কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে এক কিশোরের ওপর প্রেমের দায়ে চালানো হয়েছে ভয়াবহ মধ্যযুগীয় বর্বরতা। প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ঘরে আটকে গলায় গামছা প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা, হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন, এমনকি নখে সুই ঢুকিয়ে পঙ্গু করার মত নৃশংসতা চালিয়েছে অভিযুক্তরা।
অথচ এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরও মামলা নিচ্ছে না পুলিশ—যা আইনের প্রতি ভয়াবহ অবহেলার দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ভুক্তভোগী কিশোরের নাম আশরাফুল ইসলাম সজিব (১৭)। সে চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি ঢুষমারা গ্রামের মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে।
তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই ইউনিয়নের এক কিশোরীর (১৪) সঙ্গে। ঘটনার সূত্রপাত ৯ জুন সন্ধ্যায়, প্রেমিকাকে দেখা করতে গেলে কৌশলে তাকে বাড়ির সামনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন সকালে তাকে ফাঁদে ফেলে গয়নার পটল এলাকার একটি ঘরে আটকে রাখা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ১০ জুন সকালে ১২-১৩ জন মিলে পরিকল্পিতভাবে সজিবকে ঘরে আটকে লাঠি, দা, ছোরা, বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন চালায়। গলায় গামছা প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়, দুই হাতে ও পায়ে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করা হয়।
এরপর শুরু হয় পৈশাচিক নির্যাতন—লোহার চেইন দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর, শরীরজুড়ে কালশিটে, রক্তাক্ত জখম এবং নখে সুই ঢুকিয়ে শারীরিক অঙ্গহানির ভয়ঙ্কর চেষ্টা। এমন বর্বর নির্যাতনের পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ১৫ জুন ভুক্তভোগীর বাবা আলমগীর হোসেন ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে চিলমারী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করেনি।
আরও পড়ুনঃ বালিয়াডাঙ্গীতে ৩দিন ব্যাপি ফল মেলার উদ্বোধন
অভিযোগকারী বাবা বলেন, “ছেলেকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছে। পুলিশ মামলা নিচ্ছে না, বরং প্রমাণ, ভিডিও, মেডিকেল রিপোর্ট চাইছে। আমরা কাগজ দিয়েছি, ছবি দিয়েছি। তবু মামলা নেয়নি। উল্টো বলছে কোর্টে যান। আমি থানায় এসেছি, কিন্তু পুলিশ বারবার সময় নিচ্ছে।”
অভিযুক্তদের একজন রফিকুল নামের ব্যক্তি ঘটনার দায় অস্বীকার করে বলেন, “স্থানীয়দের উদ্যোগে ছেলেটিকে ফিরিয়ে আনা হয়, পরে গার্জিয়ানরা শাসন করেছে।” তবে পুলিশের নিরব ভূমিকা ও ঘটনাটিকে স্থানীয় বিরোধ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এলাকাবাসী।
চিলমারী মডেল থানার ওসি মো. আব্দুর রহিম বলেন, “এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করতে হলে জেলা পুলিশ সুপারের অনুমোদন প্রয়োজন। এখনো সে অনুমোদন আসেনি।”
এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন মহল বলছেন, এ ধরনের নৃশংস নির্যাতন সভ্য সমাজে একমাত্র আইনের মাধ্যমেই বিচার হওয়া উচিত।
কিন্তু পুলিশের গড়িমসি ও নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীরা সাহস পাচ্ছে, আর ভুক্তভোগীরা পাচ্ছে না ন্যায়বিচার।