ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ
*ঈসা (আ.)-এর মায়েদা (খাদ্যপূর্ণ পাত্র)-এর জন্য আবেদন:*
_কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈসা (আ.)-এর মায়েদার (খাদ্যপূর্ণ পাত্র) জন্য আবেদন এবং তাঁর প্রেরণের উদ্দেশ্য—এই দুটি বিষয় একত্রে ভূমিকা, মায়েদা নাযিলের প্রেক্ষাপট, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, শিক্ষা, হিকমাহ এবং উপসংহার আলোচনা করা হলো, আল-হামদু লিল্লাহ।_
_ভূমিকা:_ ঈসা (আ.) ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মহান নবী ও রাসূল, যিনি ছিলেন মারিয়াম (আ.)-এর পুত্র এবং আল্লাহর এক বিশেষ নিদর্শন। তাঁকে বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। তাঁর জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মায়েদা (খাদ্যপূর্ণ পাত্র) চাওয়া।
এই ঘটনা কুরআনের সূরা আল-মায়েদায় উল্লেখিত হয়েছে। আবার তাঁর প্রেরণও ছিল মানবজাতিকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করার জন্য। এই প্রবন্ধে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সেই ঘটনা ও প্রেরণের উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো।
*১. ঈসা (আ.)-এর মায়েদা (খাদ্যপূর্ণ পাত্র) চাওয়ার ঘটনা:*
_১.১ হাওয়ারী-সাথীদের প্রশ্ন:_ একবার হাওয়ারী বা তাঁর ঘনিষ্ঠ সাথীরা ঈসা (আ.)-কে অনুরোধ করল: “হে ঈসা ইবনে মারইয়াম, আপনার রব্ব কি আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য পরিপূর্ণ একটি পাত্র পাঠাতে সক্ষম?”। (সূরা আল-মায়েদা, ৫:১১২)!
আরও পড়ুনঃ যাত্রাবাড়ী নিউ মেঘনা আবাসিক হোটেলের নামে নির্বিঘ্নে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ
_১.২ ঈসা (আ.)-এর সতর্কতা:_ হাওয়ারীদের এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঈসা (আ.) তাদের প্রথমেই সাবধান করলেন: “আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মু’মিন হও”। (সূরা আল-মায়েদা, ৫:১১২)! কারণ, এমন নিদর্শন চাওয়ার অর্থ ছিল আল্লাহর তাওহীদে সন্দেহ প্রকাশ করা, যা ঈমানের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
_১.৩ দু‘আ এবং আল্লাহর শর্ত:_ অবশেষে ঈসা (আ.) বললেন: “হে আমাদের রব্ব, আমাদের প্রতি আকাশ থেকে একখানা মায়েদা (খাদ্যপূর্ণ পাত্র) নাযিল করো, যা আমাদের জন্য হবে এক ঈদ-উৎসব, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য এবং তা হবে তোমার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন। আমাদের রিজিক দান করো, তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা”। (সূরা আল-মায়েদা, ৫:১১৪)!
_১.৪ আল্লাহ উত্তর দিলেন:_ “আমি তা অবশ্যই তোমাদের উপর নাযিলকারী হব। অতঃপর যদি এর পরে তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করে, তবে আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যা জগতের অন্য কোনো জাতিকে দিব না”। (সূরা আল-মায়েদা, ৫:১১৫)! অর্থাৎ মায়েদা (খাদ্যপূর্ণ পাত্র) এক বিরাট নিদর্শন, কিন্তু তার পরেও অবিশ্বাস করলে শাস্তি হবে কঠিনতম।
*২. ঈসা (আ.)-এর প্রেরণের উদ্দেশ্য:*
_২.১ তাওহীদের প্রচার:_ ঈসা (আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন মানুষের মধ্যে একত্ববাদ (তাওহীদ) প্রচার করতে। কুরআন বলেন: “আর যখন ঈসা ইবনে মারিয়াম বলেছিলেন, হে বনী ইসরাইল, আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার রব্ব এবং তোমাদের রব্ব”। (সূরা মায়েদা, ৫:৭২)!
_২.২ পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন:_ ঈসা (আ.) তাওরাতের সত্যায়ন করেছেন এবং নতুন কিতাব ইনজীল পেয়েছেন। “আর আমরা তাদের পেছনে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারিয়ামকে, যিনি তাওরাতের সত্যায়নকারী; আমরা তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি”। (সূরা মায়েদা, ৫:৪৬)!
_২.৩ গোমরাহীর বিরুদ্ধে সাবধানবাণী:_ ঈসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছেন: “আল্লাহই আমার রব্ব এবং তোমাদের রব্ব, সুতরাং তাঁরই ইবাদত করো। এটাই সরল পথ”। (সূরা আলে-ইমরান, ৩:৫১)! এতে প্রমাণিত, তিনি নিজেকে কখনো আল্লাহর পুত্র বলেননি, বরং আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ পানছড়িতে জুলাই শহিদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত
_২.৪ হাদীসের প্রমাণ:_ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বহু হাদীসেও এসেছে, ঈসা (আ.) কিয়ামতের আগে ফিরে আসবেন, এবং সত্যের ঘোষণা দিবেন যে, তিনি আল্লাহর পুত্র নন, বরং তাঁর রাসূল। “তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ঈসা অবতরণ করবেন। তিনি ইনসাফের সাথে শাসন করবেন…”-(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৫৫)!
*৩. শিক্ষা ও হিকমাহ:*
_৩.১ আল্লাহর নিদর্শন সন্দেহের জন্য নয়:_ মায়েদা চাওয়া শিক্ষা দেয়, অযথা নিদর্শন চাওয়া বিশ্বাস দুর্বলতার লক্ষণ।
_৩.২ দাওয়াহর গুরুত্ব:_ ঈসা (আ.) আমাদের শিক্ষা দেন, মানুষকে তাওহীদের দিকে ডাকা সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব।
_৩.৩ অতিরিক্ত গৌরব দেবতা বানায়:_ ঈসা (আ.) আল্লাহর প্রিয় রাসূল হলেও তাঁকে আল্লাহর পুত্র বলা ইসলামে শিরক।
_৩.৪ দু’আর গুরুত্ব:_ ঈসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য দু’আ করেছেন, আমাদেরও উচিত আল্লাহর উপর নির্ভর করা।
আরও পড়ুনঃ ৭ দফা দাবি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী’র জাতীয় সমাবেশ,১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, অতপর
*৪. উপসংহার:*
ঈসা (আ.)-এর মায়েদা (খাদ্যপূর্ণ পাত্র) চাওয়া ও তাঁর প্রেরণ আমাদের জন্য বড় শিক্ষা। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, তাওহীদের দাওয়াতদাতা। তাঁর জীবনে একদিকে নিদর্শন, অন্যদিকে সতর্কবার্তা। তিনি কখনো নিজেকে আল্লাহর পুত্র বলেননি। ইসলামের এই দিকনির্দেশনা আমাদের শিখায়—আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা, নিদর্শন চাওয়ার আগে বিশ্বাস দৃঢ় করা এবং আল্লাহর সাথে কোনো সৃষ্টিকে শরীক না করা।
*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ১৬-০৭-২৫)