মোঃ মোস্তফা জামাল ভূঁইয়াঃ
মুসলিম জাতিসত্তা এবং ১৯০৫ সালই হল বাংলাদেশের ভিত্তি মূল, পর্ব ০২
বিষয় :- আছাবিয়্যাত সম্পর্কে আলোচনা।
পাঠক, অনেক মুসলমান বিশেষ করে বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর অধিকাংশ নেতা কর্মী মুসলিম জাতিসত্তা ও আছাবিয়্যাতকে এক ও অভিন্ন মনে করে যা সম্পূর্ণ ভূল। মুসলিম জাতিসত্তার ধারণা উম্মাহ কনসেপ্ট এর সহযোগী, পক্ষান্তরে উম্মাহ কনসেপ্ট এর সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আছাবিয়্যাত সা্ঘর্ষিক ।
আছাবিয়্যাত শব্দটি হল ইবনে খালদুন এর একটি বিখ্যাত থিঊরী যার ভিত্তিতে তিনি ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করেছেন। ইবনে খালদুন অধিকাংশ রাষ্ট্র সমূহের উখান পতনের পিছনে আছাবিয়্যাত এর ভূমিকা খোজে পেয়েছন । ইবনে খালদুন এর মতে আছাবিয়্যাত হল এমন একটি অনুভূতি যা কোন জনগোষ্ঠীকে আত্মরক্ষা সহ রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করে। ইবনে খালদুন আছাবিয়্যাতকে ইতিহাসের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি আছাবিয়্যাত এর আলোকে ল্যাটেনী সামাজ্য, রোমান সাম্রাজ্য, পারসিক সাম্রাজ্য সহ আরো অনেক রাজব্শের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন।
আছাবিয়্যাত হল গোত্র প্রীতি যার ইংরেজী হল Group Feeling, কোন গোত্রের জনগণ একই ব্যক্তির রক্তধারা হতে উৎসারিত। আছাবিয়্যাত সাধারণত একই রক্তধারা হতে উৎসারিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য। এটি কোন আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত নয় । গোত্র প্রীতি কখনো কখনো ভাল কাজ করে এবং কখনো কখনো খারাপ কাজ করে তবে অধিকাংশ সময় খারাপ কাজ করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ পাঁচবিবিতে গরুর আক্রমনে শিশু আহতর প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে হাসপাতাল পাঠালেন গরু মালিক
রক্ত ধারার সাথে সম্পৃক্ত আছাবিয়্যাত এর সাথে বর্তমান যুগে ভাষা ও এলাকাভিত্তিক বিষয়াদি আছাবিয়্যাত এর সাথে যোগ হয়েছে। আছাবিয়্যাত এর প্রাচীন রূপ ও বর্তমান রূপ প্রায় এক ও অভিন্ন। গোত্র কেন্দ্রীক রাষ্ট্রের পাশাপাশি ভাষা ও এলাকা কেন্দ্রীক রাষ্ট্র গঠিত হয়। যেমন আরব জাতীয়তাবাদ , বাংগালী জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি। আছাবিয়্যাত এ শক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়, আছাবিয়্যাত প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের অপরাধকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। আছাবিয়্যাতের কারণে গণহত্যার ফলে অনেক জনগোষ্ঠী পূথিবী হতে হারিয়ে যায় ।
পক্ষান্তরে মুসলিম জাতিসত্তা হল ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে একটি অনুভূতি যা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক পতাকাতলে সমবেত করে। মুসলিম জাতিসত্তা বা মুসলিম জাতীয়তাবাদের মধ্যে রক্তধারার কোন মূল্য নেই, এখানে ঈমান ও তাকওয়া হল মূল ভিত্তি। মুসলিম জাতিসত্তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল ইসলামের অনুসারীদের অস্তিত্ব রক্ষা করা এবং চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল আল্লাহর আইন তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।
আছাবিয়্যাতের ন্যায় মুসলিম জাতিসত্তা অপরাধের জন্য দায়মুক্তি দেয় না। আছাবিয়্যাত স্বৈরাচার তৈরি করে, কারণ এখানে আদর্শের কোন স্থান নেই। পক্ষান্তরে মুসলিম জাতিসত্তা কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী হবার কারণে জালিম তৈরির কোন সুযোগ নেই।
আছাবিয়্যাত মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে, পক্ষান্তরে মুসলিম জাতিসত্তা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে ।
আছাবিয়্যাত মুসলমানদের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি, পক্ষান্তরে মুসলিম জাতিসত্তা মুসলমানদের অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক। মুসলিম জাতিসত্তার উৎস হল কুরআন ও সুন্নাহ । পক্ষান্তরে আছাবিয়্যাত অধিকাংশ সময় কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে অবস্থান নেয়। তারিখ —৩০.০৬.২০২৫ ইং।
চলমান
মোঃ মোস্তফা জামাল ভূঁইয়া
চেয়ারম্যান
প্যান ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ।