বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বয়:সন্ধি ক্ষণে মানবশরীরে যখন পরিবর্তন আসে তখন ছেলে মেয়ে উভয়ই একটি বিস্ময় মিশ্রিত ধাক্কা খায়! এতদিনের চেনা জগৎ থেকে সে এক অচেনা জগতে অনুপ্রবেশ করে! বালিকার দেহে নারীত্বের লক্ষণ সূচিত হলে তারা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়, অবগুণ্ঠিত হয় ! সলাজ কমনীয়তায় রমনীয় হয়ে ওঠে !
অপরদিকে, কিশোর যখন পুরুষ হয় তখন সে নিজের পৌরুষ জাহির করতে উদগ্রীব হয় ! মুই কি হনু রে -এই ভাবসাব তার মধ্যে প্রকট হয় ! পুরুষ তার জীবদ্দশায় দুইবার “বেডা”গিরি দেখাতে মরিয়া হয় ! এক,যখন সে কিশোরের খোলস থেকে যৌবনে উপনীত হয় – আর দুই,যৌবনের শেষ প্রান্তে- যখন বার্ধক্য কড়া নাড়তে থাকে ! এই দুই সময়ই তারা বয়স , সামাজিক অবস্থান, সম্পর্ক এইসব বাছবিচার করে না ! তারা পুরুষত্ব প্রমানে তৎপর হয় !
বয় :সন্ধিতে মায়ের তীক্ষ্ণ নজরদারিতে বেডাগিরি দেখানোর ইচ্ছে থাকলেও সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন অসম্ভব! কিন্তু, আজানের মা নেই !
আরও পড়ুনঃ বয়ান- জুম্মা মোবারক
গভর্নেস ইত:মধ্যেই ফারুক সাহেবের কাছে সসংকোচে জানিয়েছেন আজান বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভিসিআর এ ইংরাজি মুভি দেখে! রুমে খাবার দেয়ার সময় গৃহকর্মীরা চলমান মুভির সাউন্ড শুনে আন্দাজ করেছে যে, সেসব নিষিদ্ধ ছবি ! উত্তেজক শব্দের কোন ভাষা নেই ! সব ভাষাতেই যৌনতার বহিপ্রকাশ এক ! ফারুক সাহেব সেসব শুনেও গা করেন নি ! আজানের বয়সে তিনিও দলবল নিয়ে কলেজ পালিয়ে মধুমিতায় যেতেন এক টিকেটে দুই ইংরেজি ছবি দেখার জন্য !!
কিন্তু তিনি গা করতে বাধা হলেন! যেদিন ম্যানেজার কাকা অভিযোগ নিয়ে আসলেন ! অভিযোগ গুরুতর! নির্জন ঘরে আজান গভর্নেসকে নোংরাভাবে স্পর্শ করেছে !
তৎক্ষনাৎ ফারুক সাহেব আজানকে স্টাডি রুমে ডেকে পাঠালেন! রুমে শুধু তারা তিনজন! পিন পতন নিস্তব্ধতা! সেদিন কেউ যেন পিতা নয় – কেউ পুত্র নয় ! পরস্পরের দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে দুজন পুরুষ! এক পর্যায়ে ফারুক সাহেব ধৈর্য রাখতে পারলেন না ! সজোরে আজানের গালে ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিলেন!
তিনি ভেবেছিলেন আজান ছোটবেলার মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠবে! কিন্তু না – তার চোখে ক্ষোভ আর বিদ্রোহ!
সেই মুহূর্তে ফারুক আহসান সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন, অতি দ্রুত আজানকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে হবে ! বখে যাওয়া রুখে দিতে হবে ! আর কোন বিকল্প নেই !
আজান কানাডা চলে গেল! লাগেজর সাথে নিয়ে গেলো তার ক্ষোভ ! ক্ষোভ এমনই এক মূলধন যা সময় আর দূরত্বে কেবলই সুদে আসলে বাড়ে!