নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কারবালার ঘটনাকে অনেকেই নিছক একটি শোকাবহ অধ্যায় হিসেবে দেখেন, কিন্তু সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) এর মূল্যবান বাণীগুলো আমাদের একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত কেবলই পানির পিপাসায় অসহায় আত্মসমর্পণ ছিল না; বরং এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার মাঝে এক সুস্পষ্ট বিভাজন রেখা অঙ্কন।
ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর মর্যাদা ও খাজা বাবার বিনয়
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর প্রতি নিজের অপরিসীম ভক্তি ও বিনয় প্রকাশ করে বলেছেন, “ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর জুলজেনা’র (ঘোড়ার নাম) পদধূলা বলতেও নিজেকে লজ্জাবোধ করি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যদি তিনি সেদিন কারবালার মাঠে একটি আঙ্গুল দিয়েও খোঁচা দিতেন, তাহলে আল্লাহর কসম, সঙ্গে সঙ্গে পানির নহর বয়ে যেত। এই উক্তিটি ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর আধ্যাত্মিক উচ্চতা এবং খাজা বাবার নিজের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে একটি ইঙ্গিত দেয়, যা তিনি ইমামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ব্যবহার করেননি।
পৃথ্বীরাজের ঘটনা: ইয়াজিদের প্রতি ধিক্কার
ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, যখন পৃথ্বীরাজ খাজা বাবার পানি বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন গাউছে পাক খাজা বাবা হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন: “ওহে ইয়াজিদের বাচ্চা, তুই কি এটা কারবালা পেয়েছিস? হোসাইনের গোলামের পানি বন্ধ করার সাহস কার? তুই কি আমার পানি বন্ধ করবি?
তোর সমগ্র রাজস্থানের পানি আমি আমার এ বাটির মধ্যে তুলে নিলাম।” কথিত আছে, এর ফলে সমগ্র রাজস্থানের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল, এমনকি মায়ের স্তনের দুধও শুকিয়ে যায়। এই ঘটনাটি খাজা বাবার প্রতিপত্তি এবং ইয়াজিদের প্রতি তার তীব্র ধিক্কারের প্রমাণ। তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর পানি বন্ধ করার মতো জঘন্য কাজ কেবল ইয়াজিদের বংশধররাই করতে পারে।
ইমাম হোসাইন (রাঃ) কেন অলৌকিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেননি?
খাজা বাবা প্রশ্ন তোলেন, যার হাতে হাউজে কাওসারের কর্তৃত্ব, যিনি সমগ্র জান্নাতীদের জামে ওয়াহাদাত পান করাবেন, যিনি বেহেশতের সর্দার – সেই প্রিয় নবীজীর নয়ণের মণি, খাতুনে জান্নাতের কলিজার টুকরা ইমাম হোসাইন (রাঃ) কিভাবে পিপাসিত থাকতে পারেন? এখানে খাজা বাবা নিজেই উত্তর দিয়েছেন: তিনি ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর একজন ‘গোলামের গোলাম’ হয়েও যে অলৌকিক কাজটি করতে পারতেন বলে কসম করে বলেছেন, ইমাম হোসাইন (আ:) কেন ‘আকা’ হয়ে সেই কেরামতটি দেখালেন না?
আরও পড়ুনঃ হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু ও আচ ব্রিজের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এলজিইডি সচিব
এর কারণ অত্যন্ত গভীর। ইমামে আলী মোকাম হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ধৈর্য ও সবরের অগ্নি পরীক্ষায় আল্লাহর রেজাবন্দীর (সন্তুষ্টির) উপর ছিলেন সন্তুষ্ট। আল্লাহওয়ালাদের ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় তিনি জয়ী হয়েছিলেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি মোহাম্মদী ইসলাম ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর শাহাদাত ছিল ত্যাগের এক মহিমান্বিত দৃষ্টান্ত, যা মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে অনুপ্রাণিত করে।
খাজা বাবার এই বাণীগুলো কারবালার শিক্ষাকে নতুনভাবে উপলব্ধিতে সাহায্য করে। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এক চিরন্তন বার্তা – যেখানে সত্যের জয় হয় ত্যাগের মাধ্যমে, ধৈর্যের মাধ্যমে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাসের মাধ্যমে।
-ইলমে মারেফত علم معرفة