ফের চালু হচ্ছে ‘জার্নালিস্ট সেল্টার হোম’
ঢাকায় সাংবাদিকদের জন্য মাত্র ৫০০ টাকায় থাকা-খাওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানী ঢাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে অনেক সাংবাদিককে অবস্থান করতে হয়। রিপোর্টিং, প্রশিক্ষণ, সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচি কিংবা আদালতের কাজে এসে অনেকেই পড়েন থাকার জায়গা ও খাবারের সংকটে। হোটেলভাড়া এবং দৈনন্দিন খরচের চাপ অনেক সময় তাদের পেশাগত কাজের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিকদের সেই দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করতে আবারও চালু হতে যাচ্ছে ‘জার্নালিস্ট সেল্টার হোম’।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন হাউজিংয়ের ১০/কে ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় নতুনভাবে এই সেবা শুরু হচ্ছে। এটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ড। এখানে সাংবাদিকরা মাত্র ৫০০ টাকায় তিনবেলা খাবারসহ একদিন থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি সংবাদ পাঠানোর জন্য থাকবে কম্পিউটার, ফ্রি ওয়াই-ফাই, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ও ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিএমএসএফ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি মানবিক ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। অনেক সময় সাংবাদিকরা হামলা-মামলার শিকার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন বোধ করেন, আবার কেউ কেউ কাজের প্রয়োজনে অল্প কয়েকদিন ঢাকায় থাকতে বাধ্য হন। তাদের কথা ভেবেই এই স্বল্প খরচের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “২০২২ সালে রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় আমরা প্রথমবারের মতো সেল্টার হোম চালু করেছিলাম। সেখানে ৩০০ টাকায় থাকা ও তিনবেলা খাবারের সুবিধা দেওয়া হতো। প্রায় দুই বছর এটি চালু ছিল, পরে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এবার আরও উন্নত ব্যবস্থাপনায় পুনরায় এটি চালু হচ্ছে।”
সেল্টার হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক এস এস রুশদি বলেন, “২৪ ঘণ্টা সেবা অব্যাহত থাকবে। সাংবাদিকদের আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবেশে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কল্যাণে আমরা বদ্ধপরিকর।” তিনি জানান, নতুন সেল্টার হোমে একসঙ্গে ২০ জন সাংবাদিক থাকার সুযোগ থাকবে। নারী সাংবাদিকদের জন্য থাকবে আলাদা কক্ষ ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি কক্ষেই থাকবে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, পরিচ্ছন্ন বিছানা এবং কাজের উপযোগী পরিবেশ।
বিএমএসএফ সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই সেল্টার হোমকে আরও সাংবাদিকবান্ধব করতে নতুন কিছু সেবা যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে সাংবাদিকদের আইনি সহায়তা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও একই ধরণের আবাসন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
যশোরের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জেমস আব্দুর রহিম রানা এই উদ্যোগকে যুগোপযোগী ও মানবিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “ঢাকায় এলে অনেক সময় সাংবাদিকরা থাকার জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়েন। হোটেল বা অতিথিশালায় থাকা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই সমস্যায় পড়েন। মাত্র ৫০০ টাকায় তিনবেলা খাবারসহ নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা সাংবাদিক সমাজের জন্য একটি বড় স্বস্তি বয়ে আনবে।”
রাজধানীর ব্যস্ত নগর জীবনে সাংবাদিকদের জন্য এমন একটি আশ্রয়কেন্দ্র কেবল আবাসন নয়—এটি একটি সহমর্মিতা, পেশাগত ঐক্য ও মানবিক নিরাপত্তার প্রতীক। পুনরায় চালু হতে যাওয়া ‘জার্নালিস্ট সেল্টার হোম’ ঢাকার বাইরে থেকে আগত সাংবাদিকদের জন্য যেন এক টুকরো নির্ভরতার ঠিকানা হয়ে ওঠে—এমনটাই প্রত্যাশা সাংবাদিক সমাজের।