মোঃ আজিম উদ্দিনঃ
*পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার: কুরআনের নির্দেশ ও মানবিক দায়িত্ব*
🌼🤲🌼🤲🌼😯
“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভ ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে।”
(সূরা আল আহকাফ: ১৫)
ইসলামে পিতা-মাতার মর্যাদা অত্যন্ত উঁচুস্তরে। কুরআনুল কারীমে বহুবার আল্লাহ তাঁর একত্ববাদের পরপরই পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছেন, যা তাঁদের মর্যাদার প্রমাণ বহন করে। সূরা আল আহকাফ-এর ১৫ নম্বর আয়াত একটি হৃদয়ছোঁয়া অনুস্মারক, যা আমাদের পিতা-মাতার অবদান, বিশেষত মাতৃত্বের কষ্ট ও আত্মত্যাগ স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দায়িত্ব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি মানবিক ও নৈতিক কর্তব্যও বটে।
আরও পড়ুনঃ *ওহী ও সুন্নাহ: ইসলামের ভিত্তি, সীমারেখা এবং প্রমাণের আলোকে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক*
মাতৃত্বের কষ্ট: একটি অবর্ণনীয় ত্যাগ:
> “তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভ ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে।”
(সূরা আল আহকাফ: ১৫)
এই আয়াতে মাতৃত্বের কষ্টের এক গভীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গর্ভকালীন কষ্ট, প্রসবের ব্যথা এবং সন্তানকে বড় করার কষ্টসাধ্য ধাপে ধাপে আল্লাহ তা‘আলা স্মরণ করিয়েছেন। মা যখন সন্তান গর্ভে ধারণ করেন, তখন তাঁর শরীরে নানা রকম পরিবর্তন, মানসিক উদ্বেগ, ও বহু ত্যাগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়—এইসবই ইসলামের দৃষ্টিতে সম্মানের পাত্র।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
> “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে।”
(সুনান আন-নাসাঈ, হাদীস: ৩১০৪)
এ হাদীস মা-বাবার বিশেষ করে মায়ের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও খেদমতের গুরুত্বকে অত্যন্ত উচ্চস্থানে নিয়ে যায়।
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার: একটি ঈমানী দায়িত্ব
পিতা-মাতা উভয়ের সাথেই সদ্ব্যবহারের নির্দেশ একাধিকবার কুরআনে এসেছে:
> *”তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা শুধু তাঁরই ‘ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।”*
(সূরা বনী ইসরাইল: ২৩)
এ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা শুধু সদ্ব্যবহার বলেই ক্ষান্ত হননি, বরং ‘উফ’ বলাটুকু পর্যন্ত নিষেধ করেছেন, যা এই নির্দেশনার গুরুত্ব ও স্পষ্টতাকে তুলে ধরে।
আরও পরুনঃ লামায় যৌথ অভিযানে বালুখেকু আব্দু শুক্কুর ও আলতাজ মিয়া গ্রেফতার, পৃথক কারাদণ্ড
হাদীসে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করলাম:
> “আল্লাহর নিকট কোন কাজটি অধিক প্রিয়?”
তিনি বললেন, “সলাত তার সময়মতো আদায় করা।”
আমি বললাম, “তারপর কোনটি?”
তিনি বললেন, “পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার।”
আমি বললাম, “তারপর?”
তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫২৭)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর কাছে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার সলাতের পরেই সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কাজ।
সদ্ব্যবহারের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা:
১. নম্র ও দয়া মিশ্রিত ভাষা ব্যবহার করা:
> “তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো।”
(সূরা বনী ইসরাইল: ২৩)
২. তাদের জন্য দু’আ করা:
> “হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন করে তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।”
(সূরা বনী ইসরাইল: ২৪)
৩. চাহিদা ও প্রয়োজনের সময় পাশে থাকা:
> বৃদ্ধ বয়সে সন্তানই হয় একমাত্র আশ্রয়, এ সময় তাদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ইসলামী আদর্শের অংশ।
৪. গোপনে ও প্রকাশ্যে সম্মান ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করা:
যেমন রাসূল ﷺ সাহাবিদের বলতেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজের পরিবার ও পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করে।”
আরও পড়ুনঃ জুলাই ঘোষণা ও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাবনা
সদ্ব্যবহারের ফজিলত:
> “যে ব্যক্তি চায় তার জীবনে বরকত হোক এবং আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।”
(বুখারী ও মুসলিম)
পিতা-মাতার খেদমত ও সদ্ব্যবহার মূলত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার শ্রেষ্ঠতম রূপ। এটি পারিবারিক বন্ধন, আখিরাতে মুক্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে উত্তম সহায়ক।
পিতা-মাতা আমাদের অস্তিত্বের বাহক। তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার কেবল সামাজিক দায়িত্ব নয়; এটি ঈমানের দাবি, আল্লাহর হুকুম এবং রাসূল ﷺ-এর সুন্নাহ। যারা পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে। আসুন, আমরা আমাদের জীবনে পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, খেদমত ও দু’আর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সচেষ্ট হই।
*وَاللهُ وَلِيُّ التَّوْفِيق*
—————
IFM desk
—————