শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনমঃ
ময়মনসিংহে অবৈধ ব্যাটারি অটো তৈরির কারখানা, চুরির সংখ্যা বেড়েই চলেছে মিটফোর্ড এ  নৃশংসভাবে ইট দিয়ে হত্যার ঘটনায় ২ জন ও চট্টগ্রামে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ১১ খন্ড করে গুম করার চেস্তার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার সহ   সাংবাদিকদের সাথে র‍্যাবের মতবিনিময় আরাফাত রহমান কোকো স্পোর্টস একাডেমির উদ্দোগ্যে জোড়া খাসি প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট গাবতলীতে অনুষ্ঠিত *মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি:* *অগ্রগতি ও অন্তরায়* *জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লব: আইন, নীতি, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের আলোকে মনস্তাত্তিক এবং ভৌগোলিক বিশ্লেষণ* দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে শীর্ষ স্থানে কাগতিয়া মাদ্রাসা মিডফোর্ডে ব্যাবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা -কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে ববি’র শিক্ষার্থীরা অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড টাগ ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদেরকে ‘প্রশংসাপত্র’ প্রদান করলো ‘আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (IMO যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ১৩৫৩ কর্মকর্তা ছাঁটাই সন্তান জন্ম দিতে এখনো আমেরিকায় আসছেন বাংলাদেশি দম্পতিরা গ্রিনকার্ডধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত আদেশ স্থগিত শিকাগো ম্যারাথন ও আয়রনম্যান নিউইয়র্কে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশি মিশু চাঁদপুরে খুতবা পছন্দ না হওয়ায় ইমামকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা ! রাজনীতি, সন্ত্রাস ও নৈতিক পতন: একটি ভয়াবহ বাস্তবতা যেই লাউ সেই কদু *”যোগ্য বিচার চাই – মানবতা যেন হার না যায়!”* এডভোকেট এম হেলাল উদ্দিনের সংক্ষিপ্ত সফর: মেহেন্দিগঞ্জের মানুষের পাশে মানবিক নেতার একদিন মিটফোর্ড খুন- খুব শীঘ্রই সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি দিতে হবে, নয়তো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রদত্যাগ করার, দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তুলবো কাউকে মানসিক কষ্ট দিচ্ছেন? খুব যত্ন করে দিন, যাতে কেউ টের না পায়!

তরুণ জোহরান মামদানির রাজনৈতিক উত্থানে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন

রিপোর্টার নাম
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫

হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ

জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে যেন এক নতুন ইতিহাসের সূচনা ঘটতে চলেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। শুধু বয়সেই তরুণ নন, তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক ভিন্নধর্মী জনপ্রিয় রাজনৈতিক প্রতিমূর্তি।

এদিকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পরই জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে আলোচনায় উঠে এসেছেন জোহরান মামদানি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও তা ছিল রীতিমতো তীর্যক ও কটাক্ষ।

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এ এক পোস্টে তিনি জোহরানকে “কট্টর কমিউনিস্ট উন্মাদ” বলে আখ্যা দেন। প্রেসিডেন্টের কটাক্ষে যতটা তির্যকতা ছিল, ততটাই সুযোগ এনে দিয়েছে জোহরানের জন্য। তরুণ, সৎ ও বামঘেঁষা রাজনীতির এই মুখ হয়ে উঠেছেন একটি প্রজন্মের স্বপ্নের বাহক।

ট্রাম্প জোহরানকে উদ্দেশ্য করে ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “আমরা আগেও র্যাডিকাল বামপন্থীদের দেখেছি, কিন্তু এবার ব্যাপারটা হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওর চেহারা বাজে, গলা কর্কশ, খুব বেশি বুদ্ধিমানও না।”

প্রাইমারিতে জোহরানের জয়ের পর ট্রাম্পের প্রথম প্রতিক্রিয়া। বিশ্লেষকদের মতে, এমন মন্তব্য জোহরানের রাজনৈতিক উত্থানকেই আরও জোরালো করছে। মামদানির জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তৃণমূলভিত্তিক প্রচারাভিযান প্রচলিত ধারাকে ভেঙে দিয়েছে। ট্রাম্পও এভাবে প্রচলিত ধারাকে ভেঙেছিলেন, তবে মামদানির বার্তা ও সমর্থক জোট ট্রাম্পের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি তিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হন, তাহলে সেটিই হবে তাঁর বৃহৎ রাজনৈতিক যাত্রার শুরু। একজন মুসলিম, দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী তরুণ হিসেবে তাঁর জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ কেবল সময়ের ব্যাপার।

তাঁর বয়স, মুসলিম পরিচয় এবং অভিবাসী পটভূমিকে ইঙ্গিত করে এই বক্তব্য দেয়ায় ব্যাপক আলোচনার তৈরি হয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যই জোহরানের রাজনৈতিক ও জনভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।

জোহরান নিজেও বিষয়টিকে গ্রহণ করেছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন—
‘‘আমার রাজনৈতিক এমন অবস্থান ও জয় নিয়ে যদি কেউ ভয় পায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে আমি সঠিক পথেই হাঁটছি। আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন—একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী, যে সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে লড়ে।’

আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মেয়র নির্বাচন। এ পদে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এই মুসলিম তরুণ। যদিও এখনো মূল মেয়র নির্বাচন বাকি, তবে তার আগেই জোহরান যেন জয় করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের মন।

জোহরান মামদানির পরিচয়ে রয়েছে অনেক স্তর। জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়, বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ মামদানি, মা বলিউডের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ার। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে চলে আসেন জোহরান। এরপর নিউইয়র্কের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন তিনি।

২০১৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। রাজনীতিতে পদার্পণ করেন মাত্র কয়েক বছর আগে। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে—ধনসম্পদ কিংবা রাজনৈতিক অভিজাতগোষ্ঠীর নয়।
জোহরানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোই তাঁকে ভিন্ন করে তুলেছে।

অতীতের মেয়র প্রার্থীরা যেখানে করপোরেট স্বার্থে হেলে পড়েন, জোহরান স্পষ্ট করে বলেছেন—তিনি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবেন।
তাঁর প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে:
প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যায্য মূল্যের সরকারি মুদিদোকান
দুই লাখ নতুন সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ
ভাড়ানিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টে ২০২9 সাল পর্যন্ত ভাড়া না বাড়ানোর অঙ্গীকার
প্রত্যেক শিশু পরিবারে বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার
এবং গণপরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে নগরব্যাপী সরকারি বাসে বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা

আরও পড়ুনঃ বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামননায়) বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে মাওলানা শামীম

এই পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে দিয়ে জোহরান শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেননি, তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন—একটি অধিক মানবিক, বাসযোগ্য, ন্যায়ভিত্তিক নিউইয়র্ক সিটির।
তরুণ, মুসলিম এবং অশ্বেতাঙ্গ—এই পরিচয়গুলো মিলিয়ে জোহরানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে। বিশেষ করে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা জোহরানকে দেখছেন নিজস্ব প্রতিনিধি হিসেবে।

এই আবেগকে আরও গভীর করেছেন জোহরান নিজেই। নিউইয়র্ক সিটির প্রথম নির্বাচিত বাঙালি কাউন্সিলর শাহানা হানিফকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাংলায় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেন। সেখানে তিনি সরাসরি বাংলাদেশি ভোটারদের উদ্দেশে আহ্বান জানান—ভবিষ্যতের একটি ন্যায্য শহর গড়ার আন্দোলনে অংশ নিতে।

ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমোর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে হারিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন জোহরান। বিজয়ের পর ২৪ জুন রাতের বক্তৃতায় তিনি সকল সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান—বিশেষ করে ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’, যাঁরা স্বেচ্ছাশ্রমে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন।

এই অংশটি ভোটারদের মনে আবেগের ঢেউ তোলে, কারণ রাজনীতিতে এমন আন্তরিক স্বীকৃতি খুব কমই দেখা যায়। জোহরানের এই মনোভাব তাঁর রাজনৈতিক দর্শনেরই প্রতিফলন—রাজনীতি হবে নিচুতলার মানুষকে নিয়ে, তাঁদের কণ্ঠস্বরকে সম্মান জানিয়ে।
জোহরান মামদানি এখনো নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হননি। তবে তিনি ইতিমধ্যে জয় করে নিয়েছেন মানুষের আস্থা। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে একজন তরুণ, অভিবাসী মুসলিম প্রার্থী কীভাবে লাখো মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন, জোহরান তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

নভেম্বরের নির্বাচন শুধু একজন মেয়র বেছে নেওয়ার বিষয় নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি বার্তা পাঠানোর উপলক্ষ, যে নিউইয়র্ক তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করে, প্রগতিকে ধারণ করে এবং নতুন নেতৃত্বকে স্থান দিতে প্রস্তুত।ছবিতে মাঝে জোহরান মামদানী,বামে রাজনীতিক ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন এবং ডানে ডেমোক্র্যাট দেলওয়ার মানিক ।নিউইয়র্কে গত মে মাসে বাংলাদেশ ডে পেরেড অনুষ্ঠানে ।


এই বিভাগের আরও খবর