শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

জামায়াত-এনসিপিকে কী আকৃষ্ট করছে

প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলীঃ / ১০ Time View
Update : বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলীঃ

বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বিদেশি শক্তির খেলার শিকার হয়ে আসছে, জাতির জন্য কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়া। অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের নেতারা মিথ্যা আশ্বাস ও লোভনীয় প্রলোভনে পড়ে নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছিল। আজও একইভাবে ক্ষমতার আশায় রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত-এনসিপি—উভয় দলই এখন এমন প্রলোভনের মুখে।

বিএনপি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষমতায় যাওয়ার আশাবাদী হতে পারে, কিন্তু জামায়াত-এনসিপির জন্য বাস্তবতা ভিন্ন—তাদের পক্ষে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়াই বড় সম্ভাবনা। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ করে দিলেও জামায়াত-এনসিপিকে অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ *ঈসা (আ.): পরিচয়, ত্রিত্ববাদ, এবং আসমানে তোলা—ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ*

রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল সিদ্ধান্ত অতীতে আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। আমাদের তথাকথিত বন্ধুদের দ্বারা বারবার ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। আমাদের নেতারা ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন; একমাত্র ভাসানীই ভারতের কূটচাল ও প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করেছিলেন।

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে। এটি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নয়, বরং ভারতের আধিপত্যকামী রাজনীতি থেকেও জাতিকে মুক্ত করেছে। অনেকেই এই বিপ্লবকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে দেখছেন।

এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে একমাত্র ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের কারণে, যেটি প্রশ্নহীনভাবে জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও আন্তরিকতায় পরিচালিত হয়েছে। তারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন এবং তার প্রভু ভারতের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে নির্ভীকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।

যদিও ছাত্রসমাজের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের ভূমিকাও উপেক্ষা করা যাবে না। তারা সরাসরি রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে না পারলেও দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের ভূমি প্রস্তুত করেছিল। ছাত্রদের সাহসিকতা ছিল সেই আগুনে ঘৃতাহুতি, যা ফ্যাসিবাদী শাসনকে ছারখার করে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ জুলাই বিপ্লবের আবশ্যিকতা:- পর্ব ০৪

এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সুস্থ ও পরিপক্ক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার। পরস্পরকে দোষারোপ করা থেকে সরে এসে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি গড়ে তোলা জরুরি। জনগণ এখন আর নোংরা রাজনীতি দেখতে চায় না; তারা চায় সমন্বিত, দায়িত্বশীল এবং শান্তিপূর্ণ রাজনীতি, যাতে পুরনো এবং নতুন—সব রাজনৈতিক দলই অংশ নিতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে যে মেঘ জমেছে, তা শুভ লক্ষণ নয়। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের মতো আরও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড সামনে আসতে পারে।

দেশে চলমান অস্থিরতার পেছনে বিদেশি শক্তির এজেন্টরা সক্রিয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি রাজনৈতিক দল এবং তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি উপলব্ধি না করে, তবে তার ভয়াবহ পরিণতি তাদের সামনে আসবে, আর বিদেশি শক্তিগুলো তাতে ফায়দা লুটে নেবে। তখন আবারো বাংলাদেশ অপশক্তির নিকট বন্দি হয়ে পড়তে পারে I

আরও পড়ুনঃ মুসলিম জাতিসত্তা এবং ১৯০৫ সালই হল বাংলাদেশের ভিত্তি মূল, পর্ব ১৫

বর্তমানে একটা সুপরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে—যার মাধ্যমে দেশের যেকোনো ঘটনা বা বিশৃঙ্খলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে, যদিও বাস্তবে তেমন কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টা এমন যেন যত দোষ নন্দ ঘোষ I একটি মহল পরিকল্পিত ভাবে বিনপির বিরুদ্ধে অপবাদ চালাচ্ছে Iবিএনপি ও তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার একটি ষড়যন্ত্র, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতিতে বহুমাত্রিক সংকট তৈরি করতে পারে।

এই মুহূর্তে জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই—বিএনপিকেই সমর্থন ও শক্তিশালী করতে হবে। এটি একমাত্র দল, যারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে। তারা অতীতে সরকার পরিচালনায়ও অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। বিএনপি ও তাদের নেতৃত্ব সবসময় জনগণের স্বার্থে কাজ করেছে। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিএনপি ও তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত, যার পরিণতি রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।

জামায়াত-এনসিপি জোট রাজনৈতিকভাবে বিএনপির বিকল্প নয়। তারা কেন দেশের একমাত্র জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, তা জাতির কাছে স্পষ্ট নয়। তারা না প্রস্তুত, না-ই সক্ষম যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য। বিএনপিকে সরিয়ে নিজেদের বিকল্প ভাবা তাদের জন্য একটি মারাত্মক ভুল। বরং তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রামে এক তরুণীকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচালেন নিজের জীবনে ঝুঁকি নিয়ে কক্সবাজারের সংবাদ কর্মী আবির হোসেন সান

যদিও জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি , তবে তাদের অতীতেও রাজনৈতিক ভুল রয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল—এটা সত্য। এখন জাতি তাদের কাছ থেকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক রাজনীতি প্রত্যাশা করে। তাদের যদি কোনো ভুল হয়, তবে তা জাতির জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হতে পারে, যা তারা বহন করতে পারবে না।

এনসিপির জন্ম জাতি স্বাগত জানিয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে তাদের সুস্থ রাজনৈতিক বিকাশ প্রত্যাশা করে। কিন্তু তাদের কোনো তাড়াহুড়ো ভবিষ্যতে ভুলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অনেক নেতাই জুলাই বিপ্লবের বীর—তাদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা প্রাপ্য। ইতিহাস একদিন এই বীরদের আত্মত্যাগ ও অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।

কিন্তু রাজনীতিতে তারা একেবারেই নবীন এবং সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। রাতারাতি কিছু হয় না—অপেক্ষা করতে হয়। ধৈর্য ও শিষ্টাচার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায়, তারা সিনিয়র রাজনীতিবিদদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়।

প্রশ্ন উঠছে—জামায়াত-এনসিপি এত আত্মবিশ্বাসী কেন? তারা কি কোনো মহলের দ্বারা প্রলুব্ধ? বিষয়টি আমাদের ভাবনার বিষয়। জাতি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাতn নয়, প্রতিযোগিতার সুস্থ সংস্কৃতি দেখতে চায়।

বিএনপি, দেশের একমাত্র প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে, ভবিষ্যতের রাজনীতিতে তাদের যথার্থ ভূমিকা পালন করবে—এটাই প্রত্যাশা। সমগ্র জাতি একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে এবং তারা বিএনপির নেতৃত্বের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখে, বিশেষ করে জাতীয় স্বার্থে তাদের আপসহীন অবস্থানের জন্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category