মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিছা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত মূল ঘাতক প্রতিবেশী জুনেল মিয়া (৩৯)কে গ্রেপ্তার করেছে।
জুনেলের তথ্যমতে এবং পুলিশের তল্লাশিকালে হত্যাকাণ্ডের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা খুনের শিকার আনজুমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত সময়ে উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক তদন্ত টিম মাঠে কাজ করে। প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ও ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘাতক।
গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে নানা মিথ্যার আশ্রয় নেয় জুনেল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে জানায়, নাফিসা ১২ই জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে তার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে পিছু নেয় সে।
একপর্যায়ে জড়িয়ে ধরে জুনেল রাস্তা থেকে নির্জন জঙ্গলের ভেতর নাফিসাকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। নাফিসা চিৎকার করলে তাকে গলা চেপে ধরে হত্যা করে ঝোপে ফেলে রাখে। ১৪ই জুন বিকালে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে আনজুমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
জুনেল পুলিশকে জানায়, তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে স্কুল ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়া করতো আনজুম। সেই সুবাদে জুনেল আনজুমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে জুনেল।
তার স্ত্রী শ্বশুরালয়ে চলে গেলে সেই সুযোগে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। প্রেম ও ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্ধ জুনেল আনজুমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঘাতক জুনেল উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের জাহির মিয়ার ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। জুনেল ও আনজুমের বাড়ি পাশাপাশি। এ ঘটনায় থানায় নিহতের মা বাদী হয়ে ১৫ই জুন একটি হত্যা মামলা করেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ-এর ঈদ পূনর্মিলনী ও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, জুনেল খুবই খারাপ ও চরিত্রহীন লোক। এলাকায় তার সম্পর্কে স্থানীয় লোকের তথ্যমতে খোঁজ নিয়ে তাকে প্রথমে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। এর আগেও সে নারী ও স্কুলগামী মেয়েদের শ্লীলতাহানির ৬-৭টি ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েদের সে প্রায়শই উত্ত্যক্ত করতো।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশও হয়েছে। তার মোবাইল চেক করে পর্নো সাইটে ব্রাউজিংয়ের তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে আটকের দিন দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিংবা অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না সেটা পুলিশের অধিকতর তদন্তে বের হবে বলে পুলিশ সুপার জানান।