“রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে বৈষম্য নয়, সমঅধিকার চাই” — নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের ঘোষণা রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংশোধন আন্দোলনের
বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মন, নিজস্ব প্রতিবেদনক,
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টার প্রাঙ্গণে আজ ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ইং (রবিবার) বেলা ১টায় অনুষ্ঠিত হয় “রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংশোধন আন্দোলন” এর আয়োজনে এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন।
এ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা পরিচালনা করেন আন্দোলনের আহ্বায়ক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন, যিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যে বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করছে, তা সংবিধান ও গণতন্ত্রের চেতনার পরিপন্থী। জনগণের ভোটাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির স্বার্থে এই আইন অবিলম্বে সংস্কার করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনের মূল দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন
১️। বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের অধীনে সকল রাজনৈতিক দলকে সমঅধিকারভিত্তিতে নিবন্ধন প্রদান করতে হবে।
২️। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ও প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির দায়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
৩️। নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা সীমিত না রেখে সারা বছরব্যাপী আবেদন গ্রহণের প্রথা চালু করার দাবি জানানো হয়।
৪️। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
৫️। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না আনলে গণআন্দোলন ও ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সর্বজনীন দলের চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্রে কোনো দলকে বঞ্চিত করা মানে জনগণের কণ্ঠরোধ করা। আমরা চাই সব দল সমান সুযোগ পাক, যাতে ভোটের রাজনীতি সত্যিকারের গণমানুষের হয়ে ওঠে।”
বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (BJDP) মহাসচিব বলেন,
একটি পক্ষপাতদুষ্ট নিবন্ধন আইন গণতন্ত্রকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ ও সবার জন্য উন্মুক্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি সহ ৩০টিরও বেশি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবগণ।
এছাড়াও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও তরুণ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে আহ্বায়ক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন ঘোষণা দেন যে,
আগামী মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর ২০২৫ ইং) নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি জানাতে চাই। তবে যদি নির্বাচন কমিশন জনগণের দাবি উপেক্ষা করে, তাহলে আমরা সারাদেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তুলব।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রণীত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশজুড়ে বিতর্ক ও অসন্তোষ চলছে। অনিবন্ধিত দলগুলোর অভিযোগ—এই আইন ছোট ও নতুন দলগুলোর জন্য রাজনৈতিক অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে এবং বড় দলগুলোর পক্ষে একচেটিয়া সুবিধা দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংশোধন আন্দোলন গঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো— একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে দেশের প্রতিটি দল সমানভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে অংশ নিতে পারে।”
সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে আহ্বায়ক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন বলেন,
আমরা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে চাই। জনগণের ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক সমঅধিকারের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন,
গণতন্ত্র তখনই টিকে থাকবে, যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক ও দল সমান সুযোগ পাবে রাজনীতিতে অংশ নিতে। তাই নিবন্ধন আইন সংস্কার আজ সময়ের দাবি।”