বিশেষ প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানার বর্তমান ও সাবেক ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিক ও তার পরিবারকে পরিকল্পিতভাবে হয়রানি, ঘুষ দাবি এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশ প্রধান বরাবরে দাখিল করা হয়েছে। ওসি আল হেলাল মাহমুদের পদোন্নতি সংক্রান্ত সময়রেখা:
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, এসআই নিরস্ত্র হিসেবে চাকরীতে যোগদান করেন এবং সেই সময়ে ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র ) হিসেবে পদোন্নতি পান।পরিদর্শক হিসেবে ৩ বছর পূর্ণ করার পর ওসি হিসেবে পদায়ন করার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর পরিপত্র থাকলেও মাত্র ১ বছর ৩ মাসেই আল হেলাল মাহমুদ কে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে পদায়ন করে পুলিশ সদরদপ্তরের পরিপত্রে উল্লেখিত নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটানো হয়েছে।
ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি আল হেলাল মাহমুদকে সরকারি নাম্বারে যোগাযোগ করতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান প্রতিদিনের কাগজকে জানিয়েছেন, লোকবল সংকটে বিশেষ অনুমতি নিয়ে এই পদায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি ওপরে জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী মোছাঃ সাফিয়া জানান, তার বড়ভাই সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, জাতীয় দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রতিনিধি। সাবেক ও বর্তমান ওসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ঘুষগ্রহণ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিশোধমূলকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন সাবেক ওসি মনিরুল ইসলাম, বর্তমান ওসি মোঃ আল হেলাল মাহমুদ এবং এসআই জাহেদুল ইসলাম।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪: সংবাদ প্রকাশের পর সাবেক ওসি মনিরুল ইসলামের নির্দেশে ডিবি পুলিশ সাংবাদিক আনোয়ার’কে তুলে নিয়ে যায় এবং জি.আর-২০৫/২৪ মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ জানুয়ারি ২০২৫: জামিনে থাকা অবস্থায় সাজানো ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ৬ জানুয়ারি ২০২৫: আরও একটি মামলায় তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সাবেক ওসি মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকের বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন, যা বাধ্য হয়ে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর পরও বর্তমান ওসি আল হেলাল মাহমুদ ও এসআই জাহেদুল ইসলাম ৫টি ভুয়া মামলায় সাংবাদিক’কে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন এবং অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন।
পরিবারের সদস্য’রা নিয়মিত ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা দাবি করছেন, ওসি আল হেলাল মাহমুদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলে দীর্ঘ সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তিনি বিএনপি- জামাত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। এছাড়া তার পদোন্নতি, বদলি ও কর্মজীবন সংক্রান্ত নিয়মও ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পক্ষ দুদকের কাছে দাবি করেছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাগত ব্যবস্থা গ্রহণ। স্বাধীন ও গোপন তদন্ত করে ঘুষ দাবির সত্যতা যাচাই। গায়েবি ও সাজানো মামলা গুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার। সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভিযোগটি যথাযথ ভাবে অনুসন্ধান করা হলে কুড়িগ্রাম পুলিশ প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন ও জবাবদিহি তৈরি হতে পারে। এটি শুধুমাত্র এক পরিবারের ন্যায়বিচারের লড়াই নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার বড় উদাহরণ হিসাবেও দেখা যেতে পারে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক ডিআইজি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বক্তব্যে বলেন, “পুলিশের নতুন নীতিমালায় নিয়ম ভেঙে ওসি পদায়নের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, পুলিশ সদর দপ্তর এখন সৎ, নিরপেক্ষ এবং যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছে। এই নীতিমালার অধীনে, ৫৪ বছরের বেশি বয়সী কর্মকর্তা, যাদের চাকরির ইতিহাসে তিনটি গুরুদণ্ড রয়েছে, বা যারা নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেননি, তারা ওসি পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না। এই নিয়মগুলো মাঠ প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে একজন নির্দিষ্ট বোর্ডের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করা হবে।