মাওলানা মাহমুদুল হাসান রাশাদী ,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কিছু শিক্ষিত, মধ্যপন্থী মুসলমান ভাইয়েরা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, আলেম-উলামা, ইমাম-মুয়াজ্জিন ও বিশেষ করে বেসরকারি (খারেজি) মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত।
তাদের এই ভাবনা দেখে ভালোই লাগলো। আলেম-উলামাদের, মাদ্রাসার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন—এ জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছি।
প্রথমেই স্পষ্ট করি:
বাংলাদেশের সমাজে মাত্র ২% মুসলিম শিশু মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। এদের মধ্যে অনেকে আসে এমন পটভূমি থেকে, যেখানে স্কুলে গিয়ে পড়তে পারেনি, লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছে বা সমাজে ‘দুষ্টু’ বলে বিবেচিত। তবে অবশ্যই কিছু মেধাবী ও ভালো ছাত্রও আসে মাদ্রাসায়।
আলেম-উলামারা অন্তত এই শিশুদের অসামাজিকতা ও অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পেরেছেন—এটাই বড় সেবা। হ্যাঁ, মাদ্রাসা শিক্ষায় সংস্কার, আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী রূপান্তরের প্রয়োজন আছে—এ নিয়ে দ্বিমত নেই।
আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে, ভাঙচুর
কিন্তু যখন এ শিক্ষার অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়—তাও নিজেরই জাতির কিছু তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবীর’ পক্ষ থেকে—তখন সেটা সত্যিই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের একটুখানি ভাবুন: সমাজের শতকরা ৯৮% শিশু যারা স্কুল-কলেজ-মহাবিদ্যালয়ে পড়ে—তাদের অবস্থা কী? তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নৈতিকতা, চাকরি, কর্মসংস্থান—কোথায়? গ্রামের স্কুল-মাস্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বুদ্ধিজীবী—তারা নিজের সমাজের জন্য কী ভাবছেন? তারা কি রাতদিন সমাজের সেবা করছেন?
আসলে, যারা আধুনিক শিক্ষা নিয়েছেন, তাদের কাছেই তো ছিল বেশি সুযোগ, অর্থ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। তারা সমাজকে কী কী দিলেন? আপনি নিজেই নিজের পাড়া-গ্রামে খুঁজে দেখুন: সরকারি মাস্টার, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী—তাদের মধ্যে কে কতটা সমাজ নিয়ে ভাবে?
৯৮% শিশুরা, যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত—তারা এখন কোন অবস্থায় আছে?আপনার এলাকায় টিউশন পড়ানোর মতো শিক্ষিত তরুণ কজন? স্থানীয় থানায় গিয়ে দেখুন—কারা বেশি অপরাধে জড়িত? সন্ধ্যায় দেখুন—কতজন শিশু লেখাপড়া করছে, আর কতজন আড্ডা, গেম বা নেশায় মত্ত?
আমরা স্বীকার করি—মাদ্রাসা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী তৈরি করছে না।
তবে যারা করছে, সেই আধুনিক শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা—তাদের পরিকল্পনা কী?
তারা কি এই সমাজকে নতুন কিছু উপহার দিতে পেরেছে?
কোন আলেম-উলামা তো কখনও বলেননি—‘তোমরা ডাক্তার, মাস্টার, উকিল হবে না’। বরং তারাই সবসময় বলেন—তোমরা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রসর হও, সমাজের নেতৃত্ব দাও। কিন্তু তাদেরই আবার বলা হয়—তারা নাকি ‘ব্রেইনওয়াশ’ করছে!
মাদ্রাসার লক্ষ্য ইহকাল ও পরকালে মুক্তি, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সাথে কিছু আধুনিক শিক্ষা যোগ হলেও, মূল শিক্ষা থাকে আত্মিক উন্নতিতে—যা অন্য কোথাও সহজে শেখানো হয় না।
মাদ্রাসার ছেলেরা হয়তো ডাকাত, দুর্নীতিবাজ বা বড় অপরাধী হচ্ছে না। কিন্তু যারা ছোটবেলা থেকেই আধুনিক শিক্ষায় এসেছে—তাদের মধ্যে থেকে অনেকেই তো হচ্ছে।
তাহলে দায় কার?
এ নিয়ে আমাদের আরও গভীরভাবে ভাবা দরকার।