শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনমঃ
নেত্রকোনা জেলা জজ কোর্টে আইন ছাত্র ফোরাম পরিচিতি সবা অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে বিটিভির নতুন কুঁড়ি-২০২৫ প্রচার কৌশল সভা অনুষ্ঠিত গাবতলীতে সাংবাদিকদের সাথে জামায়াত এমপি প্রার্থী গোলাম রব্বানীর মতবিনিময় নোয়াখালী বিএনপির আহবায়ক আলো ও সদস্য সচিব আজাদ এর বিরুদ্ধে মিছিল সেনবাগে বিএনপির বিজয় মিছিলে হামলা, যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ৩১ দফা বিতরণ করতে রৌমারীতে রাজিবপুর উপজেলার বি এন পির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ মোখলেসুর রহমান বদলগাছীতে সরকারি রাস্তার প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী মনের আশা পূরণ করি- এম এ রউফ ২১ হাজার টাকার ফেনসিডিল ও মোটর সাইকেলসহ আটক ১ বদলগাছী বিনিময় সম্পত্তি জবরদখলের হুমকি অভিযোগ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ! চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোলাম জাকারিয়ার গণসংযোগ কার্যক্রমে লিফলেট বিতরণ নাসিরনগরে ব্রীজ নয়,যেন মরণ ফাঁদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম ফিলাপ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঝিনাইদহ কলেজ শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উদোগে ঈদে মিলাদুন নবী উদযাপন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সকল প্রার্থীদের তালিকা  এনওয়াইপিডির ডেপুটি ইন্সপেক্টর পদোন্নতিতে কারাম চৌধুরীকে সংবর্ধনা জানিয়েছে “জীবন” গোমস্তাপুরে ফেক আইডি ও তার অনুসারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় সাংবাদিকের নামে মিথ্যা এজাহার মনিরুলের শাস্তির দাবি সাংবাদিক সমাজের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো কর্তব্যনিষ্ঠা, জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা, আল্লাহভীরুতা ও সততা বজায় রাখা, পরিশ্রমী ও কর্মঠ হওয়া, রাজবাড়ীতে পুলিশের ওপর হামলা: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৫ সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কুয়াকাটা ভ্রমণে মান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা!

শাহাদাতের আলোকশিখা : শহীদ সাইয়েদ কুতুব রহ.

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
পাবলিশ: শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

✍️ জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

❝এক কালেমায় রুজিরোজগার,
এক কালেমায় ফাঁসি।❞

ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের জীবন কেবল জন্ম-মৃত্যুর সীমায় আবদ্ধ নয়। তাঁরা রক্ত দিয়ে লিখে যান অমর পঙ্‌ক্তি, তাঁদের মৃত্যু হয়ে ওঠে আগামী প্রজন্মের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। শহীদ সাইয়েদ কুতুব রহ. ছিলেন সেই বিরল মানুষদের একজন। মিশরের এক গ্রামীণ প্রান্তে জন্ম নেওয়া এক সাধারণ শিশু, যিনি তাঁর কলমের জাদু দিয়ে সাহিত্যাঙ্গন জয় করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ত দিয়ে প্রমাণ করলেন এক কালেমার মর্যাদা। তাঁর ঠোঁট থেকে উচ্চারিত সেই অমর বাণী আজও সময়ের বুক কাঁপিয়ে তোলে—
“আমরা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ কালেমার বিজয়ের জন্য ফাঁসির দড়ি গলায় নিচ্ছি। আর তোমরা সেই একই কালেমা বিক্রি করে রুজিরোজগার করছ।”

১৯০৬ সালের ৯ অক্টোবর মিশরের আসিউতের ছোট্ট গ্রামে জন্ম নেওয়া সাইয়েদ কুতুব শৈশবেই কুরআন হিফজ করেছিলেন। তাঁর চোখে ছিল কাব্যের স্বপ্ন, কানে বাজত সাহিত্যের সুর। কৈশোরে কবিতা লিখে তিনি মন জয় করতেন, তরুণ বয়সে সমালোচনা লিখে সাহিত্য অঙ্গনে জায়গা করে নিলেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিল খ্যাতি, দিল পরিচিতি। কিন্তু খ্যাতির আড়ালে তাঁর অন্তরে জন্ম নিচ্ছিল এক গভীর অস্থিরতা। কেন এই সমাজ এত ভগ্ন, কেন মুসলমানরা নামমাত্র মুসলমান হয়ে আছে, কেন শাসনব্যবস্থা ইসলামের পথ ছেড়ে জাহেলিয়াতের আঁধারে হাঁটছে—এই প্রশ্নগুলো তাঁকে তাড়া করতে লাগল।

আরও পড়ুনঃ আহবায়ক সজল, সদস্য সচিব কালা।।কলাপাড়ায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কমিটি গঠন

তিনি বুঝলেন, সাহিত্য দিয়ে হৃদয় ছোঁয়া যায়, কিন্তু সমাজ বদলানো যায় না; আর কেবল কাব্যের ভাষা দিয়ে উম্মাহকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তখনই তাঁর কলমের মোড় ঘুরে গেল। সাহিত্যিক সাইয়েদ কুতুব রূপ নিলেন চিন্তাবিদ ও দার্শনিক কুতুব-এ, যিনি কলমকে বানালেন আল্লাহর পথে সংগ্রামের অস্ত্র। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি তাঁর বুদ্ধি ও সৃজনশীলতাকে ঢেলে দিলেন আন্দোলনের পথে।

তাঁর গ্রন্থ “ফি জিলালিল কুরআন” ছিল কুরআনের ছায়াতলে নতুনভাবে জীবনকে বোঝার এক অবিনশ্বর প্রয়াস, আর “মা’আলিম ফিৎতারিক” হয়ে উঠল যুগান্তকারী ঘোষণাপত্র, যা তরুণদের শিখাল—এই জাহেলিয়াত ভাঙতে হলে আল্লাহর কালেমা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

কিন্তু সত্যের এই ভাষণ সহ্য হলো না মিশরের জালিম শাসক জামাল আবদুন নাসেরের। ১৯৫৪ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হলো, শুরু হলো দীর্ঘ কারাবাস। সেই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তাঁর শরীরকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়েছিল অকল্পনীয় নির্যাতনে।

কখনো উত্তপ্ত লোহার সলাকা গরম করে তাঁর গায়ে চাপানো হতো, কখনো বরফ-ঠান্ডা পানিতে ফেলে রাখা হতো দীর্ঘসময়। অন্ধকারে লেলিয়ে দেওয়া হতো হিংস্র কুকুর। তিনি ছিলেন একজন পাতলা গড়নের মানুষ, রোগে ভুগতেন প্রায়ই; তবুও তাঁর মনোবল ভাঙতে পারেনি শাসকের নির্যাতন। প্রতিবারই তাঁর ঠোঁট থেকে উচ্চারিত হতো একটাই শব্দ—“আল্লাহু আকবার।”

একসময় তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হলো—চাইলে তিনি মন্ত্রী হতে পারেন। কলমের জাদু, সাহিত্যিক খ্যাতি, রাজনৈতিক প্রভাব সব মিলিয়ে তাঁর হাতে ক্ষমতার দরজা খুলে দেওয়া হতো। কিন্তু তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে প্রত্যাখ্যান করলেন—“মন্ত্রীত্ব তখনই নেব, যখন শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামী ছাঁচে সাজাতে পারব।” এই উত্তরেই স্পষ্ট হলো, তিনি কোনো দুনিয়াবি পদ বা প্রতিপত্তির লোভে মাথা নোয়াতে আসেননি।

আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ীতে সমবায় অফিসের দুই কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ 

আদালতের কাঠগড়ায় তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো—“মুসলিম নামধারী এই শাসক কি কাফের?” তিনি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বললেন—“সে কাফের।” সাথীরা ফিসফিস করে বলল, “হুজুর, কৌশলে বললেও তো হতো।” তিনি তখনো অটল থাকলেন—“আকীদার প্রশ্নে কোনো কৌশল চলে না।” সত্যের সামনে তিনি কোনো দিন নরম হননি, আর মিথ্যার সঙ্গে কোনো আপস করেননি।

১৯৬৬ সালের ২৯ আগস্ট ভোরবেলা তাঁকে নিয়ে আসা হলো ফাঁসির মঞ্চে। ফজরের সময় তখনো বাকি, আকাশে ছড়িয়ে পড়ছিল হালকা আলো। তাঁর চোখে কোনো ভয়ের ছায়া ছিল না, বরং ছিল অদ্ভুত প্রশান্তি। শেষ মুহূর্তে এক আলেম তাঁকে বললেন, “কালেমা পড়ে নিন।” তখনই তিনি সেই অমর বাণী উচ্চারণ করলেন—
“আমরা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ কালেমার বিজয়ের জন্য ফাঁসির দড়ি গলায় নিচ্ছি। আর তোমরা সেই একই কালেমা বিক্রি করে রুজিরোজগার করছ।”

এরপর তাঁর ঠোঁট থেকে বের হলো চূড়ান্ত সাক্ষ্য—“আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।” ফাঁসির দড়ি টেনে ধরা হলো, কিন্তু সেদিন পৃথিবী একজন মানুষকে হারালেও, ইসলামী আন্দোলন পেল এক অমর শহীদের উত্তরাধিকার।

সাইয়েদ কুতুব রহ.-এর শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্বে। একদিকে তাঁর হত্যার মাধ্যমে শাসকেরা ভেবেছিল ইসলামি আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যাবে; অন্যদিকে তাঁর রক্ত উল্টো তরুণ প্রজন্মের রগে জ্বালিয়ে দিল আগুন। তাঁর লেখা বই এখনো মিশরের কারাগারের দেয়াল ভেদ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আলো ছড়াচ্ছে। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, আকীদা কোনো আপসের বিষয় নয়। এক কালেমার ওপর দাঁড়িয়েই গড়ে তোলা যায় সভ্যতা, আর সেই এক কালেমার জন্য গলায় নেওয়া যায় ফাঁসির দড়ি।

শাহাদাতের এত বছর পরেও তাঁর নাম উচ্চারণ করলেই হৃদয়ে জ্বলে ওঠে আলো, বুকে সঞ্চারিত হয় সাহস। তিনি হয়ে আছেন আমাদের সময়ের শহীদ, আমাদের চিন্তার মুজাহিদ, যিনি দেখিয়ে গেছেন—শরীরকে হত্যা করা যায়, কিন্তু সত্যকে হত্যা করা যায় না।

লেখক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর


এই বিভাগের আরও খবর