শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

ইসলামে বিভিন্ন দল ও উপদল: বিভক্তির কারণ, ফলাফল ও উত্তরণের পথ

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ / ২১ Time View
Update : রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ডাঃ এম, জি, মোস্তফা মুসাঃ

*ইসলামে বিভিন্ন দল ও উপদল: বিভক্তির কারণ, ফলাফল ও উত্তরণের পথ*

_ভূমিকা:_ ইসলামের মূল পরিচয় হলো “মুসলিম”। আল্লাহ বলেন: “তোমাদেরকে তিনি পূর্বেও এবং এ কুরআনেও মুসলিম নামকরণ করেছেন।” (সুরা হজ, ২২:৭৮)!

কিন্তু ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুসলমানরা নিজেদের মাঝে মতপার্থক্যের কারণে বিভিন্ন দল, মাযহাব ও উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শিয়া-সুন্নি বিভক্তি, ফিকহী মাযহাবের উদ্ভব, আহলে হাদীস নামকরণ, এমনকি আধুনিক যুগে “কুরআনিষ্ট” বা “লিবারেল মুসলিম” ইত্যাদি নতুন নতুন পরিচয় মুসলিম সমাজে জন্ম নিয়েছে। এর ফলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে দ্বন্দ্ব ও বিভাজন বেড়েছে।

*১. বিভক্তির শুরুর কারণ:*

_১.১ রাজনৈতিক বিভক্তি:_ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইন্তিকালের পর খিলাফতের প্রশ্নে ভিন্নমত থেকে শিয়া-সুন্নি বিভক্তির সূচনা হয়।

_২.২ ফিকহী ও ইজতিহাদী পার্থক্য:_ সাহাবা ও তাবেঈনরা আল্লাহর বাণী ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ বোঝার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা আলাদা আলেমদের মতামতের কারণে চারটি প্রধান মাজহাব গড়ে ওঠে (হানাফি, মালেকি, শাফিঈ, হাম্বলি)।

_১.৩ হাদীস গ্রহণ ও ব্যাখ্যার ভিন্নতা:_ কেউ সরাসরি হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছে (আহলে হাদীস), আবার কেউ ইজতিহাদ ও কিয়াসকেও গুরুত্ব দিয়েছে (ফিকহী মাজহাবপন্থীরা)।

_১.৪ দার্শনিক ও কালামী চিন্তার প্রভাব:_ গ্রিক দর্শনের প্রভাবে মুতাযিলা, আশআরি, মাতুরিদি ইত্যাদি চিন্তাধারার উদ্ভব হয়।

_১.৫ আধুনিক চ্যালেঞ্জ:_ ঔপনিবেশিক যুগে পশ্চিমা চিন্তার প্রভাবে কুরআনিষ্ট, আধুনিকতাবাদী মুসলিম, এমনকি লিবারেল ও সেক্যুলার ব্যাখ্যা উদ্ভব হয়েছে।

*২. ইসলামে দলের প্রতি সতর্কবার্তা:*

_২.১ আল্লাহ তাআলা বলেন:_ “নিশ্চয় যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং দলে দলে হয়েছে, তাদের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।” (সুরা আল-আন‘আম, ৬:১৫৯)!

আরও পড়ুনঃ মুসলিম জাতিসত্তা এবং ১৯০৫ সালই হল বাংলাদেশের ভিত্তি মূল, পর্ব ২১

_২.২ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:_ “ইহুদিরা বিভক্ত হয়েছিল ৭১ দলে, খ্রিস্টানরা হয়েছিল ৭২ দলে, আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। এর মধ্যে একটি দল ছাড়া বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযি)! সহীহ বর্ণনায় এসেছে, সেই নাজাতপ্রাপ্ত দল হলো “যারা আমার এবং আমার সাহাবীদের পথে থাকবে।”

*৩. বিভক্তির নেতিবাচক প্রভাব:*

_৩.১ ঐক্যের ধ্বংস:_ মুসলমানরা পারস্পরিক শত্রুতা ও সন্দেহে জড়িয়ে পড়ে।

_৩.২ রাজনৈতিক দুর্বলতা:_ বিভক্তির কারণে মুসলমানরা পরাশক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে।

_৩.৩ ধর্মীয় অজ্ঞতা:_ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে—কোন দল সত্য? কাকে অনুসরণ করবে?

_৩.৪ হিংসা ও রক্তপাত:_ ইতিহাসে অনেক খুনোখুনি, ফিতনা ও যুদ্ধের মূল কারণ ছিল এই বিভক্তি।

*৪. উত্তরণের উপায়:*

_৪.১ একক পরিচয় “মুসলিম” গ্রহণ করা:_ দলীয় টাইটেল বাদ দিয়ে কেবল “মুসলিম” পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া।

_৪.২ কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়া:_ সকল দল ও মাজহাবের উপরে চূড়ান্ত মানদণ্ড হলো কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সহীহ সুন্নাহ।

_৪.৩ মতপার্থক্যে সহনশীলতা:_ সাহাবারা ইজতিহাদী বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন, কিন্তু তারা একে অপরকে কাফের বলেননি। আমাদেরও সেই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

_৪.৪ আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্ধ অনুসরণ নয়:_ মাযহাবের ইমামগণ সবাই ইসলামের খেদমত করেছেন। তাদের প্রতি সম্মান রাখতে হবে, তবে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিকল্প করা যাবে না।

_৪.৫ দলীয় শ্রেষ্ঠত্ব দাবী থেকে বিরত থাকা:_ মুক্তির দল কোনো নির্দিষ্ট নামধারী দল নয়; বরং যারা কুরআন ও সুন্নাহর ওপর অটল থাকে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত। কুরআনে তাঁদেরকেই ‘মুসলিম’ বলা হয়েছে, যাঁরা অন্যসব দল ও উপদল নামকরণ থেকে মুক্ত।

আরও পড়ুনঃ দীর্ঘ ১৮ বছর পর বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ বিএনপির সম্মেলন সভাপতি বাবুল সম্পাদক ইয়াদ

*৫. উপসংহার:* ইসলামের আসল পরিচয় হলো “মুসলিম”। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ ও সাহাবাদের অনুকরণই আমাদের প্রকৃত পথ। শিয়া-সুন্নি, মাযহাবপন্থী, আহলে হাদীস কিংবা কুরআনিষ্ট—সব পরিচয় তখনই কল্যাণকর যখন তা বিভক্তি নয় বরং ইসলামের মূলনীতির প্রতি অনুগত হতে সাহায্য করে।

আমাদের করণীয় হলো বিভাজনমুক্ত হয়ে একক পরিচয় “মুসলিম” গ্রহণ করা, কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ অনুসরণ করা এবং দলে দলে বিভক্ত হওয়ার বদলে ঐক্যবদ্ধ উম্মাহ হিসেবে দুনিয়ায় ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা।

“এটাই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এটিই অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথে চলো না, তা হলে সেগুলো তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত করবে।” (সুরা আল-আন‘আম, ৬:১৫৩)!

_এটিকে সিরিজ আকারে লেখা হবে, ইন-শা-আল্লাহ; প্রথম অংশে শিয়া-সুন্নি বিভক্তি, দ্বিতীয়তে মাযহাবপন্থা, তৃতীয়তে আহলে হাদীস ও চতুর্থ অংশে কুরআনিষ্ট আন্দোলন, আর শেষে থাকবে সমাধান।_

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ১৭-০৮-২৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category