ভূষিত
*৪. ইসলামে করণীয়:*
মুসলিমদের উচিত, তাওহীদকে সর্বোচ্চে স্থান দেওয়া এবং শিরক সম্পর্কিত যে কোনো কথাবার্তা বা আচার থেকে বিরত থাকা।
অন্য ধর্মের মানুষের সাথে ভদ্রতা ও সৌজন্য বজায় রাখা অবশ্যই ইসলামের শিক্ষা, তবে তা যেন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমর্থন করার পর্যায়ে না যায়।
বিকল্প শুভেচ্ছা ব্যবহার করা উত্তম, যেমন: “আপনারা ভালো থাকুন”; “আপনাদের মঙ্গল হোক”। এতে সৌজন্যও থাকবে, আবার শিরক সমর্থনের অভিযোগও আসবে না।
*৫. সার্বিক মন্তব্য (তাওহীদের আলোকে):*
“শুভ মহালয়া” বলা মুসলিমদের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ এই শব্দগুচ্ছ এমন একটি তিথির মঙ্গল কামনা করে, যার মূল ভিত্তি দুর্গাদেবীর আহ্বান ও পিতৃপূজা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক।
আল্লাহর সাথে শিরকের ধারণা যতটুকুই থাকুক না কেন, মুসলিমদের দায়িত্ব হলো তাওহীদের প্রতি দৃঢ় থাকা এবং শিরকের সাথে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না রাখা।
ইসলামে সৌজন্য ও মানবিক আচরণের দরজা খোলা আছে, কিন্তু শিরককে সমর্থন করার দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ।
*উপসংহার:* তাওহীদের আলোকে, “শুভ মহালয়া” বলা মুসলমানের জন্য অনুচিত, কারণ এতে শিরক-সম্পৃক্ত একটি তিথির প্রতি মঙ্গলকামনা প্রকাশ পায়। মুসলিমদের উচিত বিকল্প শুভেচ্ছা ব্যবহার করা, যাতে মানবিক সৌজন্য অটুট থাকে, আবার ঈমানও অক্ষত থাকে। (মূসা: ২৩-০৯-২৫)