শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
Headline :
বাংলাদেশ জোট মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম ন্যাশনাল ইউনিটি কাউন্সিল(এনইউসি) এর মহাসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের বাণী: মানবতার মূর্ত প্রতীক: *অধ্যাপক ড. আলহাজ্ব মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী এক অনন্য সমন্বয়* -ড. এ আর জাফরী বাংলাদেশ সর্বজনীন জোটে মূল চিন্তাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ মাজহার বগুড়া গাবতলী স্টেশনের রেলওয়ে কর্মচারীকে মারপিট করে আহত করে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় – দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে বাংলাদেশ ময়মনসিংহে পলাতক আসামী গেপ্ততার করেছে র‍্যাব ১৪ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল

*ইলিয়াস (আ.): নীতি, নৈতিকতা ও* *মূল্যবোধের আলোকে হিকমাহ বিশ্লেষণ*

Reporter Name / ১০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫

ডাঃ এম জি মস্তফা মুসাঃ

 

*ইলিয়াস (আ.): নীতি, নৈতিকতা ও*
*মূল্যবোধের আলোকে হিকমাহ বিশ্লেষণ*

*১. ইলিয়াস (আ.)-এর পরিচিতি ও দাওয়াতি জীবন:* ইলিয়াস (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের প্রতি পাঠানো এক নবী। তিনি ইসরাঈলের উত্তরের জনগোষ্ঠীকে দাওয়াত দিয়েছিলেন, যারা বা’আল (بَعْلٌ) নামক একটি মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল। তিনি তাঁদেরকে এককভাবে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করেন এবং শিরকের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। আল-কুরআনের বর্ণনা:
*وَإِنَّ إِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ ﴿١٢٣﴾ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَلَا تَتَّقُونَ ﴿١٢٤﴾ أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخَالِقِينَ ﴿١٢٥﴾*
“নিশ্চয়ই ইলিয়াস ছিল রাসূলদের একজন, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা কি তাক্বওয়া অবলম্বন করবে না? তোমরা কি বা’আল দেবতাকে ডাকবে এবং পরিত্যাগ করবে শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা”? (সূরা আস-সাফফাত, ৩৭:১২৩–১২৫)।

*২. ইলিয়াস (আ.)-এর কাহিনী থেকে নীতিমূলক শিক্ষা:* (ক) নীতিগত শিক্ষা: তাওহীদের প্রচার ও শিরকের বিরুদ্ধাচরণ নবীদের প্রধান দায়িত্ব। মূর্তিপূজার মতো সমাজে প্রচলিত প্রথা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া একজন মুমিনের দায়িত্ব। (খ) নৈতিক শিক্ষা: সমাজে প্রচলিত অন্যায় ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মুখ খুলা একটি বড় নৈতিক সাহস। আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে গিয়ে মানুষ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়াও ঈমানদার ব্যক্তির জন্য এক পরীক্ষা। (গ) মূল্যবোধ: তাওহীদের প্রতি অটল থাকা। অন্যায় ও শিরকের বিরুদ্ধে সাহসিকতা। মানুষের হিদায়েতের জন্য অন্তর্দাহ ও মমতা।

আরও পড়ুনঃ *সালাতে মনোযোগ ও মনস্থির রাখার কৌশল:*

*৩. ইলিয়াস (আ.)-এর জীবন থেকে হিকমাহর শিক্ষা:* আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা মানুষকে গোমরাহ করে – কাওম বা’আল মূর্তি দেবতার উপর ভরসা করত, ফলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। নবীগণ যুগে যুগে শুধু ধার্মিকতা নয়, সামাজিক বিপ্লবেরও নেতা ছিলেন – ইলিয়াস (আ.) সেই ধারার একজন। যে কাজ সমাজে প্রচলিত, তবুও যদি তা ভুল হয়, একজন নবী বা দা’য়ী তা প্রকাশ্যে ভুল বলে ঘোষণার সাহস রাখেন।

*৪. আল-কুরআনে ইলিয়াস (আ.)-এর কাহিনী:* হিকমাহ ও নিদর্শনের আলোকে: কুরআন ইলিয়াস (আ.)-এর সংগ্রামী জীবনের মাত্র কিছু দিক তুলে ধরেছে, কিন্তু তা যথেষ্ট গভীর বার্তাবহ। এটি কেবল ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নয়, বরং সকল ধরনের শিরক, রীতিনীতি, কুসংস্কার, মানুষপূজা ও সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধেও এক জোরালো প্রশ্ন।

*৫. ইলিয়াস (আ.)-এর দায়িত্বের মধ্যে হিকমাহ:* তাঁর দায়িত্ব ছিল শিরকের মূলে আঘাত হানা, যা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় শোষণব্যবস্থার ভিত্তি ছিল। তিনি তা করেছেন সরাসরি প্রশ্ন করে, চিন্তার দরজা খুলে দিয়ে, “তোমরা কি বা’আল-এর উপাসনা করো অথচ আল্লাহকে ভুলে যাও?”

*৬. ইলিয়াস (আ.)-এর নির্দিষ্ট নিদর্শন ও তার হিকমাহ বিশ্লেষণ:* বা’আল ছিল একটি মূর্তি, যায় উপাসনা করা হত; ইলিয়াস (আ.)-এর সম্প্রদায় ভ্রান্তভাবে শায়তানের প্রভাবে পড়ে এই মূর্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর বিরুদ্ধে অবস্থান মানে কেবল ধর্মীয় নয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধেও লড়াই। ইলিয়াস (আ.) এই প্রভাবের সামনে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছেন, একজন সত্যনিষ্ঠ দায়ী কেবল প্রচারক নন, বরং ন্যায়বিচারের নেতা।

*৭. ক্বাওমের সাথে তাওহীদের দ্বন্দ্ব ও হিকমাহর বিশ্লেষণ:* ইলিয়াস (আ.)-এর ক্বাওম ছিল ধর্মীয়ভাবে বিপথগামী, সামাজিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ঈমান থেকে বিচ্যুত। তিনি তাঁদের ফিরিয়ে আনতে বা’আল-এর বানোয়াট তত্ব তুলে ধরেন এবং আল্লাহর একত্ববাদে যুক্তিনির্ভর আহ্বান জানান। হিকমাহ: সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে শিরক, অসত্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করা একজন নবীর দাওয়াতি কৌশলের অংশ।

*৮. উপসংহার:* ইলিয়াস (আ.) আমাদের শিক্ষা দেন যে, তাওহীদের প্রতি অবিচল থাকা, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো এবং সমাজে প্রচলিত মূর্তিপূজা, কুসংস্কার ও শিরকের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে আওয়াজ তোলা একজন মুসলিমের দায়িত্ব। তিনি ছিলেন শিরকবিরোধী আন্দোলনের আদর্শ নেতা, যার সাহস, তাওয়াক্কুল, ও দাওয়াতি পন্থা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত।

কুরআনে ইলিয়াস (আ.)-এর সম্মানিত স্থান: ‘সালামুন আ’লা ইলিয়াসিন’ – ইলিয়াসের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা আস-সাফফাত, ৩৭:১৩০)। এখানে *”إلْ يَاسِينَ”* বলা হয়েছে, যা তাফসিরবিদদের মতে, এটি “ইলিয়াস ও তাঁর অনুসারী”-দের সম্মানিতভাবে সম্বোধন। এটি ইলিয়াস (আ.)-এর দাওয়াতি প্রচেষ্টা ও তাঁর অনুসারীদের ঈমানের প্রতি এক মহান স্বীকৃতি।

*আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন*। (মূসা: ০১-০৭-২৫)।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category